একদিনের ছুটি মঞ্জুর হবে কী?

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৬, ০১:০৬

ঘুম থেকে উঠে চা তৈরি করতে করতে দাঁত ব্রাশ আর হাতমুখ ধুয়ে দিন শুরু। বাচ্চাদের বাবা যেহেতু গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে ঘুমায়, সেহেতু সকালের কাজগুলো মাকেই দেখতে হয়। বাচ্চাদের হাতমুখ ধোয়া থেকে শুরু করে নাস্তা রেডি করা, খাইয়ে দেয়া, স্কুলের জন্য রেডি করা, সবটাই মা হিসেবে করতে হয়। বাবা ঘুম থেকে উঠে এক কাপ চা খেয়ে বাচ্চাদেরকে স্কুলে পৌঁছে দেন। বাবার দায়িত্ব যে বাইরেরটা সামলানো। ফিরে এসে নাস্তা করে অফিস। অফিস থেকে ফিরার সময় বাচ্চাদেরকে আবার সাথে নিয়ে আসা। 

বাচ্চারা স্কুলে, তাদের বাবা অফিসে। একা একা সংসারটা গুছিয়ে দুপুরের খাবার দাবার রেডি করে স্নান করে ফ্রেশ হতে হতে ঘরে ফেরে সবাই। বাচ্চাদের কাপড় বদলানো থেকে শুরু করে ফ্রেশ করে খাবারের পাট চুকানো। অফিস করে ক্লান্ত বাবা হিসেবে নিজে নিজেই ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিল পর্যন্ত আসাটাই তো ঢের! 

আর একজন আদর্শ গৃহিণী হিসেবে বিকেলে পরিবারের সবাইকে ব্যালকনিতে চা পরিবেশন করাটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। সন্ধ্যার পর যেহেতু বাচ্চারা পড়া শেষ করেই রাতের খাবার খাবে তা একজন মা ছাড়া আর কে ভাল বুঝে, আর করতে পারে? বাবা যেহেতু সারাদিন বাইরে থাকে, দেশের খবর রাখতে হয়, তাই বাচ্চাদের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে টিভিতে খবরগুলোও দেখতে হয়। 

রাতের খাবার শেষ হলে বাচ্চাদেরকে ঘুমের জন্য তাদের দাঁত ব্রাশ, হাতমুখ ধোয়া ঔষধ খাবার থাকলে তা খাইয়ে ঘুম পাড়ানি পর্যন্ত একজন মা ছাড়া আর কে ভালভাবে সামলাবে! 

এতো গেলো স্বাভাবিক দিনগুলোর কথা। ছুটির দিনগুলোতে? 

হ্যাঁ, ছুটির দিনগুলোতেও তো একজন আদর্শ মায়ের, একজন আদর্শ গৃহিণীর অনেক দায়িত্ব থাকে। সপ্তাহের ধকলে পরিবারের অনেক কাপড়-চোপড় জমে গেছে ময়লা হয়ে। সেগুলোর একটা ব্যবস্থা তো করা চাই। একজন গৃহিণী থাকতে পরিবারের অন্য কারও এ নিয়ে চিন্তা করার কোন মানে নাই। আর আসলে যেহেতু কলিগেরা অন্যান্য দিনে বেড়াতে পারে না, ছুটির দিনটাতেই তো আসবে। এর জন্য তো একটা প্রিপারেশন আছে, তাই না? এই প্রিপারেশনের ফাঁকে একজন পুরুষের সংসার নিয়ে ভাববার সময় কই? তার চেয়ে বরং রান্নাঘরে সবগুলো আইটেম ঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কী না, উঁকি দিয়ে দেখার ফাঁকে ফাঁকে ল্যাপটপে একটা সিনেমা কিংবা নাটক দেখে ফেলাটা একজন পুরুষের জন্য বেটার। সপ্তাহে একটা দিনই তো আসলে ছুটি। সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন থাকার পরও শনিবারটা বাচ্চাদের নানান জায়গায় বেড়ানোর বায়না থাকে। আজকের দিনটাই নিজেকে উপভোগ করার একমাত্র সুযোগ। আর কিভাবে রান্না হবে, পরিবেশন হবে, বাচ্চারা কখন খাবে এসব ঠিক করার জন্য তো আদর্শ স্ত্রী আছেই। স্বামীর বন্ধু মহলে অবশ্য বেশ প্রশংসা আছে স্ত্রীটির। স্ত্রীর বন্ধুদের সাথে অবশ্য তার মোবাইলে যোগাযোগ হয়। ওদেরও বা সময় কই বান্ধবীকে দেখতে আসার বা কোথাও দেখা করার? সবারই তো সংসার বাচ্চাকাচ্চা আছে। 

হ্যাঁ, আমি একজন নারীবাদী হিসেবে নয়, একজন পুরুষ বিদ্বেষী হিসেবে নয়, শুধুই একজন মা, একজন গৃহিণী কিংবা একজন স্ত্রী হিসেবে তাদের পক্ষ থেকে পুরুষের কাছে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে একদিনের জন্য ছুটি চাই। শুধু একদিন, শুধু একদিনের জন্য, মা নয়, গৃহিণী নয়, কারও স্ত্রী নয়, শুধুই একজন মানুষ হিসেবে শুধুই নিজেকে নিয়ে থাকতে চাই, শুধুই নিজেকে নিয়ে ভাবতে চাই। 

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে, মুক্তমনের পুরুষদের কাছে সর্বোপরি মানুষের কাছে এই একদিনের ছুটি মঞ্জুর হবে কী? নাকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে একজন আদর্শ নারী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যেতে হবে বিরতিহীন, ছুটি বিহীন? 

পাপিয়া পপি'র ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত