প্রার্থনাস্থলেও নারী নিরাপদ নয়?
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২৩:৩২
পাকিস্তানের মেয়ে সাবিকা খান কাবা ঘরের চারপাশে তাওয়াফ করার সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। সে কথা সে জানিয়েছে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। এমনকি এই আমারও, যে কিনা জানি এবং বিশ্বাস করি যে, পৃথিবীর কোন স্থানই নারীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, সেই আমারও মানতে একটু খারাপ লাগলো।
কেউ মানুক আর না মানুক, যে মানুষটি ওই কাবার সামনে দাঁড়িয়েছে, সে তো তার সৃষ্টিকর্তার কাছে নতজানু হতেই গিয়েছে। সকল পাপ ইচ্ছা ত্যাগ করতেই গিয়েছে। তবুও কুকাজ করার লোভ সে সামলাতে পারবে না কেন? এ এক অপার বিস্ময়!
কোন প্রার্থনার জায়গায়, সে যে ধর্মেরই হোক না কেন, মানুষের মন তো এমনিতেই নির্মল হয়ে ওঠার কথা। অন্ততঃ সেই সময়টুকুর জন্য। সমবেত প্রার্থনার সময় সবাই একটা অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে তার কাছে নিজেকে সমর্পন করে, এরকম একটা পরিবেশে ঠিক অপরাধ করার কথা কারো মাথায় কেমন করে আসে? এমনকি সমবেতভাবে মানুষ যখন সঙ্গীত সাধনা করে, তখনও কি মনটা এক নির্মল অনুভূতিতে ভরে ওঠে না? আমার তো ওঠে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো মেয়েটার সাহস, যেটাকে সাধুবাদ জানাতেই হবে। খোদ পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী ভরা দেশে বসে মক্কার মতো জায়গায় হওয়া এই যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জানানো সহজ নয়। অনেকেই দুঃখ প্রকাশ করছে, আবার অনেকেই বলার চেষ্টা করছে মেয়েটি হয় কাদিয়ানী, নয় শিয়া নয় ইহুদীদের এজেন্ট!
অপরাধকে ঢেকে রাখলে অপরাধ সারে না। বরং কোনপ্রকার বাধা না পেয়ে ফুলে ফেঁপে ওঠে। তাই, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সকল দ্বিধা ও ভয়কে জয় করে নিপীড়নের কথা প্রকাশ করা। আপনি যদি আপনার প্রার্থনার স্থানটিকে ভালোবাসেন, তবে তার সকল ক্ষত দূর করা আপনারই দায়িত্ব। এবং তার প্রথম ধাপই হচ্ছে, ক্ষতকে চিহ্নিত করা ও প্রকাশ করা। একজনের সাহস দেখে অন্য ভুক্তভোগীরাও তখন মুখ খোলার সাহস পায়। যেমন সাবিকা খানের দেখাদেখি আরো অনেক মেয়েরা হজের সময় তাদের অভিজ্ঞতা বলতে সাহস পাচ্ছে। এবং আরো বিস্ময়ের সাথে মানুষ জানতে পারছে, সাবিকাই প্রথম নয়, আরো অনেকেই এই হ্যারেসমেন্টের শিকার হয়েছে। মুখ খুলছে ছেলেরাও।
খবরটা আমি প্রথমে ঠিক বিশ্বাস করতে চাইনি। আমারই সীমাবদ্ধতা সেটা। ভেবেছি কোন পত্রিকার চালবাজি, মুখরোচক গল্প বলে কাটতি বাড়ানোর ধান্দা। তাই সাবিকা খানের প্রোফাইল খুঁজে নিজের চোখে দেখে এলাম স্ট্যাটাসটা। আপনারাও ঘুরে আসতে পারেন।
আল্লাহ বলেন বা ভগবান বলেন বা ঈশ্বর, যে নামেই ডাকেন না কেন, সে কোন মসজিদে বা মন্দিরে থাকে না। নিজের মনের ভেতর ঈশ্বরকে/ঈশ্বরবোধকে স্থাপন করতে না পারলে, এসব লোক দেখানো আচার যে কোন কাজে আসে না, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।
লেখক: তরুণ কবি ও সাহিত্যিক