তিন তালাক নিয়ে মামলা করা ভারতের সেই নারীকে হুমকি
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০১৭, ১৫:৩৫
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ে দেশ থেকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক (ইনস্ট্যান্ট ট্রিপল তালাক) প্রথা বাতিল হওয়ার পরই ওই মামলায় আবেদনকারী ইশরাত জাহান কার্যত সামাজিক বয়কটের মুখে পড়েছেন। এমনকি তাকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, ‘তিন তালাক’ প্রথার বাতিল চেয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার পিলখানা এলাকার বাসিন্দা ইশরাত জাহান। ২০০০ সালে বিহারে ইশরাত বিয়ে করেন। ২০০৪ সালে হাওড়ায় চলে যান। সেখানেই তার ৩টি কন্যা সন্তান হয়। আর তা নিয়েই স্বামীর সঙ্গে বিরোধ। যদিও এরপর একটি পুত্র সন্তানও হয় তাদের। ২০১৫ সালের কর্মসূত্রে স্বামী মুর্তাজা দুবাই যান। সেখান থেকেই স্বামী ফোনে ইশরাতকে তিন তালাক দেয়। বিচ্ছেদের পরই শাশুড়ি ইশরাতের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। ফলে বাধ্য হয়েই দুই সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বোনের বাড়িতে ওঠেন ইশরাত। সেখান থেকেই ২০১৬ সালে স্বামীর তিন তালাকের প্রতিবাদ করে আদালতে মামলা করেন ইশরাত। এরপর গত ২২ আগস্ট তিন তালাককে অসাংবিধানিক, বেআইনি, ধর্মবিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পরই নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয় ইশরাত।
সংবাদমাধ্যমকে ইশরাত জানান, আমি তিন তালাকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম বলে সমাজ আমাকে গালি দিচ্ছে। আমার অধিকারের জন্য লড়াইয়ে নেমে আমাকে ভুল বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। লড়াইটা দিনের পর দিন কঠিন হয়ে পড়েছে কিন্তু আমি লড়াই চালিয়ে যাবো।
হুমকির মুখে পড়ে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও চিঠি লিখেছেন ইশরাত। তিনি জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের পর থেকেই আমার আত্মীয় ও প্রতিবেশিদের কাছ থেকে অনবরত হুমকি পাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সদুত্তর না পেলে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান তিনি।
ইশরাতের হয়ে চিঠিটি ২৪ আগস্টই (শুক্রবার) মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে পৌঁছে দেন তার নারী আইনজীবী নাজিয়া ইলাহি খান। চিঠির একটি কপি পাঠানো হয় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারকেও।
হিন্দিতে নিজের হাতে লেখা একটি চিঠিতে ইশরাত নিজেও জানান, তিন তালাককে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমি খুবই খুশি কিন্তু এখন আমি খুবই ভয় পাচ্ছি। রায়ের পর থেকে দুই বার আমার ভাসুর আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এরপর থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পুলিশের উপর আমার আর কোন ভরসা নেই। আমি আশা করবো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আমার নিরাপত্তা দেবেন। আমি সরকারের কাছ থেকে কোন আর্থিক সহায়তা চাই না। মুসলিম নারীর জন্য এই লড়াইয়ে বাংলার পুলিশের কাছ থেকে কোন সহায়তা পাইনি। আমার কিংবা আমার সন্তানের উপর যদি কোন অঘটন ঘটে তবে তার দায় পুলিশের উপর বর্তাবে। আমি আশা করবো একজন নারী (মমতা) হিসাবে আপনি আমার কষ্টটা বুঝবেন’।
এ বিষয়ে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ডি.পি.সিং জানান, ইশরাতকে হুমকির প্রসঙ্গে তাদের কিছুই জানা নেই। তবে যেখানে সাধারণের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে সেখানে অবশ্যই আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির বিশেষ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কতগুলি আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ মেনে আমাদের চলতে হয়।