আমাকে অভিনন্দন!

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:১৬

আমাকে যদি কেউ কোনদিন প্রশ্ন করে আমার সাফল্যের জন্য আমি কার প্রতি কৃতজ্ঞ? আমি চোখ বন্ধ করে প্রথম কৃতজ্ঞতা জানাবো আমার প্রতি। জ্বি, আমার নিজের প্রতি। কারন, আমি শেষ পর্যন্ত ক্রিজে দাঁড়িয়েছিলাম বলেই আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। এই অর্জন কারো দয়ায় বা 'দেওয়ায়' আসেনি। অনেক রক্ত সাগর সাঁতরে, কুমির হাঙরের সাথে লড়ে এসেছে। আমি চেয়েছি বলে এসেছে।

এই চাওয়াটুকুকে সত্য করার লড়াইয়ে যে আমাকে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সামনে এগিয়ে দিয়েছে সে তো এই আমিই। দিন শেষে আমি চেয়েছি বলেই আজকে 'আমি' হয়েছি। এটাই সত্য। আমি আমাকে অভিনন্দন জানাই প্রতিদিন স্রোতের বিপরীতে সাঁতরানোর দম এই অব্দি ধরে রাখতে পারার জন্য, পথের কাঁটা আর ঢিল খেয়ে খেয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

আমি আমাকে অভিনন্দন জানাই সস্তার তেল সাবান, স্বামীর 'দেওয়া' নিশ্চিন্ত জীবনের মোহ, 'হাব্বি' 'জান' এর সুখ সুখ খেলার ঘোর অতিক্রম করে বাইরের দুনিয়ার ঝুঁকি ও মুক্তির পথ বেছে নিতে পারার জন্য। নিজেকে স্যালুট করি একটা ভুল বিয়ের চোরাবালিতে ডুবে না গিয়ে বিশ বছর বয়সে শুন্য হাতে এই জীবনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারার সাহসের জন্য।

হ্যাঁ, আমার ভাগ্য ভালো, এই লড়াইয়ে আমার পাশে একজন ভালো সঙ্গী ছিলেন। তিনি আমাদের সন্তানদের আমার ঘাড়ে একা চাপিয়ে দেননি বলে, ঘরে এসে আমার সাথে রান্নাঘর সামলেছেন বলে আমার কষ্টটা একটু কম হয়েছে। কিন্তু আমি কখনই মনে করি না এই 'করা' টুকুর জন্য তিনি আমাকে ঋণী করেছেন। আমি নিশ্চিত তিনিও সেটা মনে করেন। কারন, একজন দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে তিনি এক্সাক্টলি তাই করেছেন যা তার করারই কথা ছিলো। তিনি এটা খুব ভালো করেই জানেন এবং মানেন।

অনেকেই বলেন, ভালো স্বামী, ভালো বাবা, ভালো শাশুড়ি পেয়েছি বলেই আমি নাকি এই অবস্থানে আসতে পেরেছি। না, ভুল। ভালো স্বামী, ভালো বাবা, ভালো শাশুড়ি কিছুই আমার আজকের অবস্থানের জন্য অপরিহার্য ছিলো না। অপরিহার্য ছিলাম শুধু আমি, নিজেকে প্রমাণ করার ইচ্ছে আর শর্টকাট খেলার লোভ সামলানোর ক্ষমতাটা।

একজন ভালো মানুষ পাশে ছিলেন বলে আমার ডানায় একটা বাড়তি পালক যোগ হয়েছিল এটাও সত্যি। কিন্তু সেই পালক না থাকলেও আমি ঠিকই উড়তাম। কারন, উড়াটাই আমার গন্তব্য ছিলো, এখনো আছে। কার সাধ্য আছে আমার ডানা গুটায়? কার সাধ্য আছে আমাকে বাঁচায়? আমি কবে মরেছিলাম? আগুন লাগা এই পৃথিবীতে পথ খুঁজে নিতে পথে নেমেছি আমি। কার সাধ্য আমাকে পথ রুদ্ধ করে?

দিন শেষে দীর্ঘ এই লড়াইটা জারি রাখতে পেরেছি বলেই আজকে আমার জীবনটা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি। ক্লান্ত হয়েছি, বিধস্ত হয়েছি, একা হয়েছি, ভেঙে গেছি, রক্তাক্ত হয়েছি, কিন্তু ঠিক উঠে দাঁড়িয়েছি। গন্তব্যে ভুল করিনি, হাল ছাড়িনি। সুতরাং আমি আমাকেই সবার আগে ধন্যবাদ জানাই।

এ পর্যন্ত যতোজন সফল নারীর বিজয়ের কথা বলা হয়েছে তাদের প্রায় সবাইকেই আমি শুনেছি তাদের সাফল্যের জন্য স্বামী, শাশুড়ি কিংবা পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে। সে হতেই পারেন। কিন্তু নিজের প্রতি? নিজেকে কখনো এপ্রিশিয়েট করেছেন এই অপরিসীম ক্ষমতাধর নারীরা? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।

লেখক: কলামিস্ট ও প্রধান নির্বাহী, সংযোগ বাংলাদেশ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত