এসো নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করি, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ি!
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০১৬, ২১:০৭
সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এতে বাংলাদেশ বিদ্যুতে ভেসে গেলেও সুন্দরবন পরিবেশ দূষণে ভেসে যাবে এটা নিয়ে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের আইনে সব দারুণ দারুণ অযৌক্তিক বিষয় থাকলেও আমাদের মন্ত্রীরা সেগুলি দেখতে পান না, তারা নিজেদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো আইন সংশোধন করতে আগ্রহী নন। যেগুলোর সুযোগ নেয় বিদেশী রাষ্ট্রগুলো। বাংলাদেশের আইনে সুন্দরভাবে বলা আছে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাতে হলে বনভূমি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বানাতে হবে। কাজেই বগল বাজাতে রামপাল ১৪ কিলোমিটার দূরে বলে খুব সুন্দর করে এদেশের সরকার একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এসেছে। অথচ যেদেশের সাথে এই চুক্তিটি তাদের আইনে কি আছে? ভারতের আইনে খুব সুন্দরভাবে বলা আছে- বনভূমির ২৫ কিলোমিটারের মাঝে এরকম একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা যাবে না। কাজেই আশেপাশে একটি গাধা রাষ্ট্র দরকার, যাদের আইনে এরকম একটি ফাঁক আছে। তাই তারা এরকম একটি ধ্বংস প্রোজেক্ট বাংলাদেশে করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যেটির সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়ে গেছে!
অনুপম দেবাশিষ রায় একটা চমৎকার ভিডিও তৈরি করেছেন যেখানে খুব সুন্দর ভাবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে সুন্দরবন কীভাবে ধ্বংস হবে তা বলা আছে। অনুপমের বানানো প্রতিবেদনে খুব অদ্ভুত একটা রিপোর্ট তুলে ধরা আছে। সেটা হচ্ছে- ভারতের এবিপি আনন্দ চ্যানেল ২০১২ সালের একটা প্রতিবেদনে দেখাচ্ছে নয়ারচর পাওয়ার প্রোজেক্ট বলে একটা পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরির প্রোজেক্ট সেবছর ভারতে গৃহীত হয়নি শুধুমাত্র পরিবেশের ওপর এটির প্রভাব পড়বে বলে। সেটি করার কথা ছিল নয়াচরে ৭০০ একর জমিতে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আকারে। সেটি ভারতে অনুমোদন পায়নি। কেননা সেখান থেকে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কায় ভারতের পরিবেশ অধিদপ্তর সেটির অনুমোদন দেয়নি। তখন থেকেই তারা জমির সন্ধানে ছিল। সম্ভবত ঠিক এই প্রোজেক্টটিই ২০১৬ সালে এসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়ে গেছে! একারণেই ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এক্সিম ব্যাংক আমাদের এত্তগুলি টাকা লোন দিয়ে এরকম একটি কিউট প্রোজেক্ট তৈরিতে সাহায্য করছে!
সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে কি ঘটবে তা ইতোমধ্যেই অনেকের জানা হয়ে গেছে। বছরে সাড়ে ৯ লক্ষ টন ছাই উৎপন্ন হবে, ফ্লাই অ্যাশ হিসেবে বাতাসে ছড়াবে, যে নদীতে কয়লার ট্যাংকার চলাচল করবে সেটা দূষিত হবে, এসিড রেইন হবে...এগুলি সব জানা কথা। তারপরও সরকারের নির্লিপ্ততা চোখে পড়ার মতন! কারণ পরিবেশ ইস্যু এদেশে তেমন পাত্তা পায় না।
সুন্দরবন না থাকলে সুন্দরবনের বিখ্যাত বাঘমামারা থাকবে না- এটা বললে বেশীরভাগ লোকজন নাক কুঁচকে ফেলে। ধুর মিয়া! যে দেশে মানুষের থাকাই সমস্যা, সেইদেশে বাঘ থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি? আমি তাই ঠিক করেছিলাম সুন্দরবন নিয়ে কিচ্ছু বলবো না। কিন্তু গত কয়েকদিন আগের রাত্রে ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন দেখে কিছু কথা বলা জরুরী মনে করছি।
আপনারা জানেন বাংলাদেশের একটা অঞ্চলে বন্যা হচ্ছে। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট শুকনো হয়ে আছে বলে আমরা মাঝেমাঝে ভাবি- দেশ মানে শুধু ঢাকা, বাকি সব ফাঁকা! ঢাকাসহ বাকি সব আসলেই ফাঁকা হয়ে যাবে যদি সুন্দরবন না থাকে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবন নাই হয়ে গেলে দেশের কত পার্সেন্ট বনভূমি থাকবে জানেন? ৪% ও না, একটা দেশে যে পরিমাণ গাছপালা থাকা লাগে, আমাদের তার অর্ধেকও নাই, সেই অর্ধেককে অর্ধেক করে দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র বানালে সেই বৈদ্যুতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য দেশের বাকি মানুষ পানির তলাতেও থাকতে পারে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেলে পরিবেশ আরও উষ্ণ হয়ে উঠবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির তলে দেশ তলিয়ে গেলে কে আপনাকে ভোট দেবে? একদিন সেই পানির তলায় বঙ্গভবন গণভবনও পড়বে! মনে রাখবেন- নগর পুড়লে যেমন মন্দির বাকি থাকে না, তেমনই দেশ ডুবলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও বাকি থাকে না!
ভারতের সাথে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা বানানো আর বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানো এক নয়। এটি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। হয়তো সেই কুড়াল মারার বিষয়টি নিয়ে একদিন সিনেমাও তৈরি হয়ে যাবে, যেটির নাম হবে: এসো নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করি, রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ি! যদি তাইই হয় তাহলে ততদিনে সুন্দরবন আর থাকবে না!
লেখক: তরুণ লেখক ও সাহিত্যিক