মিতু হত্যাকাণ্ডে নতুন ক্লু ‘চিরকুট’!
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০১৬, ১৬:৪২
চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার রহস্য উন্মোচনে কারাবন্দি জেএমবি সদস্য ফুয়াদ ওরফে মোঃ বুলবুলের লেখা একটি চিরকুট ফাঁস হয়েছে। নতুন এই ক্লু নিয়ে এর মাধ্যমে বুলবুলকে রিমান্ডে নিয়ে চিরকুটটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)
মঙ্গলবার (১৪ জুন) ২০১৫ সালের ২৫ মে বাকলিয়া থানার সৎসঙ্গ আশ্রম সংলগ্ন নদী থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের মামলায় বুলবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
পুলিশের ধারণা, মিতুকে হত্যা করার বিষয়ে ওই বিশেষ চিরকুটের লেখক বুলবুল গ্রেপ্তার হয়েছিল বাবুল আক্তারের হাতে। বুলবুল এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কারাবন্দি জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ফুয়াদ ওরফে মোঃ বুলবুল ফাঁস হওয়া চিরকুটে স্বঘোষিত ‘আইএস’ দাবি করা জেএমবি নেতা জাবেদকে ‘হত্যা’ এবং জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাবুল আক্তারসহ গ্রেপ্তারকারী পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানিয়েছে।
গত ৫ জুন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যার আগে চিরকুটটি অবশ্য নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছেও পৌঁছেছিল। কিন্তু এ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের আগেই নৃশংসভাবে খুন হন মিতু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফাঁস হওয়া চিরকুটে দেখা যাচ্ছে বাবুল আক্তারসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা জঙ্গিদের আছে। এখন বাবুল আক্তারকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে খুন করা হয়েছে কিনা, প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই খুন কিনা এসব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ফাঁস হওয়া চিরকুটে জাবেদের নাম জায়েদ উল্লেখ তার মৃত্যুর বিষয়ে চিরকুটে লেখা আছে- ‘ভাই, জায়েদ ভাইকে তারা গলার সঙ্গে গ্রেণেড বেঁধে দিয়ে ব্লাস্ট করে শহীদ করে দেয়। তার পেছনে বড় কারণ হল সে নিজেকে আইএস দাবি করেছিল।’
দুই পৃষ্ঠার চিরকুটের শেষ পৃষ্ঠায় দ্বিতীয় প্যারায় জায়েদকে হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিশোধে পুলিশ সদস্যদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘ভাই, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আপনারা ওই জালেম দোসরদের হত্যা করতে থাকুন এবং তাদের অফিসে গিয়ে হলেও হামলা করুন। তারা যদি ছুটিতে যায় তখন হলেও তাদের হত্যা করুন এবং প্রতিশোধ নিন।
এতে আরও উল্লেখ আছে, ‘ভাই, আপনারা ভাইদের ভুল বুঝবেন না কারণ আমি দেখেছি তাদের নির্যাতন। তাই আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে কাজ করুন।’
চিরকুটের কয়েক লাইন পরপর তাদের ভুল না বোঝার আকুতি জানিয়েছে বুলবুল।
চিরকুটটি কাকে সম্বোধন করে লেখা হয়েছে সেটি উল্লেখ না থাকলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছে, জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেই চিরকুটটি পাঠানো হচ্ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, জেএমবি যদি চিরকুটটি লিখে থাকে তবে বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে কিনা সেটা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ৫ অক্টোবর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগরে তৎকালীন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি টিম অভিযান চালিয়ে বুলবুলসহ পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ জঙ্গি হল- মোঃ জাবেদ (২৪), ফুয়াদ ওরফে মোঃ বুলবুল (২৬), সুজন ওরফে বাবু (২৫), মাহবুব (৩৫) এবং সোহেল ওরফে কাজল (৩৫)।
এদের মধ্যে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিস্ফোরক শাখার প্রধান মোঃ জায়েদ ওরফে জাবেদকে নিয়ে ডিবি আরেকটি অভিযানে গেলে সে গ্রেণেড বিস্ফোরণে মারা যায়। বুলবুলসহ বাকি ৪ সদস্যের কাছ থেকে পুলিশ জঙ্গি কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।