শহীদের মর্যাদায় আসামের ভাষা আন্দোলনে নিহতরা
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ০০:২৮
১৯৬১ সালের ১৯মে আসাম রাজ্যের বরাকে বাংলা ভাষা আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এক নারীসহ ১১ জন নিহতদের শেষ পর্যন্ত শহীদের মর্যাদা দিতে চলেছে ভারত সরকার। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে যে শিলচর স্টেশন আর তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আসাম পুলিশের গুলিতে তারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, সেই রেল স্টেশনটির নাম এবার হতে চলেছে ভাষা শহীদ স্টেশন। খবর বিবিসি বাংলার।
স্টেশনের নাম বদলে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সম্মতি জানিয়েছে। এবার আসাম সরকারকে আনুষ্ঠানিক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্টেশনটির নাম বদল করতে হবে।
২০০৫ সালে বরাকের মানুষ প্রথম দাবী তুলেছিলেন যে বাংলা ভাষার আন্দোলনের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই শহীদদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্টেশনটির নামকরণ ভাষা শহীদ স্টেশন করা হোক। শিলচরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ এই দাবী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে। রাজ্য স্তর থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত তারা আবেদন জানিয়েছেন। শুধুমাত্র মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করে বা চিঠি পাঠিয়ে কাজ না হওয়ায় গত বেশ কয়েক মাস ধরে তারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকেই নির্বাচিত স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকে ট্যাগ করে নিয়মিত টুইট করতে শুরু করেছিলেন। সপ্তাহে অন্তত তিনটি টুইট করা হতো। এই বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেশনের নাম বদলের চূড়ান্ত সময় সীমা বেঁধে দেন তারা। তবে তার আগেই সরকারি বার্তা এসে পৌঁছেছে আসাম সরকার আর সাংস্কৃতিক মঞ্চের কাছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের আহ্বায়ক রাজীব কর বলেন, "একটা সময়ে এক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাদের দাবী নাকচই করে দিয়েছিলেন এটাকে 'আঞ্চলিক দেশপ্রেম' বলে অভিহিত করে। তার পরেও আমরা হাল ছাড়ি নি। লাগাতার দাবী জানিয়ে গেছি। সেই ২০০৫ সাল থেকে লড়াই করতে করতে এতদিনে ভাষা শহীদদের মর্যাদা দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই একটা ইস্যুতে বরাকের প্রত্যেকটা ভাষাভাষী মানুষ, রাজনৈতিক দল এক সুরে কথা বলেছে"।
চূড়ান্ত মতামত দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য আসাম সরকার আর স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়েছে যে স্টেশনের নাম বদল হলে কোনও আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে কী না, বা অন্যান্য ভাষাভাষীর মানুষ ব্যাপারটাকে কীভাবে নেবেন তা নিয়ে।
উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে আসামের সরকার বাংলাভাষী এলাকা বরাক উপত্যকাতেও অসমীয়াকে আনুষ্ঠানিক ভাষা বলে ঘোষণা করায় দলমত নির্বিশেষে বরাকের বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছিলেন। ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাকে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সেদিনই মিছিল চলাকালে আসামের পুলিশ মিছিলের উপর গুলি চালাতে শুরু করে নির্বিচারে। মোট এগারোজন মারা গিয়েছিলেন সেদিন। কিন্তু তাতে আন্দোলনকারীরা দমে যাননি। শেষ পর্যন্ত সেই সরকারী ঘোষণা প্রত্যাহার করিয়েই ছেড়েছিলেন তারা।
তারপরেও চারটি ঘটনায় নিজের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে আরও চারজনকে। তারপর থেকেই আসামের একটি ডিভিশন হওয়া সত্ত্বেও বরাকের কাছাড়, হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জের সরকারী কাজের ভাষা এখন বাংলা।