আমরা খুব ঘৃণা করি!
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০১৬, ০৪:৫০
আমাদের সবচেয়ে বড় প্রব্লেম কি জানেন! ঘৃণা! আমরা খুব ঘৃণা করি! আস্তিকরা নাস্তিককে, নাস্তিকরা মৌলবাদীদের (কখনও আস্তিকদেরকেও), জামাতি বামাতিকে, বামাতি মেইনস্ট্রিম দলকে, এক ধর্ম আরেক ধর্মকে। ঘৃণা করি। যেমন আজ করছি যে মেয়েগুলো “নিবরাস’ ছেলেটার সুন্দর চেহারা দেখে ক্রাশ খাচ্ছে! কষ্ট পাচ্ছে সুন্দর চেহারার ছেলেটা ব্রেইনওয়াশ হয়েছে বলে! ঘৃণা ছড়িয়ে দিচ্ছি সেইসব মেয়ের প্রতি।
আমি বেশি গভীরে গিয়ে লিখতে পারব না বিষয় নিয়ে। আলগোছে কিছুটা বলি! নিবরাস ছেলেটা আজকে যদি মেইনস্ট্রিম নর্মাল একটা ছেলে হত এই ক্রাশ খাওয়াটা কোন প্রব্লেম হত না! প্রব্লেম হচ্ছে সে মানুষ খুন করেছে, জঙ্গি হয়েছে! এটা জেনেই যে মেয়েরা তাদেরকে পছন্দ করছে তাদের প্রতি আমাদের ক্ষোভ কিসের?
আমরা এই সামান্য বিষয় একসেপ্ট করতে পারছি না! গ্রহণ করার ক্ষমতা আসলেই আমাদের কম! একটা মেয়ের এইটুকু সিম্পল ক্রাশ জাতীয় ব্যাপার নিয়ে আমাদের সহনশীলতা কম! তাহলে আমরা কি করে আশা করি আমাদের ভিন্নমত গ্রহণযোগ্যতা পাবে অন্য অনেকের কাছে?
১)
হিজবুত তাহরি, আনসারুল্লাহ সর্বোপরি আইএস এর মত একটা জায়গায় কেন কোন ছেলে বা মেয়ে যাবে? ধর্ম বিশ্বাস তো অনেকেই করে! আমি যখন প্র্যাক্টিসিং ছিলাম, আমার মাথাতে তো আসে নাই এক্সট্রিমিস্ট হবার! আমার কোন বন্ধুদের মাথাতেও আসে না! তারা কি ‘কম মুসলমান’?
কালকেই এক মেয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সে হিজবুত তাহরির গ্রুপে অজান্তে ঢুকে পড়েছিল। ছোট বেলায় বাবা তাকে দেখতে পারে না সংসারে, ছোট বোনকে ভালোবাসে অনেক। মাকে দাদা বাড়িতে সারাজীবন মানসিক অত্যাচারে যেতে দেখেছে, নিজে প্রত্যেক মাসে একবার করে বাবার হাতে অহেতুক কারণে মার খায়! প্রেম যে করে সে ছেলেও এলেবেলে! সব মিলে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে সে এক বান্ধবীর শরণাপন্ন হয়। বান্ধবী তাকে বিভিন্ন নামাজের টিপস দেয়। একটা মেয়েলি আলোচনায় ডাকে। সেই আলোচনায় গিয়ে ছোটবেলার এক বন্ধুকেও পায়। ওখানকার আপুরা জড়িয়ে ধরে বসে তার কথা শুনে, তার কান্নার সমব্যাথী হয়! তবে ওরা একটু তাড়াতাড়ি ওকে গ্রুপে ঢুকিয়ে ফেলেছিল। আজ এই জায়গায় কাল ঐ জায়গায় মিটিং ফেলেছিল পরীক্ষার মধ্যেই। তাই একসময় ও নিজেই ত্যক্ত হয়ে ভয় পেয়ে চলে আসে।
ধরে নিলাম ওরা স্লো পয়জনিং করত। ধীরে ধীরে মেয়েটিকে গ্রুপের কাজে জয়েন করাত! কি হত?
কারেন আর্মস্ট্রং স্রষ্টার পরিবৃত্ত বইয়ে লেখা পেয়েছি, ‘ধর্ম প্রচারের একটা সোজাসাপ্টা ওয়ে ছিল পরকালে মানুষ ভালো থাকবে সেই অনুযায়ী কাজ করা’। যাতে তারা দ্বন্দ্ব না করে এই পৃথিবীতে। মানুষের অনেক দুঃখ থাকে, অনেক অপ্রাপ্তির জায়গা থাকে! তখনই সে ভাবে, এ পৃথিবী যা হবার হলো! আরেক পৃথিবীতে ভাল থাকব আমরা। (যা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত পায় নি) এবং সে আশা খুঁজে ঈশ্বরে।
আমাদের জঙ্গি গ্রুপে এই বাচ্চা, শিক্ষিত ছেলে মেয়েগুলোর জয়েন এভাবেই হয়। কেন আমরা ঐ জায়গাটা তাদের দিতে পারিনি যার কারণে তাদের দুঃখের কথা কোন বোরকা পরিহিতা মহিলার বুকে জড়িয়ে বলতে হয়? কেন আমরা সেই সময়টা তাদের দেই নি যেটা তারা খুঁজে বের করে কোন বড় ভাইয়ের মধ্যে? আপনার ক্লাস নাইনে পড়া ছেলেটা মেয়েটা কি কথা ভাবছে বা বলছে কেন সেটা আপনি নিজে জানছেন না?
জন্ম থেকেই সে তো জঙ্গি হয় না!!!!
২)
বায়াসড মিডিয়া আমাদের ঘেন্নাটা আরও বাড়াচ্ছে। আমি অনেক কওমি মাদ্রাসাতে পড়া ছেলের প্রোফাইল ঘেঁটেছি, কোন এলাকায় মুসলমান কেমনে নির্যাতিত হচ্ছে সেই নিউজ শেয়ার দিচ্ছে! দাড়ি দেখলেই কোন বিশ্ববিদ্যালয় বের করে দিচ্ছে সেই নিউজ দিচ্ছে! আবার কট্টর নাস্তিকের প্রোফাইলে দেখেছি, কোন দেশে নাস্তিককে জবাই করা হচ্ছে! পুরো ওয়ার্ল্ড সিনারিও কিন্তু আমরা দেখতে পারছি না! বাইরে দেশে দাড়িওয়ালা লোক যেমন তোপের মুখে পড়ছে, তেমনি আমার দেশের ঈশ্বর অবিশ্বাসী এবং সংখ্যালঘুরা খুন হচ্ছে এবং এখন সাধারণ মানুষও।
আমরা একপক্ষ থেকে দেখছি। অন্য পক্ষকে গালাচ্ছি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে নিজেরা কি করছি! যারা আস্তিক এবং বিশ্বাস করি ধর্ম খুন সাপোর্ট করে না! তারা খুন বন্ধ করতে কি করছি? মোটিভেট করছি?
আমরা নাস্তিকরাও কি সবাই অন্য ধর্মের বঞ্চিত লোকদের পাশে দাঁড়াচ্ছি? নাকি আমরাও চাচ্ছি, যারা আমাদের মারছে, তাদের ফাঁসি হোক, জেল হোক! তারা আইনি ভাবে মরুক!
আজ মন বলছে খুব, যে জঙ্গি আমরা দেখতে পারছি। আর ২০ বছরে পাশার দান উল্টে যাবে। এন্টি জঙ্গি গ্রুপ আসবে। তারা জঙ্গি নিধন করবে ঐ মানুষ মেরেই। পশুত্ব আর হত্যার উন্মত্ত নেশা আমাদের মনে। তাই আমরা যতই ভদ্র হই না কেন! সামান্য চোর পেলেই পিটাই।
হয়ত আমি অহিংস, রক্তারক্তিহীন একটা রেভুলেশন চাচ্ছি। কাগজে কলমে হয়ত তা অবাস্তব! কি অদ্ভুত, এক পৃথিবীর মানুষ আমরা, এক আকাশের নিচে! এক মাটিতেই হাঁটছি, এক বাতাসই ঘুরে ফিরে নিচ্ছি! অথচ প্রবলভাবে ঘেন্না করছি একে অপরকে। আসলেই অদ্ভুত তাই না?
মারজিয়া প্রভা'র ফেসবুক থেকে