সোনার বাংলার সোনার মানুষ

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০১৬, ২১:০৯

আমাদের দেশের যুব সমাজের জন্য উন্নত বিকশিত ও পরিকল্পিত চিন্তা করা প্রয়োজন, যাতে যুব সমাজের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চার হয় । বর্তমান সময়ে কেন যুব সমাজের মধ্যে মানুষকে কুপিয়ে মারার এ রকম ধ্বংসাত্মক আত্মঘাতি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে তা ভেবে দেখে এদেরকে রক্ষার স্বার্থে কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ দরকার।

আমাদের দেশটিকে নিয়ে গর্ব করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে সোনার বাংলা বলেছেন, তিনি দেশের সীমানা নয় দেশের মানুষকে ভালবেসেছেন। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে এত ভালবাসতেন, যে জন্য তিনি নিজের সুরক্ষার জন্যেও এতটুকু চিন্তা করেননি (বাঙালিকে তিনি আমার বাঙালি বলে সম্বোধন করতেন)। এই সোনার বাংলার মানুষেরাও সোনার মানুষ। সোনার বাংলার সোনার মানুষেরা কেন প্রতি মুহূর্তে জীবনের হুমকির মধ্যে থাকবে? আর যারা হুমকি দেয় আর হত্যা করেও হত্যার শিকার হয় তারাও কিন্তু সোনার মানুষই ছিল। শুধু কারা যেন এই সোনার মানুষদেরকে পায়ে ঠেলে অবহেলা করে করে এদেরকে ধারালো অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে।

এটি নির্মম কারো কাজ, মানুষের কাজ নয়।

এদেশের ঐশী, সুমন, শরীফ, ফাহিম, নাফিজ, হেমায়েত হোসেন এবং অসংখ্য সোনার ছেলে মেয়ে ধারালো অস্ত্রের মত ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহৃত যারা হয় তারা জানেও না তারা কেন ব্যবহৃত হচ্ছে। উন্নত পরিকল্পনার অভাবে তাদেরকে ব্যবহার করা সহজ হচ্ছে।

এদেশের ছেলেমেয়েগুলো বড় অসহায়। গরীব মানুষের ছেলেদের সামনে একটি উন্নত মিথ্যা ভবিষ্যতের স্বপ্ন তুলে দিয়ে বর্তমানকে কুপিয়ে হত্যা করার শিক্ষা যারা দেয় তারা মানুষ না তারা পিশাচ। এই পিশাচদের মুখোশ উন্মোচন হবে না কখনও। এই ছেলেগুলো তাদের সামনে কিছু দেখছে না। তাদের সামনে কোনো সক্রেটিস নেই, অ্র্যারিস্টটল নেই, ডিরোজিও নেই, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নেই, মানবতাবাদী এম এন রায় নেই, সুভাস বসু নেই এবং আরো আদর্শস্থানীয় কেউ নেই। যাদেরকে তারা সামনে দেখে তারা স্বার্থচিন্তার আত্মধ্বজা উড়িয়ে উড়িয়ে এগিয়ে চলছে।

আমাদের দেশের এতটুকু এতটুকু বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলিকে আলোর মুখ দেখানো দরকার। পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের জন্য কর্মসংস্থান অথবা বেকার ভাতার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ ছাড়া যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে না। তাদের সামনে উন্নত ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় দিগন্ত খুলে না দিলে রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে কুকুরের মত ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলে কোনো লাভ হবে না। অথবা আরো দুয়েকটা জেলখানা বানিয়েও কুলানো যাবে না।

আমাদের দেশের অবকাঠামোগত বিষয় সব দিক থেকেই সোনা ঝলমলে লাবণ্যে পূর্ণ হয়ে আলোকিত এবং বিকশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে। কিন্তু যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা নেই। এদেশের সোনার মানুষদের সোনা করে গড়ে তোলা দরকার। সেজন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদেশের মত পার্ট টাইম ফুল টাইম কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাটা জরুরী।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত