আজো চলছে নারীকে যৌনদাসী করার কৌশল
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২০:২৫
লাস ভেগাসের বৈধ সেক্স বাণিজ্য নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের দুই পর্বের একটা ডকুমেন্টারি ‘সেক্স ফর সেল’ দেখেছি এই মাসের প্রথমদিন। সেখানে একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। এইসব প্রস্টিটিউট মেয়েরা অনেকেই মডেল হতে আসে, অনেকেই মডেলিং থেকেও আসে!
আমার একাধিক নাটক ও সিনেমার পরিচালক বন্ধু আছে। তাদের কাছে জেনেছি যেসব মেয়েরা মডেলিং করতে আসে, অভিনয়ে নাম লেখাতে চায় তারা অনেকেই ভালো নাটকে, ভালো বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের বিনিময়ে যে কারো শয্যাসঙ্গী হতে রাজি থাকে। বিষয়টা আমি তেমন আমলে নেইনি। কিন্তু আমার পরিচিত এক মেয়েকে যখন ‘কাস্টিং কাউচ’ হতে রাজি আছো কিনা প্রশ্নটা করেছিলাম, তখন সে আমাকে তাজ্জব করে দিয়ে বলল- হ্যাঁ, রাজি আছি!
মেয়েটার উত্তর শুনে যে কেউই গালি দেবে, রাগ করবে, কড়া কথা শুনিয়ে দেবে। কিন্তু একবারও বলবে না- কে ওকে ভাবতে শেখালো যৌনতা যোগ্যতার পরিমাপ? কে ওকে নিজের দেহকে পণ্য বানাতে শেখালো?
মেয়েদের জন্য সুন্দরী প্রতিযোগিতা দেখি, রান্নার প্রতিযোগিতা দেখি, নানারকমের ফ্যাশন প্রতিযোগিতা দেখি, কিন্তু আইকিউয়ের, বুদ্ধিমত্তার আলাদা প্রতিযোগিতা দেখি না। কাগজজুড়ে ছাপানো হয় ঐশ্বরিয়া রায়ের ছবি, কিন্তু যে মেয়েটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, হার্ভার্ডে বা এমআইটিতে নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখছে তার খবর পড়ে থাকে খবরের কাগজের চিপায়। তাকে কেউ চেনে না, তাকে চেনানোর গুরুত্বও কম। তার ফুসফুসটিও হয়তো মেরি কুরীর মতন ঝাঁজরা হয়ে যাবে পলেনিয়াম আর ইউরেনিয়াম আবিস্কার করতে করতেই। কিন্তু কেউ তাকে চিনবে না!
বলে রাখি, ইউরোপের মেয়েরা এককালে ভেবেছিল খুব নারী জাগরণ হচ্ছে খোলামেলা পোশাক পরে। কিন্তু তারা যে পণ্য হচ্ছে, পণ্য হতে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে সেটা বোঝা যায় সারা পৃথিবীতে নারী আর পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পদের মালিকানা হিসেব করলে। পুরুষের হাতে আছে ৯৯% আর নারীর আছে ১% ! অথচ কোন বিজ্ঞাপনে নারী নেই? পুরুষের শেভিং ক্রিম, আফটার শেভ লোশান, পারফিউম... শুধু কি পুরুষের! নারীর লিপ্সটিক, ক্রিম, ফাউন্ডেশান সবখানে!
বিশ্বসুন্দরী খেতাব পাওয়া প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছিলেন- এই প্রতিযোগিতা যা দিয়েছে তার চেয়ে আরও বেশি নিয়েছে! আসলে এটাই সত্য। তাদের শেখানো হয়- সুপারস্টার হওয়া মানে গায়ের ভাঁজ, বুকের খাঁজ, কোমরের মাপ। কেউ বলে না সুপারস্টার হওয়া মানে সুপার ট্যালেন্টেড হওয়া, আর্ট হিস্ট্রি নখের ডগায় রাখা, ইউরেনিয়ামের আণবিক ভর মুহূর্তে বলে দেওয়া, যুগান্তকারী কিছু মানব কল্যাণের জন্য আবিস্কার করা!
মধ্যযুগের হারেম, বাইজি, যৌনদাসী প্রথা কি সত্যিই পৃথিবী থেকে উঠে গেছে? আমার তো মনে হয় না! আমার মনে হয় হারেমগুলি এখন মডেল এজেন্সিতে রূপ নিয়েছে মাত্র! নারীকে পণ্যের মতো ভোগের প্রথা দূর হয়েছে, নাকি কেবল কৌশল বদলে গেছে মাত্র?
জান্নাতুন নাঈম প্রীতির ফেসবুক থেকে