তারকাদের আমরা ভালোবাসিনা, ভালোবাসি প্রতিভা
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৬, ২২:০১
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একবার দোয়াতের কালির বিজ্ঞাপন লিখতে দেওয়া হল। তিনি লিখলেন- এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো! এই অসাধারণ বিজ্ঞাপন লেখা মানুষটির কারণেই তার নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেছিলেন সেটি রবিঠাকুর নিজেও কখনো অস্বীকার করেননি। কিন্তু বাবার সম্মানের কথা ভেবে তাঁকে বিয়ে করতে হয়েছিল অচেনা অজানা মৃণালিনীকে। কাদম্বরী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করলেও ঠাকুরবাড়ির প্রভাব প্রতিপত্তির জোরে ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছিল- এই মৃত্যু স্বাভাবিক! পুরুষ বলে কলঙ্ক সেভাবে তাঁকে জড়ায়নি।
বাদ যাননি আইনস্টাইনও। পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীটির সাথে স্ত্রী মিলেভা মেরিকের সম্পর্ক খুব সুখের ছিলোনা। ছাত্রজীবনে মিলেভাকে দারুণ সব প্রেমপত্র লেখা সেই আইনস্টাইনই সম্পর্কের টানাপোড়েনে সম্পর্কে জড়িয়েছেন একাধিক ছাত্রীর সাথে, দাঁ-কুমড়ো সম্পর্ক নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন দিনের পর দিন।
রবিঠাকুরের অসাধারণ লেখনী, আইনস্টাইনের দুনিয়া বদলে দেওয়া থিওরি অফ রিলেটিভিটি যেমন আমরা ফেলতে পারবোনা, তেমনি সবখানে তাঁদের পূজাও করতে পারবো না। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ আর সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ যেমন আলাদা, তেমনই বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বা ব্যক্তি আইনস্টাইনও আলাদা। কারো প্রতিভাকে সম্মান করা বা ভালোবাসাকে যখন ব্যক্তিত্ব পূজার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখনই সেটা খারাপ।
তারকাদের আমরা ভালোবাসি, সেটি ওই প্রতিভার জন্যই। মুস্তাফিজ যদি খুব খারাপ বল করতে শুরু করে তখন সে আর আপনার প্রিয় থাকবে না। তেমনই হুমায়ূন আহমেদ যখন একত্রিশ বছরের সংসারজীবন শেষ করে আরও একটি বিয়ে, তাও আবার মেয়ের বান্ধবীকে করে ফেলেন তখন ব্যক্তি হুমায়ূন অবশ্যই ভৎর্সনার যোগ্য। কিন্তু শুধু পুরুষ হওয়ার জোরে এই সমাজে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি কমেনি একটুও!
লেখক হুমায়ূন অবশ্যই প্রিয়, সেই ‘তাঁর’ প্রতি মুগ্ধ আমি। তারকাদের আমরা কেউই ভালোবাসি না, ভালোবাসি তাঁর প্রতিভা। স্বীকার করতেও ভয় পাই- আমি তোমাকে ভালোবাসার আগে, তোমার প্রতিভাকে ভালোবাসি!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি'র ফেসবুক থেকে