কালজয়ী কমলা
প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৭, ০০:১১
১৯৬১ সনের ১৯শে মে যখন ভাষা ছিল বাঁধনের ঘেরাটোপে তখন সত্যাগ্রহের ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছিলেন ১১জন শহীদ। শচীন্দ্র, সুকোমল, সুনীল, হিতেশ, বিরেন্দ্র, সত্যেন্দ্র, তরণী, কানাই, চণ্ডীচরণ, কুমুদ, ও কমলা। এদের নাম চির অমর। রাজ্য সরকারের নির্দেশের কাছে হার না মেনে নিজের অধিকারের দাবিতে গণসংগ্রামী আন্দোলনে রক্ত গঙ্গা ঝরিয়ে আমাদের প্রিয় ভাষাকে মুক্ত করে গেছেন তারা। এই বরাক তাই আজীবন ঋণী হয়েই থাকবে তাদের রক্তের কাছে।
শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি মিলিয়ে আমাদের এই বরাক উপত্যকা আর এই বরাকেরই মেয়ে আমাদের কমলা... কমলা ভট্টাচার্য, যে তার স্বল্প বয়েসেই আমাদের দিয়ে গেছে তার আদর্শ, তার উদারতা, তার সাহস, তার চেতনা। কিন্তু আমরা কি তার শেখানো সব আদর্শ মেনে প্রতিবাদ করতে শিখেছি আদৌ? না, আজ সত্যিই আমরা অপারগ। আজ আমরা দুঃখিত, লজ্জিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত। আজও ঘটে যায় এই কমলার মাটিতে ধর্ষণের মত অমানবিক অত্যাচার। আজও ঘটে নারী নির্যাতন এই কমলার মাটিতেই। আজও মেয়েদের শুনতে হয় তারা অক্ষম, তারা কুলাঙ্গার, তারা মেয়ে নামের কলঙ্ক এই কমলারই মাটিতে। আর এইসব মেনে নিয়েও আজ আমরা নির্বিকার। এই কমলার মাটিতেই আজ আওয়াজ ওঠালে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে লোকে আমাদের মন্দ বলে, বলে ক্যারেক্টারলেস, বলে ফেমিনিস্ট!
ধিক্কার জানাই এই সমাজকে যা আজ আরও দশ জন কমলাকে তৈরি করতে পারেনি, পারছে না তাদের মত করে কারণ তারা আজ নিপীড়িত, কিছু বলার সাহস এবং ক্ষমতা সবই হারাতে বসেছে। করুণাই হয় যে কমলাও আজ তৈরি করে দিয়ে যেতে পারেননি গোটা শয়েক কমলা। অথচ এই বরাক এই খুদে ১৬ বছরের মেয়েটির কাছে আজ ঋণী। যে মেয়েটি আরও দশ জন শহীদদের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে আমাদের বাংলা ভাষা রক্ষা করতে এক পাও পেছায়নি, সেই একমাত্র মেয়েটির বরাকেই আজ নারীর আর্তচিৎকার শুনতে পাই আমরা। এই নির্যাতিতদের আওয়াজ বন্ধ করতে জন্মাবে কি আরও কমলা?
নাকি আমরা আজ এতো বছর পরেও রয়ে যাবো চুপ? কমলার আদর্শে উত্তীর্ণ যে হতেই হবে, ধরতে হবে হাল সেই ৬১'র মত প্রতিটি মেয়েকে। জেগে উঠুক এক একটি ঘরে এক একটি কমলা। ঘুচে যাক সব কালিমা, গর্জে উঠুক আজ আওয়াজ, হোক কলরব জয়ের। তবেই না সফলতায় উৎসর্গ করা হবে আমাদের কমলার আত্মবলিদান।
লেখক: লেখক ও আলোকচিত্র সাংবাদিক