'সাঁওতাল উচ্ছেদ গণহত্যার শামিল'

প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:১৯

জাগরণীয়া ডেস্ক

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের অধিগ্রহণ করা জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের ঘটনা ‘গণহত্যার শামিল’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও নাগরিক সমাজের ব্যানারে গাইবান্ধার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সাঁওতাল হত্যাকাণ্ড ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

সুলতানা কামাল বলেন, "গাইবান্ধার বাগদা ফার্ম এলাকায় যা ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের নেই। এ রকম একটির পর একটি নিষ্ঠুর, অমানুষিক, অমানবিক ঘটনা দেখে আমাদের শিউরে ওঠা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না"।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে সুলতানা কামাল বলেন, "একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তারা হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগসহ সব রকমের উপায় ব্যবহার করেছে, যা গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়। আর সরকারই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, এ দেশে আদিবাসী বলে কিছু নেই। এখন তারা নিজেদের কথার সত্যতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যেভাবেই হোক তারা দেশটাকে আদিবাসীহীন করতে চাচ্ছে"।

তিনি সাঁওতালদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, "গাইবান্ধায় যা ঘটেছে তা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যকাণ্ড। ওই এলাকার সংসদ সদস্যের হাতে রক্তের দাগ আছে, একাধিক হত্যাকাণ্ডের সাথে সে জড়িত, তার বিচার হয়নি"।

সংবাদ সম্মেলনে লেখক, গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, "যদি কোথাও কোনো আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে, তবে সেটা মোকাবেলার জন্য তো পুলিশ রয়েছে। গত কয়েক বছরে যে কোনো হামলার একটি নতুন আলামত দেখা যাচ্ছে, যেটা পাকিস্তান আমলে ঘটেছিল। আমরা নাসিরনগরে দেখেছি এবং গাইবান্ধায় দেখলাম। পুলিশ তাদের সঙ্গে অক্সিলারি (সাহায্যকারী) বাহিনী হিসেবে থাকছে, যেভাবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে আলবদর ও রাজাকার বাহিনী থাকতো"।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। তিনি আদিবাসীদের হত্যার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিরাপত্তার দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এর পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ সরেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা প্রমুখ।

আগামী রবিবার বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমির দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারিদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন সাঁওতালের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত