জার্মানির নারী ফুটবলারদের সংগ্রামের কথা

জার্মানিতে নারী ফুটবল খেলার ইতিহাস সত্যিই বেশ মজার একই সঙ্গে উদ্দীপনারও বটে। এখানেও নারীদের সংগ্রাম করতে হয়েছে স্বীকৃতি পেতে। মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক বাধার। সবকিছু পেরিয়ে আজ নারীদের ফুটবল একটি সম্মানজনক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রথম ফুটবল ক্লাব
একটা মজার ঘটনা দিয়েই জার্মানিতে নারী ফুটবলের ইতিহাসের সূচনা। তখন ১৯৩০ সাল। ফ্রাংকফুর্টের ১৯ বছর বয়সি লটে স্পেখ্ট বাবার সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। কিন্তু কি কারণে যেন বাবার ওপর রাগ করে তার সঙ্গে ফুটবল খেলা বাদ দিলেন লটে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন,কারা কারা আমার সঙ্গে ফুটবল খেলতে চাও? অবাক হওয়ার মত ব্যাপার,৪০ জন মেয়ে তাতে সাড়া দিলো। তাদের সঙ্গে নিয়েই লটে স্পেখ্ট গড়ে তুললেন জার্মানির প্রথম নারী ফুটবল ক্লাব। মেয়েরা ফুটবল খেলছে,তা দেখেই পুরুষদের সেকি নাক সিটকানি! কিন্তু শুরুতে গা করে নি লটে আর তার বান্ধবীরা। তবে বছর খানেক বাদে আর ফুটবলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এসব মেয়েরা। এভাবেই নারী ফুটবলারদের শুরুটা আপাতত চাপা পড়ে যায়। কিন্তু ফুটবলের প্রতি কিন্তু তাদের উৎসাহ থেমে থাকেনি। পুরুষদের পাশাপাশি জার্মান নারীরাও ফুটবল দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে,সমর্থক বনে গেছে।

বাধা এবং নিষেধাজ্ঞা
১৯৫৪ সালে প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে তখনকার পশ্চিম জার্মানি। গোটা জার্মানিতে তখন উৎসব বয়ে যায়,যাতে অংশ নিয়েছিল নারীরাও। সেই সুযোগে আবারও নারী ফুটবল জেগে ওঠার চেষ্টা করলো। গঠিত হলো জার্মানির প্রথম নারী ফুটবল দল। কিন্তু মেয়েদের এভাবে মাঠে ছুটোছুটির বিরোধিতা করে বসলো জার্মান সমাজ। আর তাদের সঙ্গে গলা মেলালো এমনকি জার্মান ফুটবল সংস্থাও। জার্মানির ফুটবল সংস্থা থেকে নিষিদ্ধ করা হলো এই নারী দলকে। এমনকি জার্মান জাতীয় দলের কোচ সেপ হেরবের্গার বলে বসলেন,ফুটবল মেয়েদের জন্য নয়,কারণ এটা পরিশ্রমের ব্যাপার।

সাফল্য ও স্বীকৃতি
কিন্তু এরপরও দমে যায়নি জার্মানির নারী ফুটবলাররা। ফুটবল মাঠে তারা ছিলেন। কয়েক দশক পর বার্লিনের প্রাচীর পতনের যুগে গোটা জার্মান সমাজ যখন নতুন করে পথ দেখছে,তখন নারী ফুটবলাররাও দুর্দান্ত এক সাফল্য নিয়ে এলো। সবাইকে চমকে দিয়ে ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মত ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হলো জার্মানির নারী ফুটবল দল। জার্মান নারীদের এই সাফল্য সত্যিই ছিল এক অভাবনীয় ব্যাপার। তাদের অভিনন্দন জানাতে তৎপর হয়ে উঠলো জার্মান ফুটবল সংস্থা। তাড়াহুড়ো করে কোনমতে টাকা পয়সা জোগাড় করে তাদের অভিনন্দন দেওয়া হলো। সেই অনুষ্ঠানে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন জার্মান নারী ফুটবলাররা কী পেয়েছিলেন জানেন? একটি করে কফি মেশিন এবং ডিনার সেট! ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই পুরস্কার! তবে এরপর থেকে আর পেছনে ফেরেনি জার্মান নারী ফুটবল,বরং সামনে এগিয়ে গিয়েছে। তাই ২০০৩ ও ২০০৭ সালের দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মান নারীরা।

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক
সূত্র: ডয়চে ভেলে