বিউটিফুল বাংলাদেশে একজন অবাঞ্ছিত বিউটি

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০১৮, ২১:১৪

অন্ধকার যুগে কন্যা সন্তান হলে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়া হতো। ভারতীয় উপমহাদেশে সতীদাহ প্রথা ছিলো, এখনো পরিবারের সম্মানের জন্য করা হয় অনার কিলিং। যখন পর্যটন কর্পোরেশন বাংলাদেশ এর ব্র্যান্ডিং এর জন্য বেছে নিয়েছে 'Beautiful Bangladesh' শ্লোগান, তখন হবিগঞ্জের হাওরের এক নিভৃত পল্লীতে সবুজ জমিনে রক্তলাল বিউটির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ আমাদের লজ্জিত করেছে।

আমরা আরো লজ্জিত হয়েছি, যখন জানতে পেরেছি এই কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েও বিচার পায় নি। বিচার না পাওয়ার এই দেশে বিউটির বাবা ছায়েদ আলী ভেবেছেন এই সুযোগে বাড়তি কিছু পেলে মন্দ হয় না। 

ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য কলমচান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া বিউটিকে বিয়ের কথা বলে অপহরণ করে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে এই অভিযোগে মামলা চলমান। বিউটি আদালতে বলেছিলো, বিয়ে করলে মামলা প্রত্যাহার করা হবে, কিন্তু বাবুল বিয়ে করতে রাজি হয়নি। বাবুলের মায়ের কাছে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর স্বামী ময়না মিয়া বিউটির বাবাকে প্রস্তাব দেন বাবুল ও তার মাকে ফাঁসিয়ে শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রয়োজন একটি লাশ! আর সেই লাশ হলো দেশব্যাপী আলোচিত বিউটি।

উল্লেখিত সকল তথ্য আমরা জানতে পেরেছি পুলিশের বরাত দিয়ে। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বাবুল, ছায়েদ, ময়না মিয়া। পুলিশ বলছে ধর্ষণ করেছে বাবুল, হত্যা করেছে ময়না, বিউটির বাবার সহায়তায়।

বাবার সম্মতিতে বিউটিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর সময় বিউটি কি ভেবেছিলো, গোটা দেশ তাকে এক নামে জানবে? হাওর অঞ্চল এমনিতেই অনগ্রসর, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এমন কি প্রযুক্তি পরিসেবা এখানে অপ্রতুল। বাবুলের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু এমন একটি জনপদে এই বর্বর পরিকল্পনায় লজ্জিত পিতৃকুল।

অনেকেই মজা করে বলেন রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স ঢুকে গেছে! ভিলেজ পলিটিক্স নিয়ে নানান মতবাদ রয়েছে, যার সিংহভাগ নেতিবাচক। যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কেন্দ্রিক শক্তির প্রদর্শন হয়, এখানে বরাবরই অনুপস্থিত থাকে নীতি।

নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে এটা জামিন অযোগ্য অপরাধ। আর তাই গ্রাম্য রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল কিংবা শায়েস্তা করার জন্য এটা একটা শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে প্রায় ৯৭% নারী নির্যাতনের মামলায় সাজা হয় না। এই নোংরা সংস্কৃতির নির্মম দৃষ্টান্ত আজ বিউটি। বিউটির পরিণতির দায় তাই বাবুল ও বিউটির বাবা দুজনেরই।

চাইলেই বাবা হওয়া যায়! বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় না কোন লাইসেন্স কিংবা নিবন্ধন। কিন্তু একদিন হয়তো এমন বাবাদের জন্যই একটা মানদণ্ড নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়ে উঠবে। বাবার কাছে কন্যা নিগৃহীত হচ্ছে, খুন হচ্ছে। এইসব ঘটনা আমাদের লজ্জিত করে, কন্যার কাছে বাবারা অনিরাপদ, এটা ভাবা যায়? বাবা হওয়ার নৈতিক যোগ্যতাটা তাই জরুরি।

Beautiful Bangladesh এর অকাল প্রয়াত বিউটি ফুল হয়ে ফুটতে পারেনি, এই লজ্জা আমাদের সবার। 

লেখক: উন্নয়ন কর্মী

0Shares
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত