রোহিঙ্গা নির্যাতন: আনন্দের নয় আশঙ্কার
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০১৬, ২২:৩৫
মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপরে চলছে বর্বর নির্যাতন। আমাদের দেশের আদিবাসীদের মতো তাদেরকে বলা হচ্ছে সে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। যেহেতু মায়ানমারের অধিকাংশ জনগণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গারা ধর্মের দিক দিয়ে ইসলাম ধর্মাবম্বী তাই এই ইস্যুতে আমাদের দেশের অনেকে খুব বেশী উৎসাহিত এবং সোচ্চার। উৎসাহিত এই কারণে নয় যে শুধুমাত্র রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে বলে, উৎসাহিত এই কারণেও অনেকটা বেশী। কারণ হানাহানি, রক্তপাত শুধু যে একটা ধর্মের মানুষজন করে থাকে তা নয় বৌদ্ধ ধর্মও কোন অংশে কম যায় না এইটাও প্রমাণ করাটা জরুরী। লেজ আমাদের কাটা থাকবে তা কেন হবে? লেজ সবার কাটা থাকুক!
বৌদ্ধ ধর্মে যদিও ধর্মের জন্য প্রাণ দেওয়া বা যুদ্ধ ঘোষণা করার কথা লিখা হয়নি কোথাও এরপরও মায়ানমারের অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেখা যাচ্ছে এই রোহিঙ্গাদের বিপক্ষ নিয়ে কথা বলতে। রোহিঙ্গারা মায়ানমারে যতটা না ধর্ম বিদ্বেষের শিকার তার চেয়েও বেশী শিকার জাতিগত বিদ্বেষের। যেমনটি আমাদের দেশের আদিবাসীরা!
তবে যে বিদ্বেষই হোক না কেন এমন অমানবিক আচরণ কখনো কাম্য নয়। প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া এবং খুব জরুরী ভিত্তিতে এসব হামলা বন্ধ করা।
কেউ কেউ ভাবছেন, শুধু ভাবছেন না লিখছেনও, যারা সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে সরব তারা এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে এত নীরব কেন? মুসলমানদের উপর হামলায় খুশিতে পেটে ডুগডুগি বাজছে মনে হয়!
এই দেশের রামু হামলার কারণ হিসেবে অনেকে দাবী করেন, ওই সময়ে মায়ানমারের রোহিঙ্গা হামলাটিরও কিছুটা প্রভাব আছে। এছাড়া যখনি এই দেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে কথা বলা হয় তখন অনেকে নিয়ে আসেন ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রসঙ্গ আবার অনেকে এই রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ। অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন, অন্য দেশে আমাদের ধর্মের কারো উপর এমন হামলা হলেই সেই হামলার দায়ভার নেওয়ার দায়িত্ব এই দেশের সংখ্যালঘুদের।
যারা ভাবছেন রোহিঙ্গাদের উপর হামলায় এই দেশের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষজন মনে মনে খুবই প্রশান্তি পাচ্ছে, তারা চুপ করে আছেন; তারা হয়তো জানেন না যখনি এমন খবরগুলো পত্রিকায় আসে খুশির প্রশ্ন তো কোনভাবেই আসে না বরং সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে আবারও একটা নাসিরনগর বা রামুর পুনরাবৃত্তি হবে এই আশংকায়। কে না জানে ভারতের বাবরি মসজিদের জন্য এই দেশের হিন্দুদের কতো করুণ পরিণতি হয়েছিলো।
মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর এমন বর্বর আচরণ কোনভাবেই আনন্দের নয় বা সমর্থনের নয়, বরং আশংকার! আরো একটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া দেখার আশঙ্কার, আরও একটি রামু দেখার আশঙ্কার!
ডানা বড়ুয়ার ফেসবুক থেকে