যৌন নিপীড়ন কি পুরুষের অধিকার?
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০১৮, ১৪:৪৪
এইটা শুধু গাজী রাকায়েতের দোষ না আমি অধিকাংশ পুরুষের ক্ষেত্রেই দেখছি এই সমস্যা। তাদের কি আয়োডিনযুক্ত লবণের অভাব হয় ছোটবেলা থেকে? তারা সম্পর্কের মাত্রাজ্ঞান বোঝে না কেন?
আমি যদি আপনার সাথে প্রেম করি আমাদের যৌন সম্পর্ক নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করে ঠিক করবো।
কিংবা ধরেন আমরা প্রেম করি না কিন্তু ইনবক্সে কথা বলি। বন্ধুত্ব ধরনের কথাবার্তা। তো সেই কথাবার্তার মধ্যে অনেক টাইপের আলোচনা আসতে পারে। যৌনতাও আসতে পারে। তো এ ধরনের আলোচনায় কোন জায়গায় আমি অফেনডেড হচ্ছি অথবা কোন জায়গায় আপনি (পুরুষ) অফেনডেড হচ্ছেন সেইটা আমরা নিজেরা বুঝবো না? এবং বুঝে থেমে যাবো না?
আইনটা একটু চলেন পড়ে আসি। যৌন হয়রানী আর মিউচুয়াল রিলেশনশিপ কারে বলে সে সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা কম। এইগুলা একটু গুগল করলেই পাওয়া যায়। দুই মিনিটের মামলা। কিন্তু আমাদের পুরুষতন্ত্র সেটিংস এর আপাদের ভাইয়াদের অত সময় নাই। তারা জাতির বিবেক হইবেন কিন্তু কোনটা যৌন হয়রানী আর কোনটা না সেইটা বুঝার টাইম দিতে রাজী না। তারচে নারীবাদীদের ট্রল আর গালাগালি, নারীবাদীরা যে একটা আলাদা কুচুটে জাত সেইটা প্রমাণ করা অনেক আরামের এবং লাইক পাওয়া সোজা। যৌন হয়রানী কারে বলে তার সুস্পষ্ট সঙ্গা দেখেন।
ক) অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন আবেদনমূলক আচরণ (সরাসরি অথবা ইঙ্গিতে) যেমন: শারীরিক স্পর্শ বা এ ধরণের প্রচেষ্টা।
খ) প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা।
গ) যৌন হয়রানি বা নিপীড়নমূলক কথা বলা।
ঘ) যৌন সুযোগ লাভের জন্য অবৈধ আবেদন।
ঙ) পর্ণগ্রাফি দেখানো।
চ) যৌন আবেদনমূলক ভঙ্গী।
ছ) অশালীন ভঙ্গী, যৌন নির্যাতনমূলক ভাষা বা মন্তব্যের মাধ্যমে উত্ত্যক্ত করা, কাউকে অনুসারন করা বা পিছন পিছন যাওয়া, যৌন ইঙ্গিতমূলক ভাষা ব্যবহার করে ঠাট্টা বা উপহাস করা। আরও চার-পাঁচটা আছে। এ কয়টা নিয়েই আপাতত আলোচনা চলতে পারে।
আমাদের দেশের পুরুষরা কোনমতেই নারীদের পূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখতে রাজী না। বুকটান করে, মুখের উপরে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখতে রাজী না। কাছের মিষ্টি মিষ্টি বন্ধু, প্রিয়তমা স্ত্রী, ছোট বোন বা আত্নীয়া হিসেবে ঠিক আছে। এর বেশি না। এর বাইরে কোন মেয়ে হাতকাটা জামা পরলে, তার ক্লিভেজ দেখা গেলে, সে সিগারেট/মদ খেলে, সে মিডিয়া বা অন্য কোথাও কাজ করলে, সে স্ল্যাং বললে, সে বন্ধুত্ব আর প্রেমের সম্পর্কে গড়ালে -সেই মেয়ে সুলভ অথবা সে আসলে পুরুষদের আকর্ষিত করতে এইসব করে থাকে বলে মনে করা হয়। তার সাথে যৌন আবেদনমূলক কথাবার্তা বলা যায়। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসতেছি নীপিড়নের প্রতিবাদ করলে উল্টো দিক থেকে কিধরনের ভাষা আসে।
১. কি বলছি আপনারে? আপনি এমন কি সুন্দরী হইছেন যে মনে করতেছেন আপনারে কিছু বলছি?
২. (তিন চারজন পুরুষ একসাথে থাকলে) আমরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলতেছি, আপনারে বলছি কে বলল?
৩. আমার চোখ আছে আমি তাকাইছি, এখন কি চোখ বন্ধ করে রাখবো?
৪. মহিলা মানুষ এতো উঁচু গলায় কথা বলেন কেন?
এখন নতুন কিছু ছবক আসতেছে-
১. ভালো না লাগলে ব্লক করেন
২. আগ্রহ না থাকলে যৌন আলোচনায় সাড়া দেবেন না
৩. দুজনের ব্যাক্তিগত আলোচনা প্রকাশ করবেন না (মিউচুয়াল রিলেশন না হলেও) এখন এই দুই ছবকরে একটু মিলায়া দেখেন তো সাদৃশ্য পান কি না।
আর আমাদের পুরুষদের গোষ্ঠী প্রিয়তা আমারে বিমোহিত করে। কোন পুরুষ নিপীড়ন করলে অন্য পুরুষরা তো বটেই নারীরাও তার পাশে দাঁড়ায়ে যায়। এর আগে ফারিয়ার সময়ে দেখেছি, গাজী রাকায়েতের সময়ও দেখছি নারী শিল্পীরা ভীষণই ক্ষুব্ধ। তাদের এতোদিনের সম্মানিত, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বের সম্মান এভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ায় তারা ব্যাথিত, রাগান্বিত। আমাদের তারিন ফারিন অথবা লাক্স সুন্দরীদের এর বাইরে ভাবার ক্ষমতাই নাই, আমরা একটা কংকনা রৌনাত পাইনা, হলিউডের উজ্জ্বল মুখগুলো তো দুরস্তান। প্রতিবাদ করতে না পারেন অন্তত: চুপ তো থাকতে পারেন। নীরবতাও তো প্রতিবাদ। অথচ আপনাদের দেখতেছি গাজী রাকায়েত এর পুসি দেখতে চাওয়ার সাহায্যকারীরূপে। এতোটা ব্যাকবোনলেস আর আত্নসম্মানজ্ঞানহীন হয়ে কি করে নাট্যচর্চা করতে আসেন? আপনাদের মেকাপ চর্চিত মুখ দেখলে আমার এখন বিবমিষা হয়।
তনু হত্যার দুই বছর আজ। রাষ্ট্র এই হত্যার বিচার করেনি। রাষ্ট্রের ভাসুরপক্ষ ধর্ষণ করে মেরেছিল মেয়েটারে। শুধু রাষ্ট্র রাষ্ট্র বলি, সমাজের অলিতে-গলিতে এতো এতো অন্ধকার, ভাবতাম যে সংস্কৃতির চর্চা বোধহয় সেইসব অন্ধকার কাটাতে সাহায্য করবে। কিন্তু আমাদের লেখক, কবি, গায়ক, নায়ক, নেতা, শিল্পী সকলেই পুরুষ অথবা পুরুষতন্ত্রের গর্বিত প্রতিনিধি, আমাদের কোন মানুষ নাই আর।
লেখক: সাংবাদিক