নারীবাদ বনাম পুরুষবিদ্বেষ

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০১৬, ২৩:২১

নারীবাদ
নারীকে মানুষ হিসেবে সকল ক্ষেত্রে তার ন্যায্য অধিকারের দাবি নিয়ে কথা বলাই হল নারীবাদ। এর জন্য যারা কথা বলেন তারাই নারীবাদী।

নারীবাদীরা পুরুষ ছাড়া দু'কদম চলতে পারে না
যারা বলেন নারীবাদীরা পুরুষ ছাড়া দু'কদম চলতে পারে না, তারা আসলে নারীবাদ বলতে পুরুষ-তন্ত্রের ঠিক উল্টো পিঠ বুঝেন। তারা ভাবেন নারীবাদীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করলে নারীরাও হবে পুরুষের মত শাসন ও শোষণকারী অত্যাচারী জাতি। তারা ভাবেন নারীবাদ মানেই সকল ক্ষেত্রেই পুরুষের স্বৈরাচারী ক্ষমতার মত নারীর ক্ষমতায়ন। সেই ভয়ে নারীবাদীদের মুখ বন্ধের জন্য তারা এরকম বুলি আওড়ান। এরাই আসলে আসল নারী-বিদ্বেষী এবং পুরুষ-তন্ত্রের ধারক বাহক। নারীবাদীরা কখনোই পুরুষকে ফেলে দিয়ে তাদের একার সমাজ তৈরি করার কল্পনা করেন না। তারা চায় পুরুষতন্ত্রের প্রয়োগকৃত নারী বিরোধী নিয়ম গুলো বন্ধ হোক, নারী পুরুষের পারস্পরিক সমান অধিকার প্রাপ্ত হয়ে পাশাপাশি সহবস্থান করুক।

নারীবাদীরা নিজেদের সবকিছুতেই পুরুষের সাথে তুলনা করে
সমাজের মানুষ প্রধানত দুই প্রজাতির (সঙ্গত কারণেই আমি তৃতীয় লিঙ্গের কথা এখানে টানছি না), নারী ও পুরুষ। পুরুষ তো কখনো নিজের কোন অধিকারের ব্যাপারে নারীর সাথে নিজেকে তুলনা করে না। কেন? কারণ তারা সব ধরনের অধিকারের সুযোগ সুবিধে এমনিতেই ভোগ করে। নারী পরিপূর্ণ মানুষ হয়েও সেগুলো থেকে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে তুলনটা কার সাথে হবে? নারীর সাথে পুরুষের? নাকি কুকুর বেড়াল গরু ছাগলের?

নারীবাদ ভাল, কিন্তু পুরুষকে শত্রু ভাবলে বিবাদ অনিবার্য
নারীকে শত্রু বিবেচনায় রেখেই তো পুরুষ-তন্ত্র তাদের সুবিধে মত শত কোটি নিয়ম বানিয়ে রেখেছে। তবে কেন কোন কোন নারী 'পুরুষ' নামক অবিবেচক অত্যাচারী মানুষকে শত্রু ভাবার অধিকার রাখে না?  নারীবাদী হতে হলে অত্যাচারী আর নিপীড়ক কে মুখে মধু এবং গায়ে ফুল চন্দন মাখিয়ে দিলেই কি তা হবে তা সহি নারীবাদ? হাজার হাজার বছরের অন্যায়-অবিচারের সাথে প্রতিদিনের ধর্ষণ, এসিড ছোঁড়া, হত্যা, যৌতুকের জন্য অত্যাচার, প্রতারণা, বহুবিবাহ, বহুগামিতা, নারীকে নিজের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যেতে বাধ্য করা, নারী পাচার, পতিতালয়ে বিক্রি, সম্পত্তি হরণ, তাদের জন্য বানানো অন্যায় আইন, এগুলো ভেবে কেউ যদি পুরুষকে ঘৃণা করে শত্রু ভেবে বসে কি খুব বেশি ভুল হয়ে যাবে? আমি বলি কি- যারা এই বিষয় গুলো বুঝতে পেরেও 'নারীবাদ মানে পুরুষ বিদ্বেষ নয়' বলেন তারা একটু হলেও মনে মনে লজ্জিত হওন। 

নারীবাদ টিকে আছে পুরুষ-তন্ত্র পুঁজি করে
নারীকে যখন পুরুষ নামক প্রজাতিটির মানুষেরা নির্যাতনের মাধ্যমে অধিকার হরণ করবে, তখন প্রতিবাদটা পুরুষ এবং তাদের দ্বারা তৈরিকৃত তন্ত্র 'পুরুষ-তন্ত্রের' বিপক্ষেই হবে। কোন হাতি ঘোড়া ডাইনোসর তন্ত্রের বিপক্ষে হবে না। পুরুষ-তন্ত্রই টিকেই আছে নারী নিপীড়নকে পুঁজি করে। এক্ষেত্রে তারা এই অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নটা না করলে নারীবাদ এর প্রসঙ্গ আসার প্রশ্নই আসে না।

লেখক: প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত