আসুন এনসাফ এর লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াই

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০১৮, ২১:০৯

এনসাফ হায়দার

বছর শুরু করা যাক একজন অসামান্য নারীর কথা দিয়ে। এনসাফ হায়দার। সৌদি ব্লগার রইফ বদওয়াইয়ের স্ত্রী। ৪১ বছর বয়স্ক এই নারীর জন্ম সৌদিতে। ২০০১ সালে রইফের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এনসাফ। রইফ বরাবরই মুক্তচিন্তার মানুষ, এনসাফও তাই। কাজেই এনাদের জুটি এই দিক দিয়ে ধরলে রাজযোটক। কিন্তু দেশটা যেহেতু সৌদি, এনাদের বাধা পেতে হয় পদে পদে। রইফ নিজের ব্লগে যতদূর সম্ভব ঢেকেঢুকে লেখেন ধর্মের জবরদস্তি আর অত্যাচারের কথা। লেখেন ধর্মের নামে পুলিশি অত্যাচারের কথা। কিন্তু তা সত্ত্বেও চোখ এড়ায় না সৌদি রাজতন্ত্র কাম ইসলামিক ধর্মগুরুদের। ২০০৮ এ রইফকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে। ছেড়েও দেওয়া হয় যদিও।

কিন্তু মুক্তচিন্তার মানুষদের সমস্যা হল তারা মুখ বন্ধ রাখতে পারেন না, পারেন নি কোনকালেই। কাজেই রইফের লেখালিখি চলতে থাকে একইরকমভাবে। ২০১২ তে রইফের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন সৌদির এক বিখ্যাত ধর্মগুরু। ১৭ই জুন রইফকে ইসলাম ত্যাগের অপরাধে গ্রেফতার করা হয়। সৌদিতে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিবাহবন্ধন আপনা আপনি ছিন্ন হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে নিজের বিয়ে বাঁচানোর তাগিদে তিন সন্তানকে নিয়ে দেশ ছাড়েন এনসাফ। প্রথমে যান লেবানন। সেখান থেকে সুদূর কানাডা। এনসাফের নিজের পরিবার সৌদি কোর্টের কাছে আবেদন করেন তাদের বিচ্ছেদের জন্যে। সেসব এড়িয়ে এনসাফ কানাডা পৌঁছান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব নেন। নাগরিকত্বের কাগজপত্রে নিজেকে বিবাহিত বলে ঘোষণা করায় তাদের বিয়ে ভেঙে দেওয়া বাঁচানো যায়। কারণ সেক্ষেত্রে সৌদির বিবাহবিচ্ছেদ কানাডার নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য হবে না।

এবার শুরু হয় এনসাফের দ্বিতীয় লড়াই। রইফকে মুক্ত করার লড়াই। ততদিনে রইফের বিচারে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচশ চাবুক মারার সাজা হয়েছে। এনসাফ লড়াই শুরু করেন রইফের মুক্তির। এই লড়াইতে তিনি পাশে পান আমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে। তাদের সাহায্যে তিনি শুরু করেন বিশ্বব্যাপী প্রচার। রইফকে নাম দেওয়া হয় 'প্রিজনার অফ কন্সাইন্স'। সমস্ত পশ্চিম দেশ ঘুরে এনসাফ প্রচার চালাতে থাকেন রইফের মুক্তির জন্য। অচেনা ভাষা, অচেনা দেশ এবং মানুষ, কোন কিছুই তাকে দমাতে পারে নি। একের পর এক বই লেখেন তিনি। স্বামীর যে কটি লেখা উদ্ধার করতে পারেন, তাই দিয়ে প্রকাশ করেন রইফের একটি বইও। ২০১৫ এর ৯ই জানুয়ারি রইফকে তার প্রথম পঞ্চাশ চাবুক মারা হয় প্রকাশ্যে। এনসাফ এবং আমনেস্টি মিলে সেদিন বিশ্ব জুড়ে সৌদি অ্যাম্বাসির সামনে ধরণা এবং প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করেন। এই আন্তর্জাতিক কর্মসূচীর জোরে সৌদি সরকার এর পর আর কখনো রইফকে চাবুক মারার সাহস দেখায় নি। সেই প্রথম, সেই শেষ। কোন কারণ ছাড়াই তার চাবুকপ্রহার অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করা হয়।

এনসাফ আজও লড়ছেন। তিন সন্তানকে নিয়ে তিনি অপেক্ষায় আছেন কবে রইফের মুক্তি হবে। এ বারও নতুন বছরে তিনি টুইট করেছেন "শুভ নববর্ষ নয়, আমায় উইশ করুন ফ্রি রইফ। সেটাই হবে আমার জন্যে সেরা উইশ।"

আসুন আমরাও দুনিয়ার সব মুক্তচিন্তকদের তরফ থেকে বলি, রইফের মুক্তি হোক। মুক্তচিন্তার জয় হোক। এনসাফের জয় হোক।

লেখক: প্রকৌশলী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে jagoroniya.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরণের দায় গ্রহণ করে না।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত