নিজেই নিজেকে ছুটি দিন না!
প্রকাশ : ০৭ মে ২০১৮, ২৩:২৮
প্রিয় ভগ্নীগণ,
সবাইকে রাশি রাশি প্রীতি ও শুভেচ্ছা। অনেক দিন হয় চিঠিপত্র লেখা হয় না। সরকারি চিঠি, উকিল নোটিশ, আর চাকুরী সংক্রান্ত চিঠিপত্র ব্যতিত কোন চিঠিই আর এখন লিখতে হয় না। আমার ধারণা এখন আর কেউ পত্র পাঠের জন্য লেখাপড়া শিখার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করেন না। হাতে হাতে মোবাইল ফোন, মুহুর্তেই সংবাদ আদান প্রদান হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে লেখাপড়া শেখার গুরুত্ব মোটেই কমে যায়নি।
আমরা এখন প্রতিনিয়ত ছুটে বেড়াই। সংসারে, কর্মক্ষেত্রে নিপুণতা প্রমাণ করতে কি নিদারুণ ছোটাছুটিই না করতে হয়! কিন্তু এত হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেও কি সুখ শান্তির ছোঁয়া মিলছে? যারা গৃহিণী বা অন্তঃপুরবাসিনী, বাইরে কাজ করেন না, তারাও কি কম খাটুনি খাটেন? সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এতটুকু বিশ্রামের সময় কি আছে প্রাত্যহিক কাজের মাঝে?
তাই তো দেখা যায় সকালে ঘুম থেকে উঠে সমস্ত কাজ সেরে সকলের খাবার যোগান দিয়ে, ছেলেমেয়েকে তৈরি করে, স্কুলের দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে মুখে কিছু না দিয়েই মা ছুটে যাচ্ছেন সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে। সেখান থেকে বাসায় ফিরে আবার দুপুরের সমস্ত কাজ করে পুনরায় বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে সেই মাকেই ছুটে যেতে হচ্ছে। বাড়ি ফিরে সেই রুটিন মাফিক কাজ করেই যাচ্ছেন। হয়তো এরই মাঝে একটু চা, বিস্কিট সামান্য নাস্তা খেয়ে আপাতত ক্ষুধা নিবৃত্তি করে নিচ্ছেন। কিন্তু স্বামী সন্তান স্বজন পরিজন সকলের সুখ শান্তির ব্যবস্থা বজায় রাখতে গিয়ে নিজের জীবনের চাওয়া পাওয়ার অংকটা কখনো মিলিয়ে দেখেছেন? কখনো কি হিসাব করেছেন সারাদিনের এত কর্মব্যস্ততার জন্য যে পরিমান শক্তি ব্যয় হলো তা পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরি আপনার শরীর পেয়েছে কি না? যদি না পেয়ে থাকেন তা হলে প্রতিদিন শক্তি ক্ষয় হতে গিয়ে যে ঋণাত্মক অবস্থায় এই শরীর পতিত হচ্ছে তা থেকে উত্তরণের কোন উপায় আপনার আছে কি?
এটা একেবারেই সুনিশ্চিত যে, জগৎ সংসারের সকল প্রাণির ন্যায় আমরা স্ত্রী জাতিরাও একবারই জন্ম মৃত্যুর অধীন। মেয়েরাও মরে যাওয়ার পর এই জাগতিক সুখ ভোগের জন্য আর এক বার জন্ম নিবো না। তবে কেন আমরা নিজেদের অধিকারের কথা নিজেরাই চিন্তা করবো না? একবার ভাবুন, কন্যা, জায়া, ভগ্নী এবং আমার জননীরা। একবার নিজেদের নিয়ে ভাবুন।
পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মতো অবশ্যই গৃহিণীদেরও পরিমান মতো খাবার গ্রহণ, চিত্তবিনোদন এবং পরিমিত বিশ্রামের অধিকার আছে। আমরা কলুর বলদের মতো অষ্টপ্রহর সংসারের যাতা কলে ঘুরে মরবো না। প্রতিদিন কাজের শেষে যেমন সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায়, কর্মজীবীরা যেমন সপ্তাহান্তে ছুটি ভোগ করেন আমরা নিজেরাও চাইলে একদিন নিজেকে ছুটি দিতেই পারি। যেদিন এই শরীর, মনকে বিশ্রাম দিয়ে পুরো কর্ম দিনের জন্য সতেজ করে রাখতে পারি। আমি নিজে যা পারি আপনিও নিশ্চয়ই পারবেন, শুধু কর্ম পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের চেষ্টা থাকা চাই।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী