বেকারদের পকেট কাটা বন্ধ করা উচিত
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ০০:৩৩
গত শুক্রবারে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হল। প্রায় প্রতি শুক্রবারই এ রকম পরীক্ষা হয়। বাংলাদেশে বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে না কমেছে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু সপ্তাহান্তে সকাল বিকাল দুইবেলা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক ঘণ্টার এই পরীক্ষা নিতে সপ্তাহে একটি মাত্র ছুটির পারিবারিক দিনটিকে বাদ দিয়ে আমরাও দায়িত্ব পালন করতে আসি। সেটা হল বেকার ছেলে মেয়েদের চাকরির প্রতিযোগিতার জন্য অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রত্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করা। এটা আমরা নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই চেষ্টা কতটা সঠিক ভাবে পালন করতে পারি? আসলে কি পারি? আমার পারা না পারা বড় কথা না। আমরা একটা চাকরি করছি তার উপর শুক্রবার দিন ছুটির দিনেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি সেটা কম বড় বিষয় নয়, ( যারা কাজ করার সুযোগ পায় তারা কাজের উপর কাজ পায়। আর যারা পায় না তারা কাজের জন্য কত চেষ্টা করে তবু কাজ পায় না।) তাই শুক্রবার পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্ব পেলেই ছুটে আসি। কাজ করার সুযোগ আছে যখন করি। আবার সংসারে কিছু টাকাও আসে যা সৎ উপায়ে উপার্জন বলে মনে হয়। তবু কোথায় যেন বাঁধে। টাকা পয়সা হাতে আসলে সেটা কোন উৎস থেকে আসে সেটা জানা আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
কিন্তু পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে যখন শুক্রবার দিন রাস্তা ঘাটে প্রচুর জ্যাম সৃষ্টি করে গাড়ি ঘোড়া বন্ধ হয়ে যায় তখন মনে হয় বাংলাদেশের এ বেকাররা দলে দলে কোথা থেকে আসে? এদেরকে চাকরি বাকরি দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? চাকরির বাজারের অবস্থা কী? এত কর্মসংস্থান হবে কোথা থেকে? এত বেকার ছেলে মেয়েদের কী অবস্থা?
লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে। এখনও তাদের চাকরি হয়নি। অথচ পরীক্ষা দেবার জন্য প্রতি প্রার্থীকে প্রায় হাজার হাজার টাকা খরচ করে ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হচ্ছে। সেই ব্যাংক ড্রাফটের টাকা থেকে শুক্রবার দিন আমিও কিছু টাকা নিয়ে হাসি মুখে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে হাসতে হাসতে বাসায় ফিরছি। একবারও কি ভেবেছি এই টাকাটা কত যুবক কত যুবতীর বুকের হতাশার থেকে বেরিয়ে আসা নিঃশ্বাস!
আমার মনে হয় চাকরি হবার আগে বেকার যুবক যুবতীর কাছে থেকে চাকরি দেবার নামে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা এভাবে আদায় করা নিতান্তই অমানবিক। এই টাকা খরচ করার দায়িত্ব হওয়া উচিত ঐ প্রতিষ্ঠানের যাদের লোক দরকার। অথবা দেশের মানুষের কল্যাণে আর কোনো উপায় বের করা যাতে বেকারদের পকেট কাটার মত প্রক্রিয়াটা বন্ধ করা যায়। বেকারদের জন্য আলাদা একটা চিন্তা করা যায়, যারা বেকার তাদের কল্যাণের জন্য একটা ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই ফান্ডের টাকা আসবে বেকার কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে। এরা একবার একটা বড় পরীক্ষা দিবে। এরপর ঐ নম্বর থেকেই পর্যায়ক্রমে একটা প্যানেলের মাধ্যমে তাদের চাকরি হবে। আর যাদের চাকরি হবে না তারা একটা বেকার ভাতা পাবে।
দেশের মানুষ এতভাবে কর দেয় সেই টাকা দিয়ে সরকারি তেল পুড়েই তো কত টাকা ব্যয় হয়। কয়টা বেকার ভাতা দিলে সরকারেরও বেশ ভালো লাগার কথা। সেটাও জনগণের স্বার্থে একটা পদক্ষেপ নেওয়া মাত্র। তাহলে যুব সমাজের বিপথে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা