নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকার উন্নয়ন
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২০, ১৪:৫৯
নারীর ক্ষমতায়ন বলতে বুঝি ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় প্রেক্ষাপটে স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ, পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়নের ক্ষমতার স্বীকৃতি। এবং মানবাধিকার হলো সেই অধিকার, যার ভেতর মানুষের মৌলিক অধিকার সহ নিরাপত্তা, মতপ্রকাশ, সুশাসন, ন্যায় বিচার, সম্মান তথা মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সার্বিক অধিকার নিহিত। এটি মানুষের জন্মগত অবিচ্ছেদ্য অধিকার, যা ভোগ ও চর্চার ক্ষেত্রে সবার জন্য সব জায়গায় সমান ভাবে প্রযোজ্য। মানবাধিকার চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন এবং প্রশান্তি বিনষ্ট করবে না এবং যে কোন দেশের আইন সকলের জন্য সমানভাবে মানবাধিকার কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিধি নিষেধ এর কারনে নারী ক্ষমতায়ন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মত নয়, বাংলাদেশের নারীগণ এখনো ক্ষমতায়ন কিংবা মানবাধিকার ভোগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বমানে পৌঁছাতে পারেনি। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়ে বর্তমানে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা লক্ষণীয়। মোট জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল হলেও অর্থনৈতিক মুক্তি নারী কে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছে আমাদের দেশে কিন্তু তাদের মানবাধিকারের উন্নয়ন বিশেষ কিছু ঘটেনি। সেইদিক থেকে বলতে গেলে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেনি আজো। আমাদের দেশে এখনো নারী কে যৌন পণ্যের মত জ্ঞ্যাণ ও ব্যাবহার করা হয়। বাল্য বিবাহ, যৌতুক, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, বহুমুখী পাশবিক শারীরিক মানসিক নির্যাতন, ইভটিজিং, সাইবার ক্রাইম ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী ই ভিকটিম। সারা বিশ্বে আজ আলাদা করে নারী দিবস পালিন করতে হয় কিন্তু নর দিবস এর প্রয়োজনীয়তা কেউ বোধ করেনি কারণ বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই কালাদিকাল থেকে নারী ঘরে-বাহিরে বঞ্চনা এবং নিপীড়ন এর শিকার হতে থেকেছে পুরুষ এবং নারী উভয়ের মাধ্যমে।
সভ্যতার সাথে সাথে বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোতে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত হয়েছে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে কিন্তু বাংলাদেশে নারী শিক্ষিত হয়েছে, কর্মক্ষেত্রেও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে কিন্তু তারা মানুষ হিসেবে মর্যাদা অর্জন করতে পারেনি এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। যে নারী টি চাকরি কিংবা ব্যাবসা করছেন, তাকে তার সংসার টি ও চালাতে হয় একি দক্ষতায় যেখানে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই অন্য কারো সহযোগীতা পাওয়া সম্ভব হয়না। কর্মক্ষেত্রেও নারী কে নানাবিধ মানসিক নির্যাতন এবং চ্যালেঞ্জের সম্মুক্ষীণ হতে হয়। প্রতিমুহূর্ত তাকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে করে এগুতে হয়। প্রাকৃতিক ভাবে নারী দূর্বল - এই অজুহাতে নারী কে অবদমিত রাখা হয় অথচ জ্ঞ্যাণে, কর্মে - কোথাও ই নারী পুরুষের থেকে পিছিয়ে নেই। নারী পুতুল খেলা, রান্না বাটি খেলা ছেড়ে যখন হাডুডু, ফুটবল খেলে তখন তার হাড়- মাংস ও মজবুত হয় যা আমরা জেনে বুঝেও উপেক্ষা করে যাই। আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবেই শিশুর হাতে ঘরকন্না সম্পর্কিত খেলনা সামগ্রী তুলে দেই যেন কন্যাটি মানুষ হিসেবে নয় বরং নারী হয়েই বেড়ে উঠে! ঘর থেকে আমরা শিশুদের ভেতর বৈষম্য করা শুরু করি বুঝে কিংবা না বুঝে যার অবসান ঘটানো টা জরুরি নারী কে মানুষ জ্ঞ্যাণ করার জন্য।
নারীর মনন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন তাকে মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে যার জন্য এক দীর্ঘ যুদ্ধপরিক্রমা অতিক্রম করে তাকে নিজ অধিকার আদায় করে নিতে হয়। এই অধিকার আদায় এর সংগ্রামে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাক্তি নিঃসংগ থাকে। বিভিন্ন প্রান্তের নিঃসংগ মানুষ গুলো নিজ নিজ সংগ্রাম শেষে কিছুটা অবস্থান তো তৈরী করতে পারে কিন্তু নারী ক্ষমতায়নের বিকাশ ঘটাতে কিংবা মানবাধিকার নিশ্চিত করতে পারেনা।
পরিশেষে বলতে চাই, মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েই যে মানবাধিকার প্রাপ্ত হয় নারী সেই অধিকার কে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে আদায় করে নেয়ার মত দুঃখজনক এবং লজ্জার ঘটনা খুব কম আছে এই জগতে। এই লজ্জার দায় নারী পুরুষ - সকল মানুষের। নারী প্রথমে একজন মানুষ এবং পরে প্রাকৃতিক মেটাবলিজমে সে নারী- এই কথাটি কোনভাবেই ভুলে গেলে চলবেনা।আমাদের দেশে নারী পুরুষ - উভয়কে মানবাধিকার সচেতন করা প্রয়োজন, প্রয়োজন সুস্থ চিন্তার বিকাশ ঘটানো। বাংলাদেশে যেভাবে নারীরা আজ ঘরে-বাহিরে সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে তাতে করে সেই আশার আলো দেখতে পাই যে নারী গণ একদিন মানুষ এর মর্যাদা অর্জন করে নিবেন নিজেদের যোগ্যতা বলে। সেদিন আলাদা করে নারীর ক্ষমতায়নের সাথে নারীর মানবাধিকার উন্নয়নের প্রশ্ন আর উঠে আসবেনা বরং প্রতিটা মানুষ সেদিন সমভাবে মানবাধিকার ভোগ এবং চর্চা করবে। সেই আলো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কেও আলোকিত করবে এবং প্রতিটা মানুষের জন্মগত অবিচ্ছেদ্য অধিকার কে নিশ্চিত করে রক্ষনাবেক্ষন করতে থাকবে যুগে যুগে।