ঈশ্বর কেন পুরুষ জীবটির অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই শিশ্ন দিলেন!
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৮, ১৯:৪৪
পূর্ণা, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘাপটি মেরে থাকে বাঙালি সেটেলার নামে দুপেয়ে হায়েনার দল। সেটা তোমার অজানা ছিলো না জানি। মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছো তখন ১০ বা ১২ বছরের ছোট্ট এই জীবনটায় তোমার আর কোন জ্ঞান হোক বা না হোক, এই জ্ঞানটুকু হয়েই গিয়েছিলো নিশ্চই। তুমি দেখেছো, ওদের শরীর থেকে ঘামের বদলে কাম চুইয়ে পড়ে, চোখের দৃষ্টিতে শিশ্নের প্রতিবিম্ব ভেসে থাকে, মগজের ভেতরটা যৌনতায় ঠাসা। একটি পুরুষদন্ড, হ্যাঁ, অস্তিত্ব জুড়ে থাকা মাত্র একটি পুরুষদন্ডের জোরে ওরা খুবলে বেড়ায় পাহাড়ের জনপদ।
তুমি প্রথম নও পূর্ণা। এইতো সেদিনও সীতাকুন্ডে ধর্ষণ শেষে একই দড়িতে দুই ত্রিপুরা কিশোরীকে ঝুলিয়ে দিয়েছিলো ওরা। এর আগেও ধর্ষণের পর মেরে ফেলেছিলো সবিতা চাকমা, সুজাতা চাকমা, ছবি মারমা, তুমাচিং মারমাসহ আরো অনেককে। কাপেং ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত ৩৬৪ জন আদিবাসী নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে৷ তার মধ্যে ১০৬ জন শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, ১০০ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ৬৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে৷
দু'মুঠো পান্তা খেতে তুমি ঘরে যদি না-ও ফিরতে পূর্ণা, তবুও যে তুমি বাঁচতে পারতে একথা আমি হলফ করে বলতে পারি না। দীঘিনালা খাগড়াছড়ি সড়কের পাশেই যদি তোমার ঘরটা না হতো, তবুও যে তুমি ধর্ষিত হতে না, সে কথাও আমি হলফ করো বলতে পারি না। তোমার ঘরের পাশে যদি ট্রাকটা না থামতো, তারপরও তোমার শরীরটা অক্ষত থাকতো সেটাও আমি হলফ করে বলতে পারি না। এমনকি তুমি ত্রিপুরা না হয়ে বাঙালি মেয়ে হলে, পাহাড়ের না হয়ে সমতলের মেয়ে হলে, পান্তা না খেয়ে রোজ ফাস্টফুড খেলেও যে তুমি বাঙালি পুরুষের বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেতে, সেকথা আমি হলফ করে বলতে পারি না পূর্ণা। এমনকি তুমি বেঁচে থাকলে যে আবারও ধর্ষণের শিকার হতে না, সেটাও আমি হলফ করে বলতে পারি না।
আমার এমন অনেক না বলতে পারার সীমাবদ্ধতা পূর্ণা। ঈশ্বর কেন পুরুষ নামক জীবটির সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুধুই শিশ্ন দিলেন, সাথে কিছু মনুষ্যত্বও দিলেন না, আমি সেটাও বলতে পারি না। আমার/ আমাদের এই অপারগতাকে কোনদিন ক্ষমা করো না তুমি। কোনদিন না।
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক