লিঙ্গরাজনীতির দেয়াল, ভাঙতে হবে আমাদেরই
প্রকাশ : ২২ মে ২০১৮, ২৩:৩১
আমাদের সালমান খানেরা (পুরুষ মানুষ) উদোম হয়ে সাঁতরায়, গরম লাগলে পোশাক খুলে ফেলে। ফেসবুকে, বিলবোর্ডে নগ্ন শরীর দেখায়। তাতে তাদের লজ্জা হয় না। আমাদের সালমান খানেরা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে মুত্র ত্যাগ করে। তাতেও তাদের লজ্জা হয় না। আমাদের সালমান খানেরা অবলীলায় মানুষের সামনে যৌনাঙ্গে চুলকায়। তাতেও তাদের লজ্জা হয় না। আমাদের সালমান খানেরা বাসে ট্রেনে প্লেনে মাস্টারবেট করে। না, তাতেও তাদের লজ্জা হয় না। লজ্জা তো দূরের কথা, এটা যে অভব্যতা, অসৌজন্যতা সেই বোধটুকুও তাদের হয় না। তারা বুঝেই উঠতে পারেন না, পুরুষ মানুষের লজ্জার কি আছে!
সেটাই! লজ্জা তো নারীর জন্য, পুরুষের আবার লজ্জা কি! পুরুষতন্ত্রের লিঙ্গপাঠ পুরুষকে শৈশবেই শিখিয়েছে, তার লিঙ্গের কোনো লজ্জা নেই, বরং গর্ব আছে। তাই শিশুপুত্রকে জনসম্মুখে উলঙ্গ করতে আমরা লজ্জা পাই না। আমরা আদর করার ছলে তার লিঙ্গ নিয়ে খেলা করতে অস্বস্তি বোধ করি না। আমার এক বন্ধুকে দেখেছি, তার দুই বছরের শিশুপুত্রটিকে লিঙ্গ নিয়ে খেলতে দেখে সে খুব মজা পেয়ে সেটা ভিডিও করে রাখতে। এই না হলে পুরুষ!
এই আমরাই শিশুর লিঙ্গে ঘুঙ্গুর পড়িয়ে উৎসব করি, মহা সমারোহে খতনা উৎসব করে তার লিঙ্গ মহিমা প্রচার করি। শিবের নামে লিঙ্গ পুজা করি। এভাবেই একটি প্রাকৃতিক অঙ্গ পুরুষকে এমন নির্ভয় করেছে যে, তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করে, যেখানে সেখানে উদোম হয়ে যেতে পারে, যখন খুশী নারীর উপর উদ্যত হতে পারে। পুরুষ সবই পারে, কারণ পুরুষের আছে প্রবল পরাক্রমশালী লিঙ্গের অহংকার।
মহান পুরুষতন্ত্রের স্কুলে শৈশব থেকেই সম্পুর্ণ বিপরীত শিক্ষা দেয়া হয় পুরুষ আর নারীকে। পুরুষকে লজ্জা আর পরিশীলতার শিক্ষা দেয়া হয় না বরং পুরুষের কাম-ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণে নারীদেকেই ‘পরিশীলিত’ থাকার শিক্ষা দেয়া হয় শিশুকাল থেকে। একই ঘরে বোনটি যখন নিজের শরীর আর অস্তিত্বের ভার নিয়ে বিব্রত, লজ্জিত হয়ে উঠার প্রথম পাঠ নেয়, ঠিক তখন ভাইটি পাঠ নেয় এক লিঙ্গের জোরে ‘বাদশা’ হওয়ার।
পুরুষের এই সমাজে আমরা আমাদের কন্যাদের যখন অবাঞ্ছিত, অসহায়, অধস্তন করে রাখি, সেই সময়টাতেই আমাদের পুত্ররা আমাদের হাতেই হয়ে উঠে সমাজের একেশ্বর। আমরাই পুত্রদের বলেছি কন্যা হবে তোমার অর্ধাঙ্গিনী, তোমার শয্যাসঙ্গিনী, তোমার শস্যক্ষেত্র। আমরাই দিয়েছি আমাদের পুত্রদের প্রেম ও শরীরের একচ্ছত্র মালিকানা আর অবাধ যৌনতার স্বেচ্ছাচারিতা।
তবু সব রাতের শেষেই ভোর আসে। একদিন এই বিশ্ব বদলাবে। এই বদল ঘটাবে আমাদের পুত্ররাই। কেবল শিক্ষাটা আমাদের দিতে হবে। যে লিঙ্গের ভেতর বন্দি হয়ে, তারা কেবল পুরুষ হয়ে আছে হাজার বছর ধরে, সেই দেয়ালটা ভেঙে দিতে হবে আমাদেরকেই। এটুকু করলেই লিঙ্গ রাজনীতির চোরাগলি পেরিয়ে, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষ হয়ে আলোর মহাসড়কে আসবে আমাদের পুত্ররা।
লেখক: কলামিস্ট, প্রধান নির্বাহী, সংযোগ বাংলাদেশ