সমস্ত 'দেশপ্রেমের' ডেস্টিনেশন বলিউড
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০১৯, ২৩:৪৪
আদতে পাব্লিক সেই প্রধানমন্ত্রীই পায় যাকে তারা ডিজার্ভ করে। তো ভারতের পাব্লিক কেমন? ৪৯জন জওয়ান জঙ্গী বিস্ফোরণে মারা গেল পুলওয়ামায়। সেই ঘটনায় তারা প্রবল কাঁদল। তারপর তারা বলল, যে তারা প্রতিশোধ চায়। এবং যে যে প্রতিশোধ চাইবে না তাদের বাড়ি গিয়ে পিটিয়ে আসতে চায়। খুব ভালো কথা। আমাদের সেনাবাহিনী এক শুভদিনে ভোর ভোর গিয়ে 'প্রতিশোধ' নিয়ে এল। এবার তারা সেই 'প্রতিশোধ' সেলিব্রেট করতে নেচেকুঁদে মিষ্টি খাইয়ে একাক্কার করল। কিন্তু ব্যাপারটা তো ওখানেই শেষ হবে না, প্রতিশোধের পর আরো কিছু থাকে। সেই আরো কিছুর জেরে আমাদের একজন উইং কম্যান্ডার শত্রু শিবিরে বন্দী হলেন। আবার তারা প্রবল কাঁদল। এমন কাঁদল, যে আরেকটু হলে বন্যা হয়ে পাকিস্তান ভেসে যেত। তারপর দাবী করল, 'আমাদের হিরোকে ফেরৎ দাও!' পাকিস্তান সুবোধ বালকের মত ফেরৎ দিয়ে দিল। ব্যাস। এখন তারা প্রতিশোধ ইত্যাদি টোটাল ভুলে গিয়ে আবার 'দেকেচো আমরা কেমন জিতে গেছি!', 'ওরা কী ভয় পেল দেকেচো!', 'আহা আমাদের হিরো কত্ত বীর!' বলে নেচেকুঁদে মিষ্টি বিতরণ করে একাক্কার করল।
বেসিক্যালি, পুরোটাই একটা হিন্দি সিনেমা। পাব্লিক ওটাই চায়। হিন্দি সিনেমা। 'মেরে করণ অর্জুন আয়েংগে!', 'এক এক কা বদলা লেগা রে তেরা ফয়জল!', ইত্যাদি। এবং হিন্দি সিনেমার হিরো চায়। একটা মুখ, একটা নাম। এক্ষেত্রে 'অভিনন্দন'। সেই হিরো শত্রুশিবিরে 'আয়াম নট সাপোজড টু টেল ইউ দ্যাট' বলে ফিরে এসেছে। অতঃপর হ্যাপ্পি এন্ডিং। পপকর্নের দাম উঠে গেছে। সিনেমা হিট। আবার কী! এনাফ দেশপ্রেম।
এলওসিতে এখনো হামলা চলছে। মাসুদ আজহার এখনো পাকিস্তানেই আছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যতই শান্তির কথা বলুক, আর্মি তার কন্ট্রোলে নেই। সেই পাকিস্তানি আর্মি কী করবে কেউ জানে না। ভারত এই মূহুর্তে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়। দুটো দেশের কাছে নিউক্লিয়ার ওয়েপন আছে। ইন্টারন্যাশনাল পার্সেপশন বিল্ডিং ভাইটাল জায়গা এক্ষেত্রে। এটসেট্রা এটসেট্রা এটসেট্রা। এগুলো কী? এন্ড ক্রেডিটস। যা কেউ পড়ে না।
পাকিস্তান যে জঙ্গী পোষে তা গোটা পৃথিবী ৭০ বছর ধরে জানে। পাকিস্তান যে সম্মুখ সমরে যাবে না, কিন্তু জঙ্গীদের ব্যবহার করে প্রক্সি ওয়ার চালাতে থাকবে, ভারত তা বহুদিন ধরে জানে। এবং এও জানে, রাষ্ট্র হিসেবে, যে ভবিষ্যতে আরো একটা পুলওয়ামা ঘটবে। আরো একটা ২৬/১১ ঘটবে। কোনো সলিউশনই হয়নি আদৌ।
কিন্তু তাতে কী? আরেকটা পুলওয়ামা হবে। পাব্লিক প্রবল কাঁদবে। প্রতিশোধ চাইবে। আরেকটা এয়ার স্ট্রাইক বা কিছু। পাব্লিক আবার নেচেকুঁদে মিষ্টি বিতরণ করে.... প্রতিবার একটা করে সিনেমা তৈরী করে দেওয়া সমস্যা সলভ করার চেয়ে তুলনামূলক সহজ কাজ। শুধু ওই ৪৯ জন জওয়ান প্লাস ৬ জন যারা এলওসিতে মারা গেল তারা আর ফেরৎ আসবে না। আল্টিমেটলি, হ্যাপি এন্ডিং পেয়ে গেলে পাব্লিকের আর তাতে কিছু যাবে আসবেও না। তারা প্রতিবার যারা প্রশ্ন তুলতে চাইবে তাদের 'দেশদ্রোহী' বানিয়ে দেবে, কারণ সিনেমা চলাকালীন তারা কোনো ডিস্টার্বেন্স চায় না।
মোদীজি সিনেমা ভালোই বানান। ভারতীয় পাব্লিক মোদীকেই ডিজার্ভ করে। সিনেমার শুরুতে শান্তি নয়, যুদ্ধ চেয়েছিল। এখন হ্যাপি এন্ডিং হয়ে গেছে, তাই যুদ্ধ নয় শান্তি চায়। মোদীও তাই চায়। অল ইজ ওয়েল।
পুনশ্চঃ পুলওয়ামা আর বালাকোট নিয়ে সিনেমা বানানোর জন্য অলরেডি বলিউডে কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। পাঁচ-সাতশো কোটির বক্স অফিস, ভাই। আল্টিমেটলি, সমস্ত 'দেশপ্রেমের' ডেস্টিনেশন বলিউড।
লেখক: লেখক ও সম্পাদক