বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি: প্রতিকার কোথায়?

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:৩২

জাগরণীয়া ডেস্ক

কিছুদিন আগে আহসান উল্লাহ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষক এর দিনের পর দিন তারই নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের ডিপার্টমেন্টের ছাত্রীদের  যৌন হয়রানি করার ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে। বার বার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও আগে কোন প্রতিকার পায়নি ছাত্র- ছাত্রীরা। তদন্ত কমিটি হয়েছে, ইউজিসি থেকে প্রতিনিধিও গিয়েছেন, কিন্তু ফলাফল শিক্ষক সেই আগের পদেই বহাল থেকেছেন এবং দ্বিগুণ উৎসাহে তার কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন করে, পুলিশ ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা ন্যায়- বিচার পেয়েছেন।

এবার একই ঘটনা ঘটেছে ঢাকার বনানীতে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সেখানে একটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে যেখানে লেট রেজিস্ট্রেশনের জন্য মাস্টার্স অধ্যয়নরত এক ছাত্রী ক্যাম্পাস এর ৭ তলায় গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক তার গায়ে হাত দেয় এবং জানতে চায় - ছাত্রীটি কেন তার সাথে প্রেম করলো না!

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই শিক্ষার্থী ও তার সহপাঠীরা জানান, এই শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই ছাত্রীকে উত্যক্ত করতো, বাধ্য হয়ে তার কিছু মেসেজের রিপ্লাইও দিয়েছে ছাত্রীটি। যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ২৬ তারিখে। সেদিন বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সেই ছাত্রী এবং তার অন্যান্য ব্যাচমেটরা। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন ছাত্রীটি ভয় পেয়েছিল একা অভিযোগ করতে যেতে এবং ২৩ সেপ্টেম্বর একটি ওয়ার্কশপ থাকায় ব্যাচের সবাইকে জানিয়ে অভিযোগ করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। সে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবার আশ্বাসও দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ইউজিসি প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়য় কর্তৃপক্ষের মিটিং এ ভিকটিম এবং অপরাধী উভয়ের আলাদা আলাদা সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
 
ভিকটিম এর বরাত দিয়ে তার এক সহপাঠী জানান, মিটিংয়ে বিদেশিনী ভিসি তাকে বার বার জিজ্ঞেস করেছে - কেন তুমি সেদিনই অভিযোগ করলে না? কেন তুমি সেদিনই আমার কাছে আসলে না? তিনি আরও বলেছেন- তুমি তো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করে ফেলেছো! কেন তুমি সোশ্যাল মিডিয়ায় মেসেজের রিপ্লাই দিলে! এই সময় সেদিনের সিসি টিভি ফুটেজ দেখিয়ে তাকে বার বার বলা হয়- তুমি এত স্বাভাবিক ভাবে লিফট থেকে নামলে কেন? সেই শিক্ষক তাকে বলেছে তার সাথে নামতে- এ কথা বলার পরও তারা বার বার প্রশ্ন করে যে তার সাথে তুমি এত স্বাভাবিকভাবে নামতে পারো না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ছাত্রী বলেন, "এবারও আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার মতোই কিছু ঘটতে চলেছে। যেহেতু এই ধরণের ক্ষেত্রে কোন সাক্ষী প্রমাণ দেয়া সম্ভব না, আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার ছাত্র ছাত্রীর সম্মানের চেয়ে নিজেদের সুনাম ধরে রাখতেই বেশি মরিয়া তাই অপরাধীকে শাস্তি দেবার চাইতে অপরাধ ধামা চাপা দিতেই সবাই বেশি ব্যস্ত থাকে। আর বিশ্ববিদ্যালয় মুখে যতই নিরপেক্ষ ভাব ধরুক না কেন, আদতে সে তার শিক্ষকের পক্ষই নেয়"। 

তিনি বলেন, "আগামি সোমবার ৩ অক্টোবর এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ইউজিসি দেবে। আমরা ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় আছি"।
 
ভিকটিম এর বন্ধুরা জানান, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে বিভিন্ন বিব্রতকর প্রশ্ন করা, লেট রেজিস্ট্রেশনের নামে অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগও রয়েছে। কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবি করেছেন।

হয়রানির শিকার শিক্ষার্থীরা বলেন, "এত কিছুর পরও আমরা এখনও সেই বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির উপর আস্থা রাখছি। কিন্তু আমরা কি ন্যায় বিচার পাবো? নাকি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান নামেই সফলতা অর্জন করে যাবে?"

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত