নারীর প্রকৃত অর্থনৈতিক অবদান
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১২:৫১
আধুনিক পুঁজিবাদী শোষণভিত্তিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো ‘পৃথিবী টাকার বশ’। ‘টাকাই’ আজ অধিষ্ঠিত হয়েছে দেবতার আসনে। এ কথাটি আমাদের দেশেও যে নিখাদ সত্য, চতুর্দিকের শত-সহস্র ঘটনায় নিত্যদিন আমরা তার প্রমাণ পাচ্ছি।
কোনটা সমাজে বেশি মূল্যবান ‘টাকা’ না ‘কাজ’? সত্য হলো, কাজই আসল টাকার কথা আসে পরে। মানব সমাজে বহু যুগ ধরে টাকার অস্তিত্ব ছিল না কিন্তু কাজের অস্তিত্ব ছিল সব সময়। কাজই সভ্যতাকে নির্মাণ করেছে। অথচ বর্তমানে ‘পৃথিবী টাকার বশ’! কিন্তু কাজের বশ সে নয়। পৃথিবীকে বশ করাটা এখন আর কাজের কাজ নয়। সে কাজ হলো ‘টাকার’ কাজ। পৃথিবীকে বশ করার জন্য কেবল সেই ‘কাজই’ এখন কাজের কাজ বলে বিবেচিত যা কিনা ‘টাকা’ জোগানের ক্ষমতা রাখে। কাজ হতে পারে দু’ধরনের। এক ধরনের কাজে টাকা আসে। আরেক ধরনের কাজে কোনো টাকা আসে না। যেসব পণ্য ও সেবার বিনিময়ে টাকা পাওয়া যায়, এখন সেগুলোই শুধু সমাজে স্বীকৃত সমাদৃত এবং সে কারণে ক্ষমতাধর।
সে কারণে একটি দেশের জিডিপি পরিমাপের ক্ষেত্রে কেবল সেটুকুকেই হিসাবে নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কাজ যদি সমাজ, সংসার ও মানুষের জন্য প্রভূত কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও তা যদি বাজারি-পণ্যের মতো অর্থ উপার্জনে সক্ষম না হয়, তাহলে তার কোনো আনুষ্ঠানিক সামাজিক স্বীকৃতি ও সমাদর থাকে না। জিডিপি পরিমাপের ক্ষেত্রে ‘দৃষ্টির অগোচরে থাকা’ এসব অতি প্রয়োজনীয় বিনিময় মূল্যহীন কাজগুলোর কোনো স্থান নেই। কারণ টাকার মানদণ্ডে তাদের কোনো অর্থনৈতিক মূল্য নেই। কাজ যেমন হতে পারে দু’ধরনের। একটি হলো তার ব্যবহারিক দিক ও অপরটি হলো তার বাণিজ্যিক দিক। ‘কাজের’ মূল্যও তেমনি হয়ে থাকে দু’ধরনের। একটি হলো তার ‘ব্যবহারিক’ মূল্য, অপরটি হলো ‘বিনিময়’ মূল্য। জিডিপির পরিমাণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিনিময় মূল্যই মূল্যবান।
ব্যবহারিক মূল্য এ ক্ষেত্রে একেবারেই মূল্যহীন। এবার আসা যাক নারীদের কাজকর্মের বিষয়ে। নারীরা যেসব কাজ করে থাকেন, সাধারণভাবে তার অধিকাংশেরই কোনো অর্থনৈতিক স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সম্মান পুঁজিবাদী সমাজে থাকে না। কারণ তাদের সিংহভাগ কাজ তারা করেন মূলত ব্যবহারিক প্রয়োজনে। বাজারে বিক্রি করে তার বিনিময়ে অর্থ পাওয়া যায় যেসব কাজে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেসব কাজ তারা করেন না। এসব কাজের বিনিময় মূল্য না থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে সেসবের কোনো মূল্য কি নেই?
এসব কাজ কি তবে মূল্যহীন কাজ? মোটেও সেগুলো মূল্যহীন নয়! বরং স্পষ্টতই সেসব হলো সমাজের অস্তিত্ব ও অগ্রগতির জন্য মহামূল্যবান কাজ। গৃহস্থালির নানা ধরনের কাজে হাড়ভাঙা পরিশ্রম, সন্তানের জন্ম দেওয়া ও তাদের নিবিড় প্রতিপালন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা দিনের পর দিন ধরে সকাল-সন্ধ্যা যে মহামূল্যবান কাজ করে থাকেন সেগুলোকে কোনোভাবেই হালকা করে দেখে মূল্যহীন বলে বিবেচনা করা যায় না। এসব কাজ যদি মহামূল্যবানই হয় তাহলে কোন যুক্তিতে সেগুলোকে জিডিপির পরিমাপ নির্ধারণের হিসাব-তালিকার বাইরে রাখা হয়ে থাকে? জাতিসংঘ নির্ধারিত যে সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস (এসএনএ) অনুসরণ করে একটি দেশের জিডিপির হিসাব করা হয়, তাতে নারীর এসব ‘বাজারবহির্ভূত অথচ তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রয়োজনীয়’ কাজের ব্যবহারিক মূল্য অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ রাখা হয় না। সেই হিসাব-ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ‘ব্যবহারিক মূল্যের’ বিবেচনাটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কেবল বাণিজ্যিক ও বাজারি বিনিময় মূল্যের বিষয়টিকে একমাত্র বিবেচ্য হিসেবে গণ্য করার পন্থা অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
পুঁজিবাদের অর্থনৈতিক দর্শনের একটি স্বাভাবিক প্রকাশ এর মধ্য দিয়ে পরিদৃষ্ট হয়। মানব অস্তিত্বের শুরু থেকেই মানুষ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। প্রকৃতি থেকে আহরিত উপাদানের সঙ্গে মানুষের ‘শ্রম’ যুক্ত করে আদিকাল থেকেই মানুষ তাদের জীবনধারণের প্রয়োজনগুলো পূরণ করে মিটিয়ে আসছে।
বস্তুত ‘মানব’ হিসেবে তার বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় মানুষের শ্রম ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সে শ্রম শুরু থেকেই ছিল সামাজিক চরিত্রের। শ্রমলব্ধ উৎপাদিত সামগ্রীগুলোও সে কারণে ছিল সামাজিক সম্পত্তি। সে কারণে স্বভাবতই মানব সমাজের ঊষালগ্নে শ্রমের কোনো বিনিময় মূল্য ছিল না। ছিল কেবল ব্যবহারিক মূল্য। সমাজের সব সদস্যের ব্যবহারিক চাহিদা পূরণের জন্যই মানুষ যৌথভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত ও ব্যক্তিগত শ্রম নিয়োজিত করত। এটিই ছিল সুপ্রাচীন যুগের (আদিম সাম্যবাদী সমাজের) রূপ ও বৈশিষ্ট্য। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এক সময় মানুষের বেঁচে থাকা তথা জীবনধারণের জন্য যতটা তার প্রয়োজন, তারও অতিরিক্ত উৎপাদনের সক্ষমতা সে অর্জন করতে সমর্থ হয়।
মানুষের শ্রমে ‘উদ্বৃত্ত মূল্য’ তৈরি হতে থাকে। সেরূপ প্রেক্ষাপটে সমাজে উৎপাদনের উপকরণাদির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা ও সমাজে শ্রেণিবিভাজনের উদ্ভব ঘটে। একপর্যায়ে এক গোষ্ঠীর বা এক ব্যক্তির শ্রমের ফসল অপর গোষ্ঠী বা ব্যক্তির শ্রমের ফসলের সঙ্গে বিনিময় হওয়া শুরু হয়। ক্রমে সৃষ্টি হয় বাজার। আরও পরে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চালু হয় মুদ্রা। মুদ্রা, বিনিময়, বাজার ইত্যাদি প্রচলিত হওয়ার পরও বহুদিন পর্যন্ত সমাজে পরস্পরের মধ্যে মানুষের শ্রমলব্ধ সম্পদ বিনিময় করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেসবের ব্যবহারিক মূল্যের বিনিময়। এভাবে আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে পর্যায়ক্রমে দাসব্যবস্থা ও তারপর সামন্তবাদী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে মানব সমাজ বিকশিত হয়েছে। এরপর সমাজের উত্তরণ ঘটেছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়। এই ব্যবস্থায় ব্যবহারের বদলে বিনিময়ের জন্য উৎপাদন করাটা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। ‘পণ্য’ উৎপাদন ও বিনিময়ের মাধ্যমে মুনাফা করাটাই হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিক তৎপরতার বৈশিষ্ট্য ও প্রধান প্রণোদনা।
মুনাফার সর্বোচ্চকরণের জন্য মরিয়া প্রয়াসই হয়ে উঠেছে অর্থনীতির চালিকাশক্তির মূল উৎস। এমনকি মানুষের ‘শ্রমশক্তিও’ কেনাবেচার সামগ্রী তথা আর দশটির মতো আরও একটি পণ্যে পরিণত হয়েছে। পুঁজিবাদীব্যবস্থায় শ্রমের ব্যবহারিক মূল্য যত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবানই হোক না কেন, তার নিছক সেই ব্যবহারিক মূল্যের কোনো দাম নেই। এমনকি অর্থনৈতিক সম্পদের হিসাব-নিকাশ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও তার কোনো স্বীকৃতি নেই। স্বীকৃতি রয়েছে শুধু বিনিময় মূল্যের। পণ্য বা সেবা হিসেবে বিনিময় মূল্য থাকলেই কোনো কিছুর দাম আছে বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাহলেই কেবল তা জাতীয় সম্পদের হিসাব-নিকাশে অন্তর্ভুক্তির যোগ্য হতে পারে। এ কারণেই রান্নাবান্না, ধোয়ামোছা, ঘর গোছানো, সন্তানের জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন-পালন করা, সংসারের সব সদস্যের জন্য হরেকরকম সেবা-যত্নের ব্যবস্থা করা, কৃষিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজে বিনামূল্যে পারিবারিক শ্রম প্রদান করা ইত্যাদি নারীদের সম্পাদিত এ ধরনের হাজার রকমের মহামূল্যবান কাজের কোনো যথাযথ অর্থনৈতিক স্বীকৃতি পুঁজিবাদীব্যবস্থায় পাওয়ার সুযোগ নেই।
জিডিপির পরিমাণ নির্ণয়ের হিসাব-নিকাশেও এসব কাজের প্রকৃত মূল্য তাই অন্তর্ভুক্ত হয় না। নারীর কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগে সিপিডি ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ যৌথ উদ্যোগে একটি মূল্যবান গবেষণাকাজ পরিচালনা করেছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, নারী ঘরে সম্পাদন করেন, এমন কাজের প্রাক্কলিত পরিমাণ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৬.৮ শতাংশের সমান। চলতি মূল্যে তা টাকায় ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। জিডিপির হিসাব করার সময় যে পদ্ধতি আমরা অনুসরণ করি, তাতে এই ৭৬.৮% শতাংশ অন্তর্ভুক্ত থাকে না।
উল্লিখিত গবেষণায় ৬৪টি জেলায় নমুনা জরিপ চালিয়ে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। নারীরা যেসব হিসাববহির্ভূত কাজে শ্রম-সময় ব্যয় করে থাকেন, তার পরিমাণ জনপ্রতি প্রতিদিন গড়ে ৭.৭ ঘণ্টা। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে এরূপ হিসাববহির্ভূত কাজে দেওয়া শ্রম-সময় হলো মাত্র আড়াই ঘণ্টা। নারীরা এ ধরনের যত কাজ করে থাকেন, তা নিজেরা না করে অন্যকে দিয়ে করালে কত খরচ হতো তা হিসাব করলে (এটিকে বলা হয় প্রতিস্থাপন পদ্ধতি) দেখা যায় যে, এর মোট পরিমাণ জিডিপির প্রায় ৭৬.৮ শতাংশ। অন্যদিকে এসব কাজে মজুরির বিনিময়ে নিয়োজিত হলে নারীরা কত পারিশ্রমিক নিতেন, সেই আলোকে হিসাব করলে (গ্রহণযোগ্য মূল্য পদ্ধতি) সেসবের কাজের প্রাক্কলিত আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় জিডিপির ৮৭.২ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়ায়- নারীদের এসব কাজকে জিডিপির পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলে জিডিপির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বলে বিবেচিত হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, মজুরিহীন কাজে সম্পৃক্ত নারীদের তিন-চতুর্থাংশই এমন কাজ করতে চান না যার বিনিময়ে কোনো মজুরি পাওয়া যাবে না। শহরে এমন নারীর সংখ্যা ৮০.১৭ শতাংশ, আর গ্রামে তা ৭১.১১ শতাংশ।
আরও দেখা গেছে, বাংলাদেশের যেসব নারী অনানুষ্ঠানিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন অথচ তার বিনিময়ে একেবারেই কোনো মজুরি পান না তাদের সংখ্যা ৮৮ শতাংশের বেশি। গবেষণায় এই তথ্যও বেরিয়ে এসেছে যে, বর্তমান পদ্ধতিতে যেভাবে জিডিপি পরিমাপ করা হয় তাতে নারীর মোট কাজের মধ্যে যে পরিমাণ কাজের স্বীকৃতি রয়েছে তার চেয়ে আড়াই গুণেরও বেশি কাজের কোনো ধরনের স্বীকৃতি একেবারেই নেই। আমাদের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ নারী। জিডিপিতে তাদের অবদান ৩০ শতাংশ বলে প্রচলিত হিসাব-পদ্ধতি অনুসারে প্রদর্শিত হয়। অথচ হিসাবের বাইরে থাকা বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে নারী সামাজিকভাবে প্রয়োজনীয় যে ব্যবহারিক মূল্য সৃষ্টি করে তার পরিমাণ এই ৩০ শতাংশের থেকে যে অনেক বেশি সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না। একদিকে সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিকতা এবং অন্যদিকে পুঁজিবাদের ‘পণ্য-অর্থনীতির’ ভিত্তিমূলের কারণে বর্তমানে প্রচলিত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় একদিকে ঘরে ঘরে এবং সেই সঙ্গে সামষ্টিকভাবে অর্থনীতিতে, নারীর অবদান অবমূল্যায়িত হয়ে চলেছে। চরম বৈষম্যমূলক এই নিষ্ঠুর সত্যটি আমাদের মতো অনুন্নত দেশে খুবই প্রকট। এর কারণ নারীরা প্রধানত বাজারে বেচাকেনার উদ্দেশ্যে বিনিময় মূল্য সৃষ্টির জন্য শ্রম নিয়োগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে, পণ্যভিত্তিক বাজার অর্থনীতির বাইরে সামাজিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক মূল্য সৃষ্টি করে থাকেন। বস্তুত এখনো নারীদের স্বীকৃতিহীন ও হিসাববহির্ভূত এই শ্রমই সমাজ-সংসারের চাকা সচল রাখা সম্ভব করে তোলার প্রধান অবলম্বন। অথচ অর্থনীতির হিসাব-নিকাশে তার কোনো স্বীকৃতি নেই।
দৃশ্যমান পণ্য-অর্থনীতিকে ভিত্তি করে জিডিপির যে পরিমাপ করা হয়ে থাকে, তার প্রায় সমপরিমাণের সম্পদ সৃষ্টি হচ্ছে সেই হিসাবের বাইরে থাকা হিসাববহির্ভূত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে। তার মধ্যে একটি প্রধান অংশই হলো নারীর নিত্যদিনের সাংসারিক কাজ। অথচ নারীর সেই মহামূল্যবান অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে। এই অস্বীকৃতির মাধ্যমেও নারীকে শোষণ ও বৈষম্যের জালে আবদ্ধ করে রাখা সম্ভব করে তোলা হচ্ছে। অথচ সংসার পরিচালনার একটি মূল স্তম্ভ কাঁধে নিয়ে চলেছেন নারীরা।
সাধারণভাবে এ কথা বলা যায়, সাংসারিক পরিম-লের অভ্যন্তরে কিন্তু বাজার অর্থনীতির বিনিময় মূল্যনির্ভর পণ্য-অর্থনীতির তথাকথিত লাভ- লোকসান বিবেচনা করে চলার কোনো স্থান নেই। সংসারের অভ্যন্তরে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে টাকা দিয়ে লেনদেন হয় না। সেখানে যা বিরাজ করে তা পুঁজিবাদ নয়, বরং এক ধরনের সমাজতন্ত্রের বিধিবিধান। কিন্তু পুঁজিবাদের আগ্রাসী থাবা পরিবারের মধ্যে বিরাজমান সেই সনাতন মূল্যবোধকেও ক্রমান্বয়ে কলুষিত করে ফেলছে।
ঘর-সংসারকেও ক্রমেই গ্রাস করছে পুঁজিবাদের পণ্য-অর্থনীতির ব্যবসায়িক বিধিবিধান, মানসিকতা ও ব্যবস্থা। তাই ঘরে কী বাইরে, নারীর প্রকৃত অর্থনৈতিক অবদানের স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য পণ্য-উৎপাদনভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটানো আজ আবশ্যক হয়ে উঠেছে। নারীর কাজের স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা কেবল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই সম্ভব হতে পারে। তাই নারীর মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোণ থেকেও সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম জোরদার করার কাজটি আজ খুবই প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)