জঙ্গিবাদ নির্মূলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত যখন আমাদের
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০১৭, ১৭:৪১
খুব অবাক হই যখন বাচ্চা ছেলে/মেয়েদের দেখি দাড়ি টুপি/হিজাবে আবৃত হতে বা ধার্মিক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে। আপনি বলতেই পারেন এটা তাদের চয়েস। কিন্তু এই চয়েস আপনা আপনি আসেনি, কারো কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই এসেছে। এখন এই উদ্বুদ্ধকরণে কার বা কাদের হাত আছে সে ব্যাখ্যায় নাই বা গেলাম। ব্যাখ্যা করতে না চাইলেও কথা তো কিছু থেকে যায়ই। প্রতিটি মানুষ নিশ্চয়ই জিহাদি হবার ট্রেনিং নিয়ে জন্মায় না, তাদের মগজ ধোলাই করা হয়। পাড়ায় পাড়ায় ইসলামী আলোচনার নাম করে কি আলোচনা হচ্ছে তা কি আমাদের দেশের সুশীলরা কখনো জানার চেষ্টা করেছেন?
প্রতিটি অভিভাবক চান যে তাদের সন্তান ধার্মিক হোক বা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুক। সন্তানের সাথে সাথে অবিভাবকেরও এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলে কে কার চেয়ে বেশি ধার্মিক। এই ধর্মের রেসে জিততে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের সমাজ। অভিভাবকরা কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন একজন ধার্মিক সন্তান গড়ে তোলার লক্ষ্যে। আদৌ তারা মানুষ হচ্ছে কিনা তা দেখা অভিভাবকের দায়িত্ব বোধহয় নয়। সন্তান ধার্মিক এবং পড়ালেখায় ভাল হলে অভিভাবকদের আর কিছু দেখার ইচ্ছে জাগে না। অভিভাবকদের মগজ ধোলাই এবং চোখে পট্টি পরানোর জন্যও রয়েছে একদল। সমাজে ভাল চরিত্রের সার্টিফিকেট পেতে তাই সকলের ব্যস্ততার সীমা নেই। দু’ দশক আগেও কিন্তু এই ধর্মীয় সার্টিফিকেট পাবার জন্য কারো প্রাণ এত আকুল হয়ে ওঠেনি।
আমরা এতই স্বার্থপর যে আমরা নিজেরা দেশের উপকার অপকারের কথা মাথায়ই রাখি না। এই স্বার্থপরতায় আমাদেরও একদিন পিছিয়ে পড়তে পড়তে বিলীন হতে হবে সে খেয়াল এই পশ্চাদপরায়ন জাতির নেই। কারন ক্ষতি এখনো নিজের ঘরে হয়নি।
খেয়াল করলে বোঝা আরো সহজ হয়ে যায়, জঙ্গি হামলার শুরু কিন্তু আমাদের অতি ধার্মিকতা প্রকাশের সময় থেকেই। আপনি ধর্মপালন বা পোশাককে এখন আর চয়েসের মধ্যে কিভাবে সীমাবদ্ধ রাখবেন যখন জঙ্গিবাদের সূত্রপাত সেখান থেকেই!
তার মানে এটাও বলছি না যে ধার্মিক মাত্রই জঙ্গি, কিন্তু এই নব্য ধার্মিকতার দোহাই দিয়ে কই কখনো তো কেউ মানবতার কথা বলেন না! এটা বলেন না যে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী তৈরীর কারখানা বন্ধ করার উদ্যোগ আমরাই নেবো। তা বলতে কখনোই শুনিনি। কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনারা এর সমর্থন করেন বা সাফাই গেয়ে চলেন।
এ প্রসঙ্গ তুললেই একদল তেড়ে আসবেন ইসলামোফোব বলে। প্রথম প্রথম আপনি কিছু সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যথিত, ক্ষুব্ধ হবেন, ধীরে ধীরে সেগুলো যখন দৈনন্দিন কার্যকলাপে পরিণত হবে আর আপনার স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যহত হবে তখন আপনি কি করবেন? ব্যথিত হবেন? না ভয় পাবেন এই ভেবে যে আমার ঘরে বা পাশের ঘরে যে কোন মুহূর্তে জঙ্গি হামলা হতে পারে। তখন তো সবার অবস্থা ইসলামোফোবদের মতই হবে।
এই যে ধর্ম বা পোশাকের চয়েসের উদ্বুদ্ধকরণের ফলাফলস্বরূপ সূক্ষ্মভাবে দেশে যে অসমতা, বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা কিন্তু এখন কোনমতেই আর সূক্ষ্ম নেই। কালসাপ হয়ে ছোবল মেরেছে যা খোলা চোখে আপনার আমার দেখতে অসুবিধা হচ্ছে না। সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ক্ষতির হিসেব খাতা উপচে পড়া শুরু করেছে ইতিমধ্যে।
এত হতাহত ক্ষয়ক্ষতির পর আমরা তবে এখনো কি বলতে পারি, 'চয়েস ইজ ইওরস'?
না বলতে পারি না। অন্ততপক্ষে আমার বিবেক সায় দেয়না। চয়েস আমাদের হাতে। আসুন সকলে মিলে জঙ্গিবাদ নির্মূল করি, বিভেদ দিয়ে নয় বা এই বলে নয় যে অমুক ধার্মিক, তমুক বিধর্মী। আসুন সকলকে সমান চোখে দেখি। ধার্মিক মানেই সে দেবতাসুলভ এ ভাবনার অবসান ঘটাই। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রকাশ্যে বিরোধিতা করি। তাতে একদল মনোক্ষুন্ন হলেও দেশ রক্ষা হবে। আসুন শঠতা চিনি। অতি ধার্মিকদের খুশি করে হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আপত্তিজনক কথাবার্তা বলা মানুষ, যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন তাদের প্রতিরোধ করি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আমরা কিন্তু ছিনিয়ে নিয়েছিলাম ক্ষমতাধরদের হাত থেকেই, আর সেটার নাম পাকিস্তানি ক্ষমতাধররা দিয়েছিল ইসলামের বিরুদ্ধে অপশক্তির লড়াই। একাত্তরে পারলে আমরা এখন পারবো না কেন? আমরা কম কিসে!
লেখক: সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ফিনান্সিয়াল এনালিস্ট ও ট্রাভেলার