প্রতিবাদের ফোকাসটা ঠিক করুন
প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৮, ২৩:০৭
ধর্ষণের প্রতিবাদে আসুন ফোকাস ঠিক করি। আমরা প্রায়ই প্রতিবাদ করতে গিয়ে মূল ফ্যাক্টর নিয়ে কথা না বলে আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে এতো বেশি বলে ফেলি যে, মূল বিষয়ই হারিয়ে যায়। আমাদের যাদের ধর্মের প্রতি আক্রোশ আছে, তারা ধর্মের বিরুদ্ধে বিষোদগার করি, যাদের কোন দলের বিরুদ্ধে আক্রোশ আছে তারা সেই দলের প্রতি বিষোদগার করি। অথচ, ধর্ষককে ধর্ষক হিসেবেই দেখা দরকার। ধর্ষণ মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা দরকার। ধর্ষক এই ধর্মের না হয়ে অন্য ধর্মের হলেও ধর্ষকই হতো। এক দলের না হয়ে আরেক দলের হলেও তাই।
তাসফিয়া আমিনকে শবে বরাতের রাতে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে ঠিক। কিন্তু শবে বরাতের রাত না হলে কি ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না? কিংবা অন্য রাতে ঘটলে কি এই ধর্ষণের অপরাধ কম হয়ে যেতো? বন্ধুত্বের এক মাস পূর্তির একটা উছিলা দরকার ছিলো শুধু। যারা শবে বরাতকে মুখ্য করে তুলছেন, তারা ধর্ষণের ভয়াবহতাকে গৌণ বানিয়ে ফেলছেন।
বরং আদনান মির্জা নামক ১৬ বছরের এক কিশোর কেন ধর্ষক হয়ে ওঠে সেদিকে আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার। এই ছেলেটির পরিবারে কে কে আছেন? তার বাবা-মা কি করেন? তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাই বা কি? আদনান কাদের সাথে মিশতো? বিনোদনের উপায়গুলোই বা কি কি ছিলো? একটি কিশোর ছেলে মেয়েটিকে ভালোবাসার কথা না ভেবে কেন ধর্ষণের পরিকল্পনা করলো? এগুলো আমাদের ভাবা দরকার।
পুরুষ এবং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর মানসিক গঠনে ধর্মের একটা ব্যাপক ভূমিকা থাকে সত্যি। কিন্তু সেটাকে এড্রেস করার পন্থা এটা নয়। এর মাঝেই অনেকে মেয়েটিকে দোষারোপ করাও শুরু করেছে, যেমন সবসময় করে আরকি। এই মানুষগুলোর মানসিকতাকে চ্যালেঞ্জ করতে গেলে শবে বরাতের রাতকে গালাগালি করে কোন লাভ হবে না। বরং পাল্টা রেজিসস্টেন্স তৈরি হবে। ধর্মের সীমাবদ্ধতাগুলোর সমালোচনা নিশ্চয়ই করতে হবে। কিন্তু শুধু একটা দিন মিলে গেলো বলেই সেই দিনটিকে ব্যঙ্গ করা এখানে অবান্তর।
আমরা যারা চাই ধর্ষণের সংস্কৃতি বন্ধ হোক, তাদের প্রতি অনুরোধ, ফোকাস ঠিক করুন। পুত্র সন্তানের বর্তমান এবং ভবিষ্যত অভিভাবক যারা আছেন, তারা সতর্ক ও সচেতন হোন। সন্তানের সাথে কথা বলুন। সে কি করে তার খোঁজ রাখুন। শিক্ষকরা ছাত্রদের সাথে কথা বলুন। যে যেই ভূমিকায়ই থাকুন না কেন, সেই অবস্থান থেকে চারপাশের মানুষগুলোকে বদলানোর চেষ্টা করুন। অন্ততঃ যদি শুধুমাত্র নিজেকেও বদলাতে পারেন সেও কম নয়। নইলে হাজার গালাগালি করেও, শাস্তি দিয়েও ধর্ষণ বন্ধ হবে না।
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক