লাকীদের জন্য
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৮, ১২:২৩
আবার সেই পুরনো ছোবল। রাম রহিম সবাই একাট্টা হয়েছে ব্যক্তি লাকীর চরিত্রহননে। মগজের লড়াইয়ে হেরে যাওয়া নষ্ট, ভ্রষ্ট পুরুষের বিকার ছড়িয়ে পড়েছে আবারো সোশ্যাল মিড়িয়ার দেয়ালে দেয়ালে। শুরু হয়েছে সেই পুরোনো শর্টকাট অস্ত্র ‘চরিত্রহরণ’। তার অপরাধ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিচিত নেতা সোহেলকে সে আশ্রয় দিয়েছে। নিশ্চয়ই লাকী এসবে ভেঙে পড়েনি। সেই গণজাগরণ এর দিনগুলোতে কি এর চেয়ে বেশি যৌণ সন্ত্রাস লাকীর উপর হয়নি? সেইসব আগুনের দিন পার করে এখানে রাজপথে দাঁড়িয়েছে লাকী।
কয়েকদিন আগে মরিয়মকে দেখেছি আমরা এই শহরের রাজপথে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত হতে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফারুক হাসানকে ছাত্রলীগের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলো মেয়েটি। বারবার বলছিল, ‘একটা কুকুরকে ওভাবে মারলেও তো মানুষ বাঁচাতে যায়, আর সেখানে উনি (ফারুক) তো একজন মানুষ ছিলেন।’ সে অপরাধে(?) মেয়েটি শহীদ মিনারের পথে নির্যাতিত হয়েছে, সিএনজিতে হয়েছে ও সবশেষ থানায় নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় 'বেশ্যা' উপাধি পেয়েছিলো মরিয়ম। এক পর্যায়ে গভীর বেদনা থেকে সে বলেছে, ‘এটা আমার দেশ নয়।’
দায়গ্রস্থ অস্তিত্বসংকটে পড়া রাষ্ট্র যন্ত্রের আজ বড়ো ভয় লড়াইয়ের ময়দানের মেয়েদের। তাই আজ যুদ্ধের কৌশল কেবল ব্যক্তি আক্রমণ আর চরিত্রহননে গিয়ে ঠেকেছে। ইতিহাস সাক্ষি, যে মেয়েকে পুরুষরা ভয় পেয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছে তাকেই ডাইনি বলেছে, বেশ্যা বলেছে, নষ্টা বলেছে।
যে নারীকে যোগ্যতায় মোকাবেলা করা যায় না, সেই মেয়ের চরিত্রহনন ছাড়া আর কি অস্ত্র আছে পুরুষের হাতে? যে মেয়েকে মগজ দিয়ে মোকাবেলা করা যায় না, শক্তি দেখিয়ে থামানো যায় না, কুৎসা রটিয়ে দমানো যায় না, সে মেয়ে যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা ওদের চাইতে ভালো কেউ জানে না।
এই পুরুষের সমাজ নারীর সাহস হজম করতে পারে না, নারীকে কর্ষণের জন্য লাঙ্গল জোয়ালেরও অভাব তাই হয় না। তাই রাতের আঁধারে মুখে গামছা বেঁধে পতিতাপল্লি ঘুরে আসা পুরুষ পতিতের দল দিনের আলোয় বুক চিতিয়ে মেয়েদের বেশ্যা বলে গালি দেয় নিজেদের পশ্চাদদেশের ঘা লুকোতে।
লাকী, অক্ষম মূর্খ পুরুষ পুঙ্গবের দল ভেবেছে নষ্টা বললেই, বেশ্যা বললেই বুঝি আঁচল বিছিয়ে কাঁদতে বসবো আমরা। কিন্তু ওরা জানে না, তুমি, তোমরা, এই আমরা আগুন গিলে অঙ্গার প্রসব করতে শিখে গেছি সেই কবেই। তাই চোখ, কান, নাক সবই খোলা রেখে এসব নষ্ট পুরুষের বিকৃত উল্লাস শুনে আমরা বরাবরের মতোই হেসে যাবো।
বিকারগ্রস্ত পুরুষের দল খিস্তি করছে বলে আমাদের লজ্জিত হবার বিন্দুমাত্র কোন কারন আমি দেখি না। বৃক্ষ তার ফলেই নিজ পরিচয় দেয়। ওরাও তাই করছে। এর মাঝে তোমাদের যা করার তা তোমরা করে যেতে থাকবে সিনা টানটান করেই। শত্রুর মুখে ছাই ঢেলে জোরে, নিপীড়িতের পাশে আরো শক্ত করে মানব বর্ম গড়ে দাঁড়াবে তোমরা।
মিছিলের এমাথা ওমাথা গর্জে ওঠবে তোমাদের স্লোগানে। সেই শব্দে ওদের পিলে চমকে যাবে। ওরা আরো উচ্ছৃংখল হবে, আরো খারাপ কথা বলবে। তোমরা কলকল করতে করতে উপভোগ করবে ওদের নিষ্ফল আস্ফালন।
মনে রেখো, আগুনের পাখি ঝাঁক বেধে আসে না। ক্ষণজন্মার মতো একলা আকশে সাহসের ডানা মেলা আগুনের পাখিরা তাই পোড়ার ভয়ে ডানা গোটায় না। জানি, তোমরাও গোটাবে না।
লেখক: কলামিস্ট, প্রধান নির্বাহী, সংযোগ বাংলাদেশ