দেখা হচ্ছে হাসিনা-মমতার!
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০১৭, ১৪:২২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শেখ হাসিনাকে একসাথে বসানোর যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো তা সম্ভবতঃ বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে।
তিনদিনের সফরে আগামী ৭ এপ্রিল শেখ হাসিনা দিল্লি পৌঁছাবেন। সেদিনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নয়া দিল্লির রাইসিনা হিলে রাষ্ট্রপতি ভবনে এক ডিনার হওয়ার কথা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে তার সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডিনারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছেন, "তিস্তা চুক্তির ‘ডেডলক’ ভাঙতে মমতাকে ওই ডিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের একটি চিঠি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে"।
তবে মমতা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন কী না, তা জানা যায়নি। তবে তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তার আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে দিল্লিতে হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হবেন মমতা।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে আগে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে নানা পর্যায়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। এবারের সফরে প্রণবের অভিজ্ঞতা এবং মমতা ও হাসিনার সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নয়া দিল্লি ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিস্তার সমাধান করতে চায় বলে দিল্লির সরকারঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তার অংশ হিসেবেই রাষ্ট্রপতির ডিনারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মমতার পাশাপাশি বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদেরও হাসিনার মুখোমুখি বসানোর চিন্তা চলছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও মমতার আপত্তিতে সেবার তা আটকে যায়। এরপর ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ২০১৫ সালে ঢাকা এলেও তিস্তার জট খোলেনি। আশ্বাস দিয়েই বিদায় নিয়েছিলেন তিনি।
চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের আপত্তিকে বাধা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ নিয়ে বিজেপিবিরোধী নেত্রী মমতার সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে মমতা অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির দিকে অনেকখানি এগিয়ে গেছে।
কলকাতার একটি টেলিভিশনে ‘মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী’ অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, “আমি তো শুনছি ২৫ মে নাকি বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ আমি এখনো কিচ্ছু জানি না।”
এ ধরনের যে কোনো চুক্তির আগে রাজ্যের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা।
“তোমরা যদি সবকিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, স্যরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। বাংলাদেশকে যতটা হেল্প করার আমি করব, তবে রাজ্যকে বাঁচিয়ে।”
মমতার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করার আগে পশ্চিমবঙ্গসহ সব অংশীদারের সঙ্গেই আলোচনা করা হবে।