ঘুষ না দেওয়ায় আসামির দুই স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ০৯:৫১

জাগরণীয়া ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এক কর্মকর্তা ও তাঁর দুই তথ্যদাতার (সোর্স) বিরুদ্ধে এক আসামির দুই স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ, ওই আসামিকে রিমান্ডে নির্যাতন না করার বিনিময়ে দাবি করা ঘুষের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একটি ডাকাতি মামলায় গত ২৯ আগস্ট নগরীর মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার এক সবজি বিক্রেতাকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা-পুলিশ। তিনি অতীতে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করলেও সম্প্রতি তা ছেড়ে দেন। গত বুধবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এরপর রিমান্ডের জন্য তাঁকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।

ওই আসামির বাবা ও দুই স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাতেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) দুই সোর্স নজরুল ইসলাম ওরফে তোতলা নজরুল ও শুভ তাঁদের ফোন করেন। এ সময় বলা হয়, ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এসআইয়ের সঙ্গে দেখা করলে তাঁদের স্বামীকে রিমান্ডে নির্যাতন করা হবে না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুই স্ত্রী সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অদূরে নজরুল ও শুভর সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাঁদের পাশের একটি বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেনদরবারের একপর্যায়ে দুই স্ত্রী নজরুল ও শুভকে ছয় হাজার টাকা দেন। বাকি ১৯ হাজার টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁদের সঙ্গে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে রাজি না হওয়ায় দুজনকে পৃথক কক্ষে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন নজরুল ও শুভ। রাত সাড়ে ১২টার দিকে এসআইও ওই ফ্ল্যাটে এসে আসামির দ্বিতীয় স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। রাত দুইটার দিকে দুই স্ত্রীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাঁদের স্বামীকে সামনে হাজির করিয়ে দেখানো হয়, তাঁকে মারধর করা হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন তাঁর দুই স্ত্রী আদালতপাড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘আসামির দুই স্ত্রীকেই ধর্ষণ করেছেন ওই এসআই ও তাঁর সোর্স নজরুল ও শুভ। পরিবারটিকে বৃহস্পতিবার আমরা মামলা করতে বলেছিলাম। তবে পুলিশের অব্যাহত হুমকির মুখে তারা ভয় পাচ্ছে। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই এগোব।’

ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুরো ঘটনা সাজানো। তাঁর সঙ্গে কারও কোনো কথা কিংবা লেনদেনের আলাপ হয়নি। নজরুল ও শুভর বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁরা তাঁর কাজ যেমন করেন, অন্য পুলিশের পক্ষেও কাজ করেন।

থানার এএসআই মিজানুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত সোর্স নজরুল ও শুভকে গতকাল শুক্রবার রাতে আটক করা হয়েছে। তাঁরা বর্তমানে থানা হেফাজতে রয়েছেন।

এদিকে ঘটনা তদন্তে ২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. ফারুক হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (‘ক’ অঞ্চল) আবদুল্লাহ মাসুদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইওয়ান) মামুনুর রশিদ মণ্ডল।

তদন্ত কমিটির প্রধান ফারুক হোসেন বলেন, ওই দুই নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ তদন্তে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

সূত্র: প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত