‘কেউ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে কিনা খোঁজ নিন’
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০১৭, ২২:২০
কেউ কোথাও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কি না খুঁজে বের করার এবং তাদেরকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাড়ির মালিকদেরও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ যখনই উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে; তখনই যারা ওই স্বাধীনতাবিরোধী; তারা একটা না একটা পরিকল্পনা করার তালেই আছে। একবার ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ তে যখন শুরু করল বাংলাদেশের মানুষই প্রতিহত করেছিল। এখন সময় হয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষই এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং এ ধরনের অপকর্ম প্রতিহত করবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো ঠাঁই হবে না। এর জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করবো।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই, তখন মনবেদনা কারা পায় সেটা আপনারা নিজেরাই শুনতে পাচ্ছেন, নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। যাদের খুবই মনবেদনা হচ্ছে; তারা জঙ্গিদের কিভাবে ঢাকবে, কিভাবে তাদেরকে রক্ষা করবে, কিভাবে জনগণের দৃষ্টি ঘোরাবে সেই কথাই ভাঙা রেকর্ডের মত বাজিয়ে বাজিয়ে বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যখন আমরা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে সবরকম ব্যবস্থা নিচ্ছি, যখন দেশটা এগিয়ে যায় তখনই যেন তাদের অন্তর্জ্বালা একটু বেশি শুরু হয় এবং দেশ-বিদেশে নানা ধরনের অপপ্রচার করে করে বাংলাদেশকে হেয় করার চেষ্টা করে।”
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর আমাদের তো একটা সমস্যা আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ। এ বিভীষণের যন্ত্রণা তো আমাদের ভোগ করতেই হয় সারাজীবন। আর জাতির পিতাই বলেছেন যে, এ মাটি এতই উর্বর যে ক্ষেতভরা ফসলও দেয় আবার আগাছা-পরগাছাও জন্মায়। এই আগাছা পরগাছা শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ঘুরে বেড়ায়। আর দেশের বদনাম করা, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা, দেশের কোথায় একটু গোলমাল বাঁধাতে পারবে, কোথায় জঙ্গিদের একটু মদদ দিতে পারবে সেই তালেই ব্যস্ত থাকে। এই আগাছা পরগাছা যদি তুলে ফেলে দিতে পারি তাহলে আমাদের দেশটা আরো সুন্দর হবে, আরো ভাল হবে।”
বাংলাদেশে সরকারিভাবে এবার প্রথমবারের মত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “কিন্তু আমরা কি দেখলাম? আমরা দেখলাম, একটি রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী, তারা ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করল না। তাদের পালন না করার মধ্য দিয়ে এটা ষ্পষ্ট যে, এরা একদিকে যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, অপরদিকে যারা যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, লুণ্ঠণকারী, অগ্নিসংযোগকারী, মেয়েদের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী ও যারা অপরাধী- এরা এখনও তাদেরকেই আপন মনে করে।”
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "আজকে বাংলাদেশকে কেউ আর করুনার চোখে দেখে না, সম্মানের চোখে দেখে। আজকে বাংলাদেশকে কেউ অবহেলা করতে পারে না"।
স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বিএনপি যে বিতর্ক চালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি একটা অনুরোধ করব, কে ঘোষণা দিল আর না দিল-এ তথ্য নিয়ে আর আলোচনার দরকারই নেই এই কারণে যে, আজকে মানুষের কাছে সত্যটা ষ্পষ্ট। তার থেকেও বড় কথা, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বিতর্ক তার সমাধান উচ্চ আদালতই করে দিয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষণা যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়েছেন তা উচ্চ আদালতের রায়ে ষ্পষ্ট হয়ে গেছে।”
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে শেখ মুজিবের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা একইসঙ্গে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সেদেশকে টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচে হারানোর কথাও বলেন।
তিনি বলেন, “শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, খেলাধুলায়ও …শ্রীলঙ্কার মত দেশকেও টেস্ট ম্যাচেও যেমন হারালাম, আবার ওয়ানডেতেও হারালাম। একদিকে সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযান, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে গেম। দুটোই একসাথে দেখতে হচ্ছে আর সারাক্ষণ টেনশন।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটের একটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে চলা সেনা অভিযান চলছে। সিলেটে অভিযানের মধ্যেই গত শনিবার জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে একে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ ব্যবহারের পথ ছাড়তে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সরকার এটাকে (জঙ্গিবাদ) আসলে সমাধান করতে চায় না। তারা এটাকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। জঙ্গিবাদ যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার না হয়,সেই আহ্বান আমরা জানাচ্ছি।”
বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন,“সঠিক সত্য অনুসন্ধান না করে,তদন্ত না করে যদি প্রথমেই এই ধরনের উক্তি করা হয়,যাদের জড়ানো হচ্ছে,তাদেরকে যদি হত্যা করা হয়,তাহলে কোনো দিনই সত্য উদঘাটন হবে না।”