রবিঠাকুরের সাথে আমার পরিচয়
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০১৬, ২৩:০০
ছোটবেলা ভাবতেই মনে পড়ে বুবুর (আমার দাদী) ঘরের লাগোয়া বড় জানালা। সেখানে বেশ বড় একটি বেঞ্চি যেটাতে বসে তিনি পান খেতেন। আর নানারকম বই পড়তেন। তার সাথে আমার অনেক বন্ধুত্ব ছিল, যেই কারণে আমি তার পাশে বসে অনেক গল্প শুনতাম। তিনি হাতে তাল রেখে গান গাইতেন, কবিতা পড়তেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত সেগুলো শুনতাম। কি বুঝতাম তা জানতাম না তখন। একটু বড় যখন আমি, বছর পাঁচেক বয়স আমার, তখন তিনি আমায় প্রথম শেখালেন, 'ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে' আর আমায় বললেন এটা কার গান জানিস? আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি, তিনি বললেন রবিঠাকুর। আরও বললেন আমাদের জাতীয় সংগীত, ওটাও তাঁর। সেটাই রবিঠাকুরের সাথে আমার প্রথম পরিচয়। তারপর একের পর এক, রবিঠাকুরের অনেক গল্প, কবিতার সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দেন আমার বুবু।
সেই থেকেই রবিঠাকুরের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা দিন দিন বেড়েছে। আমার হৃদয়ে তাকে গেঁথে নিয়েছি পাকাপাকি ভাবে। সত্যিকার অর্থে তাকে নিয়ে আমরা চর্চা করি বটে কিন্তু তাতে তাঁর ব্যাপকতা কমে না।
তাঁর ভাষায় বলি, "দিয়েছি যত, নিয়েছি তার বেশি"
২২ শ্রাবণ, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। তিনি মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায় রয়েছেন। প্রেম, পূজা, বর্ষা, বিচিত্র, স্বদেশ সব পর্যায়ে তিনি রেখে গেছেন গান, কবিতা, সাহিত্য। বিভিন্ন সময়ে, বয়সে, আমরা তাকে নতুন করে বুঝতে পারি। যখন প্রতি মুহুর্ত মৃত্যু তাকে ভাবিয়েছে, তখন তিনি একটু একটু করে বুঝতে পারলেন মৃত্যু জীবনের শেষ নয়, বরং পূর্ণতা। তাই তিনি বলতে পেরেছেন-
''নাচে জন্ম, নাচে মৃত্যু পাছে পাছে''
''যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে''
তাই হয়তো তাঁর জীবনের চিন্তা চেতনা আজও মানুষকে প্রতি মুহুর্তে ভাবায়, চিন্তা করতে শেখায়, ভালবাসতে শেখায়, হয়ত কাঁদতেও শেখায়...
শ্রাবণ মাস তাঁর প্রিয় মাস , তাই হয়ত এই বর্ষা ঋতুতেই তিনি চলে গেছেন এই পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু রয়ে গেছেন তাঁর শত শত ভক্ত, অনুরাগীর হৃদয়ে...যারা তাকে হৃদয়ে ধারণ করেন।
শেষে এইটুকুই বলবো, তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে কয়েকবার জন্মাতে হবে। একজীবনে তাকে চেনা অপরিপূর্ণ থেকে যাবে।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী