নারীদেহে আপত্তিকর স্পর্শ অপরাধ নয়!
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৮:২৮
রাস্তাঘাটে কিংবা গণপরিবহণে, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা লোলুপ হাতের আপত্তিকর স্পর্শ পাননি এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ঘর থেকে বের হলেই নানা হয়রানির আতঙ্কে ভুগেন নারীরা। এসব আপত্তিকর স্পর্শের একটা মানসিক প্রভাব নারীর উপরে পড়লেও একে অপরাধই মনে করে না শতকরা ৬০ ভাগ পুরুষ।
দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে চালানো আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার জরিপে বের হয়ে এসেছে এমন ভয়ংকর তথ্য।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ নামে ঐ সংস্থার জরিপে দেখা যায়, জনসমাগমে চুরি কিংবা ছিনতাই এর আতঙ্কে থাকেন ৪৩.৩% নারী, ধর্ষণের আতঙ্কে ভুগেন ৩১.৮% নারী, কিন্তু যৌন হয়রানির আতঙ্কে থাকেন ৮০.৯% নারী।
অন্যদিকে এসব আতঙ্কের পেছনে দায়ী যে পুরুষ তারা অনেকেই এই ধরণের কাজকে অপরাধ বলেই গণ্য করছেন না।
জরিপে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ পুরুষ নারীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা, শিষ দেয়াকে অপরাধ মনে করেন না। ৫৯ শতাংশ পুরুষ মনে করে যৌন উত্তেজক মন্তব্য কোন অপরাধ নয়। আর নারীর শরীরে আপত্তিকর স্পর্শ করাকে কোন গুরুতর অপরাধ মনে করে না ৫৯ শতাংশ পুরুষ।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, "এটা দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। পুরুষ যদি ধরেই নেয় যে এই ধরণের আচরণ কোন অপরাধ নয় তাহলে যতোই আইন প্রয়োগ করা হোক না কেন, সামাজিকভাবে তো এটাকে মেনে নেয়া হচ্ছে"।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, "এটা অত্যন্ত ভয়য়াবহ একটি অনুপাত। পুরুষতান্ত্রিকতার যে কী প্রকট প্রভাব রয়ে গেছে আমাদের মধ্যে এটাই তার প্রমাণ"।
তবে এখানেই শেষ নয়। বছর দুয়েক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ পুরুষ মনে করে, নারীদের গণপরিবহনে যাতায়াত করা উচিত নয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা তলানিতে এসব পরিসংখ্যান তারই বহিঃপ্রকাশ। তাঁদের মতে, আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মূল্যবোধের এই অবক্ষয় রোধ করতে হলে প্রয়োজন পারিবারিক শিক্ষা এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন।
সূত্র: এনটিভি