ট্রাম্পের বিজয়ের ৫ কারণ
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৬, ২১:২৯
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে হোয়াইট হাউজের পথ নিশ্চিত করেছেন নানা কারণে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত হওয়া রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তার এই বিজয়কে বলা হচ্ছে অপ্রত্যাশিত বিজয়। অনেকেই ভেবেছিলেন যে ট্রাম্পের পক্ষে এই নির্বাচনে জেতা দূরের কথা তার পক্ষে প্রতিযোগিতায় থাকাই সম্ভব না। তাহলে কিভাবে জয়লাভ করলেন তিনি?
অনেকের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত এই জয়ের পেছনে কি কারণ কাজ করেছে তা খুঁজে করার চেষ্টা হয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, এমন পাঁচটি উপায়ে তিনি নির্বাচনে জিতেছেন, যা ছিল অনেকের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুর্বোধ্য।
এগুলো হলো- ট্রাম্পের ‘শ্বেত জোয়ার’, বিতর্ক ও কেলেঙ্কারির পরেও অবিচল থাকা, রাজনীতিতে ‘বহিরাগত’ হয়েও কাউকে পাত্তা না দেওয়া, হিলারির ই-মেইল নিয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তৎপরতা এবং নিজের ধারণার উপর ট্রাম্পের আস্থা।
ট্রাম্পের ‘শ্বেত জোয়ার’
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে একের পর এক হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের রাজ্যগুলো চলে গেল ট্রাম্পের দখলে। হিলারি ক্লিনটনের ব্লু ফায়ারওয়াল ভেদ করে এই বিজয় ছিনিয়ে নিলেন ট্রাম্প।
মধ্যপশ্চিমাঞ্চলে তার শক্তির উপরই ডেমোক্রেটদের শেষ ভরসা ছিল। মূলত কালো এবং সাদাদের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের উপর ভিত্তি করে ওই রাজ্যগুলোতে কয়েক দশক ধরে গেঁড়ে বসেছিল ডেমোক্র্যাটরা।
এবার ওই সব সাদা শ্রমিকরা- বিশেষ করে কলেজের দোরগোঁড়া না পেরনো নারী ও পুরুষরা- দলবেঁধে দলকে পরিত্যাগ করেছে।
ভোট পড়েছে বেশি গ্রামীণ মানুষের। তারা ওই সব আমেরিকান যারা কায়েমি শক্তির কাছে নিজের অবহেলিত বোধ করেছেন এবং উপকূলীয় অভিজাতদের পেছনে পড়েছিলেন। তারা নিজেদের পক্ষের মানুষের আওয়াজ শুনেছেন।
যেখানে ভার্জিনিয়া ও কলোরাডোর মতো জায়গায় ঘাঁটি শক্ত থাকলেও উইসকনসিনের পতন হয়েছে; সঙ্গে মিসেস ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নও।
যেসব জায়গায় দরকার ছিল, সেগুলোতে জোরালো আঘাত হেনেছে ট্রাম্প-জোয়ার।
বিতর্কে ও লড়াইয়ে সফল
ট্রাম্প যুদ্ধফেরত সাবেক সেনা কর্মকর্তা জন ম্যাককেইনকে অপমান করেছেন; ফক্স নিউজ ও এর জনপ্রিয় উপস্থাপক মেগান কেলির সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়েছেন।
শিরোপা জয়ী হিস্পানিক সুন্দরীর ওজন নিয়ে কীভাবে মশকরা করেছেন, তা জানতে চাইলে ট্রাম্প বিপুল উদ্যমে আরও বাড়িয়ে বলেছেন।
নারীদের প্রতি নিজের অভদ্রোচিত যৌন আচরণের বিষয়ে হাস্যরসের সঙ্গে তার কথাবার্তার গোপন ভিডিও প্রকাশ পেলে তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন।
এগুলোর কোনো কিছুই তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সম্ভবত এসব বিতর্ক এতো শক্ত ও দ্রুতগতির ছিল যে সেগুলো রক্তক্ষরণের সুযোগ পায়নি। সম্ভবত ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব ও আবেদন এতোটাই জোরালো ছিল, যে ওই সব কেলেঙ্কারি তার গায়ে বাড়ি খেয়ে ফিরে গেছে।
কারণ যাই হোক, ট্রাম্প ছিলেন ‘বুলেটপ্রুফ’।
‘রাজনৈতিক অভিজাত'দের বিরুদ্ধে একা
আবাসন ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে শুধু নয় নিজের দলের যারা ক্ষমতাসীন তাদের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছেন এবং সবাইকে পরাস্ত করেছেন।
প্রাইমারিতে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মার্কো রুবিও, টেড ক্রুজ ও জেব বুশসহ দলের সুপরিচিত অনেক নেতাকে পথ থেকে তিনি হঠাতে পেরেছেন, যাদের কেউ কেউ তার বশ্যতা স্বীকার করেছেন। কেউ কেউ এখন দলের যোগাযোগেই নেই।
এমনকি হাউজ স্পিকার পল রায়ান থেকে শুরু করে দলের বাকি নেতাদেরও সহায়তা লাগেনি তার। বাস্তবে হয়তো তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার দৃঢ়তাই হয়তো তাকে জিতিয়ে দিয়েছে।
কাউকে ‘পাত্তা না দেওয়ার’ ট্রাম্পের এই মনোভাব তার স্বাতন্ত্র্য ও বহিরাগত অবস্থান এমন সময়ে প্রকাশ করেছে যখন বেশিরভাগ আমেরিকান ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ।
এই মনোভাব ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্স ও টেড ক্রুজের মতো আরও কয়েকজন জাতীয় রাজনৈতিক ধরতে পেরেছিলেন। তবে হোয়াইট পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ট্রাম্প ছাড়া আর কেউ এটাকে কাজে লাগাতে পারেনি।
কোমি ফ্যাক্টর
নির্বাচন নিয়ে বিশেষ করে, মধ্যপশ্চিমাঞ্চলের রাজ্যগুলোর অবস্থা নিয়ে জরিপগুলোর আভাস ছিল দুঃখজনক। অবশ্য শেষ দিকে এসে ট্রাম্পের বিজয় পথ নিয়ে জরিপগুলো কাছাকাছিই ছিল।
তবে দুই সপ্তাহ আগেও ট্রাম্পের এই বিজয়ের পথ ততোটা স্পষ্ট ছিল না। হিলারির ব্যক্তিগত ইমেইল সার্ভারের বিষয়ে এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি নতুন করে তদন্তের কথা ঘোষণা করার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
জরিপে জোরালো প্রতিযোগিতার আভাস থাকলেও কমির ওই চিঠি এবং পরে তদন্ত শেষ হলে দেওয়া চিঠির এই সময়ের মধ্যেই ট্রাম্প শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। অন্যদিকে হিলারির প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশা ধূসর হয়েছে।
তবে অবশ্যই কোমির এই তৎপরতা হিলারির জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতো না, যদি তিনি সরকারি কাজে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মেইল সার্ভার ব্যবহার করতেন। এটা পুরোটাই তার নিজের দায়।
নিজের ধারণায় আস্থা
ট্রাম্প এ যাবতকালের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক প্রচারণা চালালেও প্রমাণ করেছেন, তিনি সব অভিজ্ঞদের চেয়ে ভাল জানেন।
তিনি নির্বাচনী পর্যালোচনার চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন হ্যাট বিক্রিতে; সফর করেছেন উইসকনসিন ও মিশিগানের মতো রাজ্যগুলো, যেগুলোকে পণ্ডিতরা দুর্গম বলেছিল।
মানুষের দ্বারে দ্বারে না গিয়ে তিনি বড় বড় সমাবেশ করে ভোটারদের ঘর থেকে বের করে এনেছেন।
তার জাতীয় রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল অসংগঠিত, যার চেয়ে অগোছালো কোনো সমাবেশ আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি।
নির্বাচনে ক্লিনটন শিবিরের চেয়ে অনেক কম খরচ করেছেন তিনি। একই অবস্থা ছিল প্রাইমারির ক্ষেত্রেও। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কীভাবে জিততে হয় তা নিয়ে প্রচলিত ধারণাই পাল্টে দিয়েছেন তিনি। তার এসব ধারণা ‘বিজ্ঞদের’ কাছে হাসিঠাট্টার পাত্র হয়েছিল।
তবে দিন শেষে তার এসব ধারণাই কাজে দিয়েছে। ট্রাম্প এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু- তার সন্তান ও কতিপয় মনোনীত উপদেষ্টারাই হোয়াইট হাউজের ভেতর থেকে শেষ হাসি হাসবেন।
সূত্র: বিডিনিউজ২৪