ইতিহাসের আলোকে মে দিবসের তাৎপর্য

প্রকাশ : ০১ মে ২০১৮, ১৮:১৪

১ মে, ১৮৮৬। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন, সংগ্রামের দিন, উৎসবের দিন। আজ থেকে ১৩২ বছর আগের কথা। সেদিন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল শিকাগো। বহুদিনের শোষণ আর বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে শ্রমজীবীরা ফুঁসে উঠেছিলেন, ঝরিয়েছিলেন বুকের তাজা রক্ত। আজ সেই দিনটিকে ইতিহাসখ্যাত দিন হিসেবে দেখা হলেও, সেই গৌরবময় তাৎপর্য পুঁজিবাদী, ভোগবাদী সংস্কৃতির কারণে অনেকটাই কালোতে ছেয়ে গেছে। কিন্তু ইতিহাস তো রয়েই যায় ইতিহাসের গভীরে!

সেদিন ছিল শনিবার। স্বাভাবিক কাজের দিন থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকরা ব্যাপকতা ও তীব্রতা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে শিকাগো। বিভিন্ন শ্রমিক ও বামপন্থী দলগুলোর কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় শিকাগো। ১ মে-তে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ শ্রমিক কাজ ফেলে রাস্তায় নেমে আসে, শিকাগো শহরে প্রায় ৪৪ হাজার শ্রমিক ধর্মঘটে যোগ দেয়। মিছিল, মিটিং আর ধর্মঘটের শহরে পরিণত হয় শিকাগো। ক্রমেই আন্দোলনকারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকে, যা ১ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়, সেই সাথে আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। আর এই শিকাগোর শিল্পাঞ্চলগুলোতে বামপন্থীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল, যে প্রভাবে প্রভাবিত হয় হাজার হাজার সাধারণ শ্রমজীবী জনতা। যে কারণে শিকাগোর ধর্মঘট খুবই জঙ্গিরূপ ধারণ করে। এটা শুধু একটা দিন নয়। বহু দিনের জমানো ক্ষোভই সেদিন বাষ্পে পরিণত হয়। শ্রমিকদের চাপা কষ্ট, শ্রমের মূল্য না পাওয়ার কষ্ট, অতিরিক্ত খাটিয়ে নেওয়ার কষ্টটার বিস্ফোরণ ঘটে ১৮৮৬ সালের ১ মে। বহুদিনের আগে থেকেই তাদের প্রস্তুতি ছিল, সুতরাং এটা শুধুমাত্র নৈরাজ্যিকদের আন্দোলন বলে বা নৈরাজ্যবাদী আন্দোলন বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ ইতিহাসে নেই, আপাতত ইতিহাস যারা অধ্যয়ন করে থাকে। হ্যাঁ, একটা স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনে নানা চিন্তা-চেতনার মানুষই থাকবে যা এখনও থাকে। ঠিক, সেদিনের ঘটনাটাও তাই ছিল।

১ মে’র ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা বহু আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ‘আট ঘণ্টা শ্রম সমিতি’ নামে সকল শ্রমিককে নিয়ে একটি সমিতি ইতিমধ্যেই তারা দাঁড় করিয়েছিলেন এবং ইউনিয়নের প্রতিটি শ্রমিককে অর্থ সংগ্রহ করার তাগিদও দিয়েছিলেন। কেননা, এই ধর্মঘট করার ফলে অনেকেই কর্মচ্যুত হতে পারেন, পঙ্গু হতে পারেন, মারা যেতেন পারেন। সব প্রস্তুতিও তাদের মোটামুটি ছিল। তারা আঁচ করতে পেরেছিলেন তাদের উপর নির্মম পৈশাচিক হামলাও চলতে পারে, প্রয়োজনে তাদের জীবনও দেওয়া লাগতে পারে। এর সাথে আরো শ্রমিক সমিতি যুক্ত হয়। মূলত, শ্রম সমিতিগুলো ছিল শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ মোর্চার প্রতীক। ‘ফেডারেশন অব লেবার’, ‘নাইটস অব লেবার’ এবং আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণীর প্রথম স্বতন্ত্র ও সংগঠিত সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ‘সোশ্যালিস্ট লেবার পার্টি’ প্রভৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নসমূহ ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমিতি গড়ে তুলেছিলেন। ইতিহাসের কাছে দ্বারস্থ হলে আমরা সেই তথ্যই পেয়ে থাকি। সকল বামপন্থীদের ট্রেড ইউনিয়নের সমবায়ে ‘সেন্ট্রাল লেবার ইউনিয়ন’ নামে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠনও ছিল। এই সংগঠনও আট ঘণ্টা শ্রম সমিতিকে সমর্থন জানায় এবং তারা বলে এটা তাদের ন্যায্য ধর্মঘট আমরা আছি এই ন্যায্যতার সাথে। 

‘আট ঘণ্টা শ্রম সমিতি’র ধর্মঘটের প্রস্তুতির ব্যাপারে অবগত হয়ে বামপন্থীদের সংগঠন ‘সেন্ট্রার লেবার ইউনিয়ন’ ১ মে তারিখের আগের রবিবার ১ মে এর ধর্মঘট সফল করার জন্য প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়, যে সমাবেশেও শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল অভাবনীয়। প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সেদিন সমাবেশে ছিলেন। আরো সাড়ে তিন লাখ শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখেছিলেন। সুতরাং, এর তাৎপর্য গৌরবান্বিত। একে পুঁজিবাদীদের নষ্টামীর খপ্পরে ফেলে দিলে আমাদের ইতিহাস রচয়িতাদের কাছে ধিক্কার পাবো, সাথে তাদের মূল্যবোধকেও অপমানিত করবো। এখনই সময় ইতিহাস শ্রমিকশ্রেণীর কাছে পৌঁছানো।

সকালে মিশিগান অ্যাভিনিউর মিছিল দেখে শিকাগোর শোষক বুর্জোয়ারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো, ঘাবড়ে গিয়েছিল একেবারে! কৌশল করে সেদিন তারা দমনমূলক নীতি চালিয়ে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য নাটক করে নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে সারাদিন সভা চালায়। যা হাস্যকরও বটে! তারা বুঝতে পারে নি শ্রমিকদের বিস্ফোরণ হলে কি ঘটতে পারে এই শিকাগো শহরে! কৌশলগতভাবে এই কমিটি শান্তি ও শৃঙ্খলার নামে অলিগলি ও বিশেষ বিশেষ বাড়ির ছাদে পুলিশ ও গুণ্ডাবাহিনী জড়ো করে, যা বর্তমানের শাসকশ্রেণীও করে থাকে। শাসক-শোষকের একটা আদর্শগত মিল যেদিন থেকে শ্রেণীর সৃষ্টি হলো সেদিনই থেকে হয়তো হয়েছে! ১ মের আগে বিভিন্ন শোষকশ্রেণীর পত্রিকায় নিউজও হয়েছিল, 'এই শহরে দুটো ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টায় দুটো মিটমিটে কাপুরুষ।... কোনো অশান্তি ঘটলেই তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ি করুন'। একইসাথে বলা হয়, “প্যারি কমিউনের দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি হবে”। এই দুটো ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত ছিলেন শ্রমিকদের আশ্বস্ত এবং বিশ্বস্ত শ্রমিক নেতা পার্সনস ও স্পাইজ।

এই সব উস্কানিকে থোড়াই কিলিয়ে সেদিন শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন শ্রমিক নেতারা। মাইকেল স্কোয়ার, জর্জ এঞ্জেল, অ্যাডলফ ফিসার, লুই লিংগ ও অস্কার নীবে ছিলেন মূল নেতৃত্বে। শাসকশ্রেণীর সকল উস্কানিকে উপেক্ষা করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিশিগান অ্যাভিনিউর চত্বরে জমা হয়েছিলেন। গগনবিদারী শ্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় পুরো শহর। মিশিগান থেকে লেক ফ্রন্টে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়েছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রমিকনেতাদের বক্তৃতা শুনছিলেন হাজারো শ্রমজীবী জনতা। ইংরেজি, বোহেমীয়, জার্মান, পোলিশ প্রভৃতি ভাষায় সেদিন বক্তৃতা করেছিলেন শ্রমিক নেতারা। বক্তাদের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল ৮ ঘণ্টা শ্রম দিবসের চ্যালেঞ্জ। যতদিন পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণ না হচ্ছে ততদিন এই আন্দোলন চালিয়ে যাবার হুঙ্কারও দিয়েছিলেন শাসকশ্রেণীকে। 

সেদিনের সেই সমাবেশ বহু শ্রমিককে নতুন প্রাণে উজ্জীবিত করে। পঁচিশ হাজার শ্রমিক বিশেষ করে রাজমিস্ত্রিরা আট ঘণ্টা কাজের দিনের দাবি আদায় করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। ২রা মে ছিল রবিবার। ছুটির দিন। ধর্মঘট সেদিন আরো বিস্তৃতি রূপ ধারণ করেছিল। শাসকশ্রেণীর রক্তচক্ষু এবার শ্রমিকদের দমন করার দিকে। ৩ মে ছিল শ্রমিকদের আরো ব্যাপক জমায়েত। শাসকশ্রেণী শ্রমিকদের ভিতরে গ্রুপিং তৈরি করার চেষ্টা চালান এবং কিছুটা সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আন্দোলনের মোড় ঘুরাতে পারে নি বর্বর শাসকশ্রেণী। ৩রা মে তারিখে ম্যাককর্মিক ফসল কাটার কারখানায় এক সভা চলার সময়ে শ্রমিকরা প্রথমে দালালদের ডাণ্ডাবাজির মোকাবেলা করেছিল। কিন্তু শোষকশ্রেণীর বর্বর বাহিনী শ্রমিকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়- যে হামলায় ঘটনাস্থলেই ছয়জন নিহত হন এবং বেশ শ্রমিক আহত হয়।

পরদিন ৪ঠা মে মঙ্গলবার হে মার্কেট স্কোয়ারে এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় স্পাইজের ঘোষণা অনুসারে। শ্রমিক নেতা স্পাইজ বক্তৃতা করার পর পার্সনস রাত দশটা পর্যন্ত দীর্ঘ বক্তৃতা করেছিলেন। শেষ বক্তা সাম ফিলডেন বক্তৃতা শেষ করেছেন, শ্রমিক জনতা উঠে যাচ্ছেন, ঠিক এমনিই সময় বোমার বিকট আওয়াজে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠল। আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এক পুলিশ কর্মকর্তা এ বোমাটি নিক্ষেপ করেছিল। বোমাটি বিস্ফোরিত হবার সাথে সাথেই নিরীহ শ্রমিকদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালায় পুলিশবাহিনী। নির্বিচারে লাঠি ও গুলি চালায়। ঘটনাস্থলেই সেদিন চারজন শ্রমিক নিহত ও বহু আহত হলেন। কিন্তু পুলিশদেরকেও রেহাই দেয় নি বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। সাত জন পুলিশও নিহত হয়েছিলেন। 

ইতিহাসের এ ঘটনা ‘শিকাগোর হে মার্কেটের ঘটনা’ হিসেবে আখ্যায়িত। স্মরণ করছি সেই সমস্ত কর্মী ও নেতৃবৃন্দকে যারা জেল-জুলুমের পরোয়া না করে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন শোষণ ও শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পতাকাকে। লাল সালাম জানাই সফল সংগ্রামের উৎস ও ধারক বাহক বীর জনগণকে।

সারা পৃথিবীতে আজ পালন হবে মহান মে দিবস। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিকশ্রেণীর লড়াই-সংগ্রামের ঐতিহাসিক দিন। মে দিবস আজ আমাদের দেশের শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রামের দিনে, শপথ গ্রহণের দিনে, উৎসবের দিনে পরিণত হয়েছে। এ দিনকে কেন্দ্র করে সকল শ্রমিক উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। তাই এই দিনটিতে শ্রমিকদের কাছে আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস, মে দিবসের ইতিহাস, সংগ্রামের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা, সমাজ বিপ্লবের বাহক হিসেবে শ্রমিকশ্রেণীর বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সব সময়েই আমরা অনুভব করে থাকি। এ দিনকে কেন্দ্র করে থাকে শ্রমিকদের মনে উৎসব উৎসব আমেজ- বুঝে হোক না বুঝে হোক এ দিনটিকে তারা উদযাপন করার চেষ্টা করে। শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের সাধ্যমতো শ্রমজীবী মানুষগুলোকে একত্রে জড়ো করেন- সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করে থাকেন। কর্পোরেট মিডিয়া এদিনটিকে ‘মালিক-শ্রমিকের সম্প্রীতি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এতে পক্ষান্তরে মালিকশ্রেণীর পক্ষে অবস্থান করা হয়। কোনো কোনো কর্পোরেট বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান আয়োজন করে নানান কনসার্ট- যা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। কথায় আছে, ইতিহাস বিস্মৃতি থেকেই ইতিহাস বিকৃতি। ঠিক তেমনটাই ঘটিয়ে থাকে পুঁজিবাদী, ভোগবাদী সংস্কৃতি ধারণ করা ব্যক্তিবর্গ।

তবুও কিছু স্বপ্নচারী মানুষ স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান। শ্রমিকদের মনে আশার আলো জ্বালাতে চেষ্টা করেন। মালিকশ্রেণীর এহেন নোংরামীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন, তীব্র প্রতিবাদ করেন। শ্রমিকশ্রেণীও বুঝতে পারে বড়লোকের এসব কথা মানি না, মানবো না। আমরা এক হবো। দুনিয়ার সকল শ্রমিকরা এক হবো। আমরা ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ আওয়াজ তুলবো। এটা শুধু মে দিবসেই নয়, যতদিন না আমরা শোষণমুক্ত হচ্ছি ততদিন আমরা এক হবো, প্রতিবাদ করবো। শ্রমিকশ্রেণীর কাছে মে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি’ দিবস হিসেবেই আখ্যায়িত। এই দিনটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা আজ আমাদের শ্রমিকসংগঠনগুলোর প্রধান দায়িত্ব- স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ প্রগতিকামী মানুষেরই তুলতে হবে। 

বাংলাদেশের শ্রমিকরাও এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে প্রতি বছর ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে। স্বাধীনতার পর এই দিনটিকে সাধারণ ছুটির দিন হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এখনও বহু গার্মেন্টস খোলা রাখে মালিক কর্তৃপক্ষ, গৃহ পরিচারিকা শ্রমিকদের ছুটি থাকে না, বহু কল-কারখানার শ্রমিকদের এ দিনেও শ্রম দিতে হয়। তাদের চেতনার মে দিবসের তাৎপর্য অনুপস্থিত। কিন্তু, মালিকশ্রেণী এ দিনটিকে বগলদাবা করে তাদের কিছু পোষ্য শ্রমিককে নিয়ে ঢাল-ঢোল পিটিয়ে শ্রমিক সমাবেশ করে থাকে। এগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। 

মে দিবসের অনুষ্ঠানে উৎসবের একটা আমেজ থাকে। এই আমেজটাকে শুধু উৎসবের আমেজ হিসেবে দেখলে আমরা মূল শোষকশ্রেণীকে আঘাত করতে পারবো না। আমাদের দেশের জন্য এটা মোটেও আমোদের দিন নয়। কেননা, আমাদের দেশসহ বিশ্বের নানান দেশে শ্রমিকরা এখনও কর্মঘণ্টা ঠিক করতে পারে নি। এখনও তাদেরকে ১২-১৬ ঘণ্টা খাটিয়ে নেয়। এখনও তাদেরকে ওভারটাইম দেওয়ার নামে তালবাহনা করে থাকে। সুতরাং, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শ্রমিকশ্রেণী শোষকদের উচ্ছেদ করে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও আমরা তা পারি নাই। তাই আমাদের কাছে এ দিনটা বিদ্রোহের, সংগ্রামের। আমাদের দেশসহ নানান দেশে শ্রমিকশ্রেণী অর্থনৈতিক শোষণে জর্জরিত, সামাজিকভাবে উপেক্ষিত, রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সে-সব দেশে শ্রমিক শ্রেণীর মে দিবসকে প্রধানত সংগ্রামের দিবস হিসেবেই পালন করতে হবে। মে দিবস শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এক গভীর আবেগ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। তাই এ দিনটিতে শ্রমিক শ্রেণীকে শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে আগামী দিনের সংগ্রামের শপথ গ্রহণ করতে হবে। এই আবেগকে দৃঢ়ভাবে শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে কাজে লাগানোই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান কাজ।

লেখক: লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত