সুন্দরের প্রতীক থেকে বেরিয়ে আসা যায়?
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৬:২৮
রাশিয়ার মস্কো শহরে ইয়েফগেনিয়া জাখার বলে এক ট্যাটু শিল্পী নাকি চ্যারিটি করছেন। ব্যাপার কি, না, তিনি রাশিয়ার গার্হস্থ্য হিংসায় অত্যাচারিত মহিলাদের ক্ষতস্থান ঢাকতে বিনা পারিশ্রমিকে ট্যাটু এঁকে দিচ্ছেন। কখনো ফুল, কখনো প্রজাপতির ছবিতে সেসব ক্ষতস্থান ঢেকে যাচ্ছে। বিনামূল্যে তিনি সেইসব মহিলাদের লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করছেন শৈল্পিক হাতে, ভিক্টিমদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ব্যবসায়িক লাভ লোকসানের কথা না ভেবে। কিন্তু যা করছেন, সেটা আদৌ প্রশংসনীয় কিনা সে নিয়ে একটু সংশয় তৈরী হয় না কি? খুব স্পষ্ট কারণটা ক্লিশে শোনাতে পারে, কিছু করার নেই। যতই আটপৌরে হোক, সাধারণ হোক, প্রশ্ন তো থেকেই যাবে, উত্তর জানা থাক, বা না থাক।
ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, তাও আবার রাশিয়ায়, তার ওপর সারা শরীরে বিভিন্ন মাপের ক্ষতস্থান। পরিণাম নাকি সেই সব আক্রান্তেরই লজ্জা এবং সৌন্দর্য হানি। এইবারে আমার দুটো পাতি প্রশ্ন আছে, যা এর আগে লক্ষ কোটি বার তোলা হয়েছে। যে প্রশ্ন করে কোন লাভ নেই জেনেও করা আর কি।
পাতি প্রশ্ন ১। আক্রান্তের লজ্জা কেন হবে?
পাতি প্রশ্ন ২। কেন তাকে ক্ষতস্থান ঢাকতে হবে?
ব্যাপার হল, ইয়েফগেনিয়া জাখার কোনভাবে সেইসব মহিলাদের মনের কোথাও একটু আরাম দিতে পেরেছেন। কিভাবে? না, সেইসব মহিলারা এতদিন নাকি নিজেদের ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে লজ্জায় ছিলেন, ট্যাটুর কল্যানে দিব্যি ঢেকে যাচ্ছে এখন। কিন্তু এই মানসিক আরাম সাময়িক নয় কি? এবং শুধু ক্ষত ঢাকা নয়, মূল সমস্যার ওপর প্রলেপ পরানো নয় কি?
আরো অভিনব ব্যাপার, রাশিয়ায়, যেখানে পারিবারিক সহিংসতা বা ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স এর হার সাঙ্ঘাতিক পরিমাণে বেশি, গোণা গুনতির মধ্যেই ৩৬,০০০ মহিলা অত্যাচারিত হন দৈনিক। ১২,০০০ মহিলা বাৎসরিক মারা যান অত্যাচারিত হয়ে, যেখানে আইন অত্যন্ত কঠোর হওয়া উচিত, সেখানে গত ২৫শে জানুয়ারি নাকি সংসদে একখানা বিল পাশ হয়ে গেছে, খোদ প্রেসিডেন্টের হাতে। এই বিলে অপরাধীর অপরাধকে ছাড় দেওয়া হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যদি না ভিক্টিমের আঘাত গুরুতর হয়, কিংবা ধর্ষণ করা হয়। মানে ওই প্রথমবারের মত টুকটাক হাত মুচড়ে দেওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে সামান্য কাটাছেড়া হলে সেসব মাফ। আর ঢেকে দেওয়ার জন্যে তো রয়েছেই কোমল কোমল সুন্দরের প্রতীক ফুল, বেলপাতা, প্রজাপতির শিল্প।
আমাদের মত দেশের হাল আর কি হবে যখন রাশিয়ার মত উন্নত এবং শিক্ষিত দেশের মহিলাদের কাছে নিজেদের দৈহিক সৌন্দর্যের গুরুত্ব মানবিক অধিকার এবং আত্মসম্মানের থেকেও বেশি!
লেখক: অ্যাডভারটাইজিং প্রোফেশোনাল ও লেখক