কেবল ছিলো না মানবিকতা ও সহমর্মিতা!
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৬, ২২:৫০
গতকাল নাসিরনগর থেকে ফিরেছি মধ্যরাতে। ফেরার পথে খবর পেলাম নাসিরনগর ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন দেবের বাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে। ক'দিন ধরেই নাসিরনগর জ্বলছে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে !!
গত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গেছে কেউ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পক্ষে কেউবা জেলা আওয়ামী লীগের নয়া আমীর রবিউল আলম মুক্তাদীর চৌধুরীর পক্ষে।
ঘায়েলের রাজনীতিতে কেউ কাউকে একচুলও ছাড়ছে না। রাজায় - রাজায় যুদ্ধ করে উলুখাগড়া'র প্রাণ যায়। উলুখাগড়া সহজলভ্য নয়, তাই প্রাণ যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলাম্বী ভাই বোনদের।
হতদরিদ্র কৈবর্ত সম্প্রদায়'র লোকজন, সূত্রধর পাড়ার নিরীহ লোকজন, দাশ পাড়ার মানুষজন, নমশুদ্র পাড়ার হতদ্রিদরা এ আগুনে পুড়ে ছাই! তাদের বসত বাড়ী গেছে, দেবালয় গেছে, সঞ্চয় গেছে, কিছু অস্থাবর সম্পদও গেছে, গেছে কিছু মোবাইল ও টাকা। খামারিদের মুরগী, মেয়ের বিয়ের জন্য তুলে রাখা টাকা-পণ দিতে না পারার দায়ে যে বিয়ে ভাঙলো বলে। আর যেটি গেছে, জানিনা সেটি ফিরিয়ে আনা সম্ভব কীনা ?
সেটি আস্থা...
রাজনীতির কূটচাল বিষাক্ত করে ফেলেছে নাসিরনগরকে। ক্ষমতার লিপ্সা এক ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, যেভাবে বিস্তারলাভ করেছে তা বিস্ময়কর! ক্ষমতাসীনরা অভিনন্দন পেতে পারেন, ক্ষমতা চর্চা এভাবে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দেবার জন্য।
সূত্রধর বাড়ীর মেয়ে দুটো বিএসসি পরীক্ষা নিয়েই জটিলতায় পড়েছে, তাদের তালা মারা আলমিরার ড্রয়ার খুলতে না পেরে, ড্রয়ার'ই নিয়ে চলে গেছে লুটেরারা। যেটিতে তাদের পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছিল, ছিল মাধ্যমিক ও ইন্টারমিডিয়েট সার্টিফিকেট। সবই লুটেরাদের পকেটে। এগুলো লুটেরাদের কি কাজে লাগবে?
১৩-১৪ থেকে ১৮-২৫ বছরের ধর্মান্ধরা হামলে পড়েছে হিন্দু পাড়াগুলোতে। এক দরিদ্র মুসলমান আর এক দরিদ্র হিন্দুর সহায়-সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে, টাকার অংকে যা খুবই তুচ্ছ। ধর্ম রক্ষার আবেগ তুলে যা ব্যবহার করা গেছে মাত্র।
রাজনীতির এই ভানুমতি খেলায় একজন কৈবর্ত রসরাজকে ব্যবহার করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ। হরিণবেড় গ্রামের কৈবর্তরা ইউপি নির্বাচনে মন্ত্রী ছায়েদুল হক ফারুক গং'এর প্রার্থীর পক্ষ না নেয়ার খেসারত দিতে হলো দরিদ্র মৎসজীবী রসরাজ দাসকে সাথে তাঁর নিজ ধর্মের সম্প্রদায়'এর মানুষজনকে। সাথে যোগ হয়েছে বিলের মাছ ধরা সমিতির দখল নেয়া। যা সম্পদ আহরণের একমাত্র উপায় তিতাশ ও মেঘনা'র জল বিধৌত এ অঞ্চলে।
ভুক্তভোগীদের সা্থে কথা বলে যা জেনেছি তা হলো -
হামলায় থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরিধান করা ছেলেরা ছিলো ২০০-৩০০ এর মতো, এরা কারা?
হামলার আগে বোরখা পরে এলাকায় রেখি করে গেছে শ-দুয়েক নারী এরা কারা?
স্কুলের মাঠ থেকে হিন্দু পাড়াগুলো ৫০ গজ দূরেও নয়, সমাবেশ শেষেই হামলা।
সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব, প্রসাশন ও পুলিশ সবই হাজির।
সমাবেশ ডেকেছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং খাঁটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত।
সহযোগিতায় ক্ষমতা প্রত্যাশী দল যেমন ছিল তেমনি ছিলো ক্ষমতায় থাকা দলটিও।
একজন মুফতী আল হোসাইনি ও রিয়াজুল করিম সাথে রাজনীতির কালো ঘোড়া ফারুক আহমেদ, সুরুজ আলী, নাসিরনগর উপজেলা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম এবং উপজেলা কওমি ওলামা পরিষদের সহসভাপতি মোখলেছুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান, স্থানীয় সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের ভাগনে হিসেবে পরিচিত আবদুর রহিম মাস্টার, সবাই হাজির প্রত্যক্ষভাবে কেউবা পরোক্ষভাবে।
রাজনীতির ঘোলা জলে রাজনৈতিক মাছ শিকারের আশায় হাজির ছিলো সব পক্ষই। কেবল হাজির ছিলো না মানবিকতা ও সহমর্মিতা! রাজনীতির নষ্ট কালো ঘোড়টি দৌড়ুচ্ছে সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে। এ ঘোড়াটি শিকারের রাজনৈতিক শিকারী কোথায় ??
আকরামুল হক এর ফেসবুক থেকে