ব্রেস্ট ক্যান্সার: সচেতনতা চাই পুরুষেরও
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৪০
আমার একটা জিনিস আসলেই দুঃখ লাগে যে স্তন ক্যান্সার নিয়ে সেমিনারগুলোতে সবসময় নারীদেরই কথা বলা হয়। এমনভাবে জিনিসটা রিপ্রেজেন্ট করা হয় এটা নারীদের রোগ। হলিক্রস কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে প্রথম স্তন ক্যান্সার নিয়ে সেমিনারে উপস্থিত থাকি। ওই বয়সে কোন ছেলেদের কলেজে এই সেমিনার করা হয়েছে বলে জানি না! তার মানে কি দাঁড়ায়? ছেলেদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয় না? তাদের ব্রেস্ট নাই?
দুটো কারণে এই পোস্ট লিখছি। এর প্রথম কারণ হচ্ছে আমার নাহিদা আপু। যে ১৯৯৭ সালে আমার চোখের সামনে মারা গিয়েছিল ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণে। ক্যান্সার ধরা পড়ার পরেও তার ব্রেস্ট অপারেশন করা হয় নি একটা কারণে “স্তন ছাড়া তার বিয়ে হবে কি করে?” এমন একটা ব্যাপার আমার জ্যাঠা-জেঠীর মধ্যে ছিল।
আর একটা কারণ ব্রেস্ট কারণ নিয়ে একটা কাজ করতে চেয়েছিলাম বলে একজন পুরুষ বন্ধুর কাছে শুনতে হয়েছিল, ব্রেস্ট পরীক্ষা বিষয়ক সেশনে কোন ছেলে থাকলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। আমি আপাদমস্তক তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ। পরে অবশ্য কাজ করা হয়নি।
যাই হোক, এই দুইটা ঘটনা আমাকে জানালো যে ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ে পুরুষদের মাথাব্যাথা কম। তারা এটা নারীদের প্রাইভেট পার্টসের রোগ বলে মনে করে। কিন্তু এটা সত্য যে, পুরুষদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়। নারীদের তুলনায় এত বেশি না হলেও হয়।
ইউএসএ এর এক সমীক্ষা থেকে দেখা গেছে এ বছর প্রায় ২৬০০ জন পুরুষের ব্রেস্টে আক্রমণকারী ক্যান্সার পাওয়া গেছে। একজন পুরুষের জীবনে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা ১০০০ এ ১ ভাগ কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতন নয়। এটা অবশ্যই নারীদের তুলনায় কম। কিন্তু কন্সার্ন তাই বলে কম নয়। ইউএসএ তে প্রতি ৮ জন নারীর ১ জন ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
একজন পূর্ণাঙ্গ পুরুষের ব্রেস্টের টিস্যু কম থাকে। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বালিকার যেরুপ থাকে সেরুপ। বালিকার পরে টিস্যু গ্রোথ হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই বালিকার স্তনের বেশি টিস্যু এবং দুধ সংরক্ষণ করা ঘরে যে ক্যান্সারটা হতে পারে, সেটা পুরুষের জন্য হয়না। তবে ভ্যানগার্ড ব্লগে আজ প্রকাশিত এক তথ্যে বলা হয়েছ যে কটা ব্রেস্ট ক্যান্সার স্টাডি নিয়ে রিসার্চ করা হয় তার ৫% পুরুষ। মানে টিস্যু কম মানেই, ঝুঁকি কম নয়।
সবচেয়ে বড় কথা, একজন পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সার একজন নারীর চাইতেও বেশি ভয়ানক। এটার আরেকটা কারণ হচ্ছে পুরুষরা ভাবতেই চায় না তাদের স্তন ক্যান্সার হতে পারে। তাই চাক চাক দেখা গেলে বা সেখানে কোনরুপ ব্যাথা অনুভব হলে তারা চুপ করে বসে থাকে। ডাক্তারের কাছে যায় না। তাই দেরীতে ধরা পড়ে। আর এর মূল কারণ ওই একটাই “স্তন ক্যান্সার নারীদের জিনিস। পুরুষের কেন হবে”?
কাছের কোন নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সার হলে পুরুষের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের ছেলের ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া অত্যধিক ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ করলেও ঝুঁকি বেড়ে যায় স্তন ক্যান্সারের।
৩৫ এর পরে নারীদের জন্য স্তন ক্যান্সারের সময় হলেও ৬০ থেকে ৭০ বয়সের পুরুষদের ডেঞ্জার পিরিয়ড হচ্ছে স্তন ক্যান্সারের। লক্ষণ কিন্তু একই। চাক চাক অনুভব করা, অস্বস্তি বা ব্যাথা, নিপল দিয়ে রস।
অতএব পুরুষেরা আপনারাও সচেতন হন নিজেদের স্তন নিয়ে। নারীদের স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতন হউন! নিজেও সেমিনারগুলো তে এটেন্ড করুন। নিজের স্তন নিজেও পরীক্ষা করতে শিখুন।
অক্টোবর মাস স্তন ক্যান্সার নিয়ে সচেতনতার মাস। নিজেদের নিয়ে সচেতন হবার সময় এখনই।
মারজিয়া প্রভা'র ফেসবুক থেকে