ওয়াহ, ক্যায়া জোক্ মারা হ্যায়
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:০৮
রাষ্ট্রপতি, দুটি স্পিচ দিলেন। একটি ইনফরমাল অলিখিত, এবং আরেকটি ফরমাল লিখিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড এর ৫১ তম সমাবর্তনে তার প্রথম অলিখিত ইনফরমাল স্পিচটিতে তিনি আলোচনা করলেন, গরীবের বউ সবার ভাবী। ভাবী এমন একটি প্রাণী যার সাথে রঙ্গরস করা দেবরদের অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। দেবর শব্দটা এসেছে দোজ বর মানে, দ্বিতীয় বর থেকে। তাই এমনিতে ভাবী মায়ের সমান এইরকম নীতি কথার পাশাপাশি, ভাবী একটি সেক্স ফ্যান্টাসি জাতীয় শব্দ। এইজন্য দুপুর ঠাকুর পো সিরিয়াল তৈরি হয়, পোলাপান গান গায় 'ও বৌদি এঞ্জেল হুর পরী... লেগে গেছে লটারি', আর এই জন্যই সবিতা ভাবী ডট কম এতো পপুলার।
গ্রামে বউ ঘরে তুলে নেয়ার সময় নাকি অনেক জায়গায় রেওয়াজ হচ্ছে দেবররা বউকে পাঁজা কোলা করে তুলে ভাই এর ঘরে দিয়ে আসবে। এইসময় দেবররা চাইলে দুষ্টামি করে ভাবীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চিমটি দিতে পারে। স্বামী বিদেশে থাকে যেসব ভাবীদের সেই ভাবীদের দায়িত্ব অনেক জায়গায় দেখেছি দূর সম্পর্কের খালাতো মামাতো ফুপাতো ভাইদের হাতে দিয়ে গেছে ভাই। কোন জায়গায় আপন ছোট ভাই দায়িত্ব নেয়। আমাদের দেশের পুরুষরা যেহেতু দায়িত্ব নিতে পছন্দ করে, তাই একলা ভাবীর সাথে দাঁড়িয়ে 'আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে' গানটি গেয়ে থাকেন। গ্রামেগঞ্জের উদাহরণ দিলে আমাদের শিক্ষিত উচ্চ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণী, খুব আরাম পায়। অথচ ঘটনা সেখানেও ঘটে। মধ্যবিত্ত হিপোক্রেট শ্রেণীরা আবার নিজের গু এর গন্ধ পায় না, আর উচ্চবিত্তরা তো নিজেদের গন্ধম এভোয়েড করা আদম ইভ মনে করে, তারা যেন হাগেই না।
তো আমাদের প্রাণ প্রিয় রাষ্ট্রপতি, গরীবের বউ সবার ভাবী এই কথা বলেছেন, রাজনীতিকে স্যাটায়ার করে। রাজনীতি নিয়ে বলেছেন, ছোট্ট একটা ভালোবাসা ডাকসুর জন্য তিনি আলোর আশা, থুক্কু আশার আলো দেখছেন। সমাবর্তনের কয়জন ফেসবুকে আই হেইট পলিটিক্স লিখে রাখছে কে জানে। তিনি সেই সাথে ফেসবুকের অপকারিতা বোঝালেন, ফেসবুক মানুষকে আইসোলেটেড করে ফেলেছে, কেউ কাউকে বাও ঠ্যাঙ দিয়াও পুছে না এই ব্যাপারটি তিনি তুলে ধরলেন। এইটা ঠিক, ঘটনা সত্য।
তারপর তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করলেন, প্রিয়াংকা চোপড়া যদি বয়সের তোয়াক্কা না করতেন তবে তিনি তার ৫৪ বছরের বিবাহিত সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতেন। (মুসলমান পুরুষের চার বিয়ে করার অনুমতি আছে)। তারপর উপস্থিত সকল গ্র্যাজুয়েট, পিএইচডি ফেলোরা এই চরম মজার কথা শুনে কী মজা কী মজা ভঙ্গিতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। এবং তারা প্রায় হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েন যখন আমাদের প্রাণপ্রিয় রাষ্ট্রপতি বলেন যে দেশে পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোন আইন নাই, অথচ পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছে। হ্যাঁ ঘটনা মিথ্যা না। এই সমাবর্তনে অনেক পুরুষের মাথায় বিয়ে করার চাপ আছে। আছে বিসিএস দেয়ার চাপ, আছে ভালো ভালো চাকরি পাওয়ার চাপ। কারণ তারা এইগুলো না করলে সুন্দরী বউ কপালে জুটবে না। শ্বশুরকুলে প্রতিযোগিতায় টিকবে না। কারণ তারা বউকে খাওয়াবে কি টাইপ জোক্স মারতে পছন্দ করে। কারণ তারা বউ পালা আর হাতি পালা এক মনে করে। কারণ তাদের বোঝানো হয়, গরুর মতোই বউও পালতে হয়। কারণ তাদের সাথে পড়া, লড়াকু হলের মেয়েদের অনেকেই দামী পাত্র খুঁজবে। কারণ তাদের মধ্যে থেকে অনেকেই পড়ালেখা করেছিলেন যেন তাদের একটি ভালো বিয়ে হয় এই আশায়। কারণ তারা ছোট থেকে ভালো করে পড়তে বসেছিল যেন সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারে এবং বিয়ে করতে পারে। তাদের মাথায় চাপ আছে কারণ তাড়াতাড়ি বাড়ি গাড়ি নারী তাদের জীবনে না আসলে তাদের পুরষত্ব এবং পুরো সত্য প্রমাণ করা যাবে না। এইভাবে পুরুষরা নির্যাতিত হচ্ছে। কারণ পুরুষদের মাথায় হাজারো বছরের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার সংস্কৃতি, এবং সেখানে তাদের মানুষ সত্ত্বাকে বিলীন করে দিয়ে তাদের পুরুষ করে তোলা হয়।
তবে চার বিয়ে না করতে পারা, একই সাথে জায়গায় জায়গায় খাতা খুলে রাখতে না পারাও অনেক পুরুষের কাছে পুরুষ নির্যাতন, তা সেখানে উপস্থিত সকলের হাসির নিচে কান্নার মাধ্যমে বোঝা গিয়েছে।
এবং এই জন্যই রাষ্ট্রপতির জোক্স শুনে তারা হাসে, আর বলে ওয়াহ, ক্যায়া জোক্ মারা হ্যায়, হাস্ হালকাট হাস্।
লেখক: আইনজীবী