জাগো বাহে, জাগো বোনটি...
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৬, ০১:৪৫
খুন, ধর্ষণ, হত্যা, গুম এর খবর খবরের পাতার নিত্য নৈমিত্যিক বিষয়। সেখানে ঘরবাড়ি লুটপাট, জমি দখল এসব বিষয় তো খুবই নগণ্য। মোটকথা সবলের দ্বারা দুর্বলের উপর নির্যাতন এ কারণে বা সে কারণে কিংবা বিনা কারণেই হোক আজকাল আমাদের গা সওয়া বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ তো হওয়ারই চিরাচরিত নিয়মে। এসব নিয়ে চিন্তা করে নিজেদের শান্তি, সময়, সুখ নষ্ট করার মত মন আর ধৈর্য আমাদের কি আছে এখন! নিজেদের কত কাজ! আর সবচেয়ে বড় কথা নিজেরা তো ভালোই আছি। আর এমন করেই ভালো থাকতে চাই। আমরা শান্তিকামী দুপেয়ে বলে কথা।
কিন্তু নিজেদেরকে যদি মানুষ মনে করে থাকি তাহলে আমাদের মান আর হুঁশটাকে একটু জাগিয়ে আমরা যদি একটু ভেবে দেখি যে, যা হচ্ছে তা কি ঠিক হচ্ছে? আসলেই কি আমরা সর্বোপরি ভালো আছি? এমন কি চলতে দেয়া উচিত? তবে আমাদের আদরের সন্তানদের জন্য আমরা কি রেখে যাব?
আমি জানি এর উত্তর আরো হতাশাব্যঞ্জক।
যা হচ্ছে তা মোটেও ঠিক না। কি হচ্ছে এসব আমাদের মাতৃভুমির বুকে? আমাদের স্বাধীন দেশে আমাদের বাবা দাদাদের চৌদ্দ পুরুষের ভিটা ভাই ভাইয়ের রক্তে লাল করে দিচ্ছে। একজন আরেক জনের সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে। আজ এখানে আদিবাসীদের উপর হামলা নির্যাতন লুটপাট তো কাল সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়, পরশু বৌদ্ধ। বারবার শিকার হচ্ছে নিরীহ অসহায় মানুষগুলো।
মেনে নিলাম আমরা বাংলার নাগরিকরা বরাবরই সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান বজায় রেখে চলছি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। তাহলে কেন এত হানাহানি রক্তপাত? কেন তৃতীয় শক্তি নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে আমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিবে সহজেই? হোক সে কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক দল অথবা কট্টর পন্হী জঙ্গী গোষ্ঠী। না আমরা মনটাকে ঘৃণামুক্ত করতে পারিনি। তাইতো সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি আমার পাশের বাড়ির লোক এর উপর কিংবা আমার বাল্যকালের বন্ধুটির উপর।
এমন হতে দেওয়া যায় না। এ কোন ভাবেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শুভকর না। যে শিশুটি তার অগ্রজকে দেখবেবে প্রতিবেশী বন্ধুকে আঘাত করতে কিংবা অন্যর বিপদে মুচকি হেসে তামাশা দেখতে সে শিশুটি তার ঘরে আপন ভাইটির বুকের রক্ত নিয়ে খেলতে দ্বিধা করবে না। এ সম্পূর্ণ অসহ্য।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভাই ভাইয়ের দ্বন্দ্বকে হাতিয়ার করে তৃতীয় পক্ষ অনেক খেলেছে। এখনই উপযুক্ত সময় এসব অন্যায়কে প্রতিহত করার। নিজের ঘর বাড়ি দেশকে আর বিকিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। জাগতে হবে আমাদের। এক হতে হবে। স্লোগান মুখর ঝাঁঝালো মিছিলে ভাঙাতে হবে বিকল রাষ্ট্রযন্ত্রের ঘুম। আর এ ব্যাপারে মায়েদের পালন করতে হবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা। শক্ত হাতে হাল ধরে হতে হবে সবচেয়ে বেশি সতর্ক আর দূরদর্শী। সন্তানরা যেন সৎ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকে পৃথিবীর বুকে হাজার বছর তার রাস্তা আমরা মায়েরাই পারি তৈরি করতে। দিতে হবে তাদের সঠিক ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক শিক্ষা। যেন আমাদের সন্তানরা আর কারো রক্তে হাত না রাঙায়।
ঐকতান উঠুক,
“বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ বাংলার খৃস্টান বাংলার মুসলমান
আমরা সবাই বাঙালি, আমরা সবাই বাঙালি”।