ধূমপান কিংবা পোশাক নারীর চারিত্রিক শুদ্ধতার পরিমাপক নয়
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১৯:২৪
পাবলিক প্লেসে সিগারেট খাওয়া একটা অশোভন বিষয়, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। ঘরের ভেতরে সিগারেট খাওয়া প্যাসিভ স্মোকিং এর মাধ্যমে পরিবারের নন-স্মোকারদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। সেটাও নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ধূমপান একটা সুখকর বদভ্যাস যা নানান জটিল রোগের জন্ম দিতে পারে, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। ধূমপান একটা স্টুপিড কাজ, পয়সা খরচ করে শরীরের ক্ষতি করা, তাও নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে পারলে ভালো, না পারলে অন্যের ক্ষতি না করেই করা উচিত, নারী-পুরুষ উভয়েরই।
আমার ছোটফুফু সিগারেট খেতেন। সকালবেলা একটা স্টার সিগারেট না ফুঁকলে তার স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়াকর্ম চালু হতো না। তিনি বলতেন তার স্বামীই আদর করে তাকে ধূমপান করা শিখিয়েছিলেন। নারীর ধূমপানের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাকে লুকিয়ে সিগারেট খেতে হতো। আমার আব্বাও ধূমপান করতেন, সমস্তদিন ধরে এবং প্রকাশ্যে। দু'জনেই ধূমপায়ী অথচ একজনকে এ নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে হতো কারণ তিনি নারী। অথচ এই দুইজন মানুষই আমার দেখা শুদ্ধতম চরিত্রের মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ফুফু কী রোগে মারা গিয়েছিলেন আমার মনে নেই তবে আব্বা ফুসফুসের ক্যান্সারে পরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ধূমপানের কারণে যেসব রোগবালাই হয় তারাও নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করে না, আপনারা কেন করবেন? আপনারা কি রোগ-বালাই থেকেও নিম্নস্তরের?
আমি ধূমপানরত অবস্থায় নিজের কোনো ছবি কখনোই শেয়ার করব না, ইচ্ছে করে অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়েও ধূমপান করব না কারণ এই বদভ্যাসকে প্রমোট করবার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে যদি কখনো আপনারা কেউ আমার হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট দেখেই ফেলেন তাহলে কি ধরে নেবেন আমি একজন দুশ্চরিত্র নারী? যদি পুরুষের বেলায় এমনটা মনে না করা হয়, আমার বেলায় কেন?
পাবলিক প্লেসে উদোম গায়ে ঘুরে বেড়ানোও সিভিলাইজড সমাজে অশালীন, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। তবু আপনাদের দাবি মেয়েরা একটু বেশি ঢেকেঢুকে চলতে হবে। মানুষ কাপড় পরতে শুরু করেছিল আবহাওয়া থেকে নিজের শরীরকে বাঁচানোর জন্য। কানাডার -৩০ ঠান্ডায় নারী-পুরুষ সবাই যত পুরু সম্ভব জাব্বাজোব্বা পরে নিজেকে ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন কিন্তু গরম পড়লেই পুরুষরা সবগুলো পরত খুলে ফেলেন, নারীকে তখনো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জাব্বাজোব্বা লাগিয়ে রাখতে হয়। কেন? কারণ নারীর বক্ষ পুরুষ অপেক্ষা বেশি স্ফীত, ওড়নার বিপজ্জনকতা নিয়ে কথা বলতে গেলেও আপনারা সেকথাই স্মরণ করিয়ে দেন।
আমি আপনাদেরকে দুটো কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। নারীর বক্ষ সন্তানকে দুধ পান করানোর জন্যই আপনারটার তুলনায় বেশি স্ফীত। আপনার মারটা, বোনেরটা, কন্যারটা- সবারটাই। নারীর স্ফীত বক্ষ দেখে আপনার যেমন কুছ কুছ হোতা হায়, আপনার লোমশ বক্ষ দেখেও নারীর কুছ কুছ হোতা হায়। কালাহারি মরুভূমীর বুশম্যানদের নারীরা বক্ষ উন্মুক্ত রেখেই চলাফেরা করে। তাদের উপর পুরুষরা যখন তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে না, উন্মুক্ত বক্ষ দেখে তাদের কুছ কুছ হয় না। তাদেরও পারিবারিক সামাজিক নিয়মকানুন এবং মূল্যবোধ আছে কিন্তু তা নারীর পোশাক বা ধূমপানের দ্বারা প্রভাবিত নয়।
আপনারা নিজেদের সভ্য বলে দাবি করেন কিন্তু আমার মতে আপনারা চিন্তার মুক্তিতে, ভাবনার সৌন্দর্যে বুশম্যানদের থেকেও পিছিয়ে আছেন। বিশ্বাস না হলে সত্যঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বহু পুরনো একটা ছবি 'দ্য গডস মাস্ট বি ক্রেজি' দেখুন। ইউটিউবে পাওয়া যাবে।
ধূমপান অথবা পোশাককে নারীর চারিত্রিক শুদ্ধতার পরিমাপক হিসেবে দেখা বন্ধ করুন। পৃথিবীতে প্রচুর গাধা আছে, গাধার সংখ্যা আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে বরং আপনারা বুশম্যান হোন, সেই ভালো।
জেসমিন চৌধুরীর ফেসবুক থেকে