যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ব্রিটিশ এমপি জো কক্সের খুনি
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৩৩
যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির জনপ্রিয় এমপি জো কক্সকে হত্যার ঘটনায় উগ্র জাতীয়তাবাদী এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সাত দিন শুনানির পর বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে ব্রিটিশ আদালত।
ব্রেক্সিট ভোটের মাত্র সাত দিন আগে গত ১৬ জুন ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের ব্রিস্টলে একটি লাইব্রেরির কাছে গুলি করে ও ছুরি মেরে হত্যা করা হয় জো কক্সকে। বের্নার্ড কেনি নামের ৭৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ওইসময় কক্সকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরি মারেন হামলাকারী।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারী টমাস মেয়ারকে গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্তে দেখা যায়, উগ্র বর্ণবাদী মেয়ার পরিকল্পনা করেই কক্সকে হত্যার ছক কাটেন। মেয়ারের শোবার ঘরে নাৎসি আমলের বেশ কয়েকটি বইয়ের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। বইয়ের তাকের কোনায় ছিল থার্ড রাইখের সোনালী ঈগল আর স্বস্তিকা চিহ্নের রেপ্লিকা। তদন্ত কর্মকর্তারা মেয়ারের ইন্টারনেট কর্মকাণ্ডও খতিয়ে দেখেন। খুনের আগে মেয়ার ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি, ক্লু ক্লুক্স ক্ল্যান, বর্ণবাদ, খ্যাতনামা ইহুদি ব্যক্তিদের প্রোফাইল ঘাঁটাঘাটি করেছিলেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বিচারক তার রায়ে বলেন, আসামি মেয়ারের অপরাধের যে গুরুত্ব, তাতে তার বাকি জীবন হয়ত কারাগারেই কাটাতে হবে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান সু হেমিং বলেন, ঘৃণার বশে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো এ হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই সন্ত্রাসবাদের চেয়ে কম নয়।
অন্যদিকে মেয়ারের আইনজীবী রিচার্ড হুইটম্যান বলেন, বিচারক তার রায়ে মেয়ারের অপরাধকে সন্ত্রাসী কাজ বললেও, তাকে সন্ত্রাসবাদী অ্যাখ্যা দেননি।
আদালতে এক লিখিত বক্তৃতায় জোর স্বামী ব্রেন্ডন কক্স বলেন, খুনির বিষয়ে তাদের পরিবারের কোনো বক্তব্য নেই।
গার্ডিয়ান লিখেছে, আসামি টমাস মেয়ার এই বিচার প্রক্রিয়ায় আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো চেষ্টা করেননি। ৫৩ বছর বয়সী ওই সাবেক মালিকে রয়টার্স বর্ণনা করেছে একজন নাৎসি সমর্থক হিসেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয় বিচার চলাকালে মেয়ার তার অপরাধ স্বীকার কিংবা ক্ষমা চাইতে রাজি হননি। রায় ঘোষণার দিন কিছু বলতে চাইলেও বিচারক তাতে সাড়া দেননি। যাবজ্জীবনের সাজা শুনে এবং পরে কারাগারে পাঠানোর সময়ও মেয়ার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
বিবিসি লিখেছে, আদালতের রায়ের পর কেবল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মেয়ারকে ক্ষমা করতে পারে। তা না হলে তাকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে।
এ হত্যাকাণ্ডে মেয়ারের সঙ্গে আর কেউ জড়িত ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খুনের আগে যে বা যারা মেয়ারকে অস্ত্র দিয়েছে তাদেরকে খুঁজতে বুধবার রাতভর অভিযান চলেছে বলে টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
কক্সকে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি এক বছর আগে বৈধ মালিকের কাছ থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিকে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কক্সের পরিবার শোকের সময়ে তাদের পাশে থাকার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
জোর স্বামী ব্রেন্ডন কক্স বলেন, “হত্যার দিন থেকে শুরু করে এরপর প্রতিটি সময় হাজার হাজার মানুষ আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটাই ব্রিটেন”।
লেবার পার্টির শীর্ষ নেতা জেরেমি করবিন রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কক্সকে হত্যার ঘটনা ছিল ‘গণতন্ত্রের ওপর আঘাত’। দলের অন্য সংসদ সদস্যদের কক্সের আদর্শ অনুসরণ করে ঘৃণা ও বিভক্তির কবর রচনা করার আহ্বান জানান করবিন।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রুড বলেন, "কক্সের হত্যাকাণ্ড ছিল জঘন্য ও নির্মম অপরাধ। উগ্র ডানপন্থি মতবাদ এবং তাদের কারণে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যেসব ক্ষত তৈরি হয়েছে তা দূর করতে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।”
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থাকার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন জো কক্স। নিজের নির্বাচনী এলাকা ব্রিস্টলে এ বিষয়ে একটি বৈঠক করার প্রস্তুতির সময়ই রাস্তার ওপর হামলার শিকার হন তিনি। কক্সের মাথায় ও বুকে গুলি করার পর হামলাকারী টমাস মেয়ার অন্তত ১৫ বার তাকে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় মেয়ার বেশ কয়েকবার চিৎকার করে বলেন, ‘পুট ব্রিটেইন ফার্স্ট’।