ভাইসাহেব, দিন বদলায় গেছে
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০১৭, ২২:২৫
এই দেশে কিছু ছেলে আছে যারা নিজেদের হাবেভাবে নিজেকে পরুষ (পড়ুন পুরুষ) তৈরী করে। তো তারা নিজেদের বিরাট হ্যাডম মনে করেন। তাদের বিরাট ঘর আছে, ঘর ভর্তি আসবাবপত্র আছে, গাড়ি আছে। চাকরী বাকরি করেন তাই পকেটে টাকাও আছে। টাকায় হ্যাভি গরমও আছে। কিন্তু তাদের বিরাট অসুবিধা হল নিজেদের বিরাট মানুষ ভাবতে গিয়ে আশেপাশের মানুষদেরকে গোনায় ধরেন না। কিন্তু আশেপাশের মানুষজনকে গোনায় না ধরলে, সেটা নিয়া জনসম্মুখে কিংবা ব্যক্তিগত আক্রমনে গেলে তো বিপদ ভাইসাহেব!
ভাইসাহেব আপনার প্রধান রোগ আমি বুঝতে পারছি। রোগটা হইল আপনে মেয়ে মানুষ দেখতে পারেন না। মেয়ে মানুষ একটু শিক্ষিত কিংবা আত্মনির্ভরশীল হইলে আপনার রোগটা একটু বাড়িয়া যায় বলে আমার বিশ্বাস এবং আমি নিশ্চিত ইহা আপনার পরিবারগত রোগ।
এখন ভাইসাহেব আপনারে যদি প্রশ্ন করি ভাইসাহেব আপনে তো একজন মেয়ের পেট থেকে বাইর হইছেন তাইলে আপনার মেয়ে মানুষ দেখতে না পারার কারণ কি? তখন আপনে কইবেন ধুর পাগলের মত কথা কইবেন না। অর্থ্যাৎ মেয়ে মানুষ যৌক্তিক কথা কইলে আপনে আবার তারে পাগল বানায় দেন। মহা জ্বালা তো!
এখন একজন মেয়ে কেউ শিক্ষক, কেউ সিনেমা বানায়, কেউ সাংবাদিক, কেউ লেখক, কেউ ব্যাংকার এরকম সকল পেশায় আজকাল মেয়েরা কাজ করে। হ্যাঁ এসব পেশায় মেয়ের চেহারা দেখে কেউ কাজ দেয় না কাজ দেয় মেয়েটার যোগ্যতা দেখে, তার মেধা দেখে। এখন মনে করেন এসকল মেয়েদের মধ্যে অনেকেরই মানবিক গুণ রয়েছে। সেসকল মেয়েরা সমাজে কোথাও অন্যায় হলে সাধ্যমত রুখে দাঁড়ায়। আবার কেউ কেউ বৃক্ষপ্রেমী, কেউ কেউ পশুপাখি প্রেমী। ভালোবেসে পথেঘাটে কিংবা ঘরেই পশুপাখি পোষে, ঘর ভর্তি করে গাছ গাছালি দিয়ে। এখন আপনি কইবেন ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানোর কি দরকার? ভাইসাহেব আজকাল বহুত মেয়ে আছে যারা ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায় কিন্তু আপনি কিংবা আপনার বাপ-মার টাকায় খায় না এটা কিন্তু সত্য।
ভাইসাহেব আপনে চান, মেয়েরা পুতুল সাইজা, ঘরে রান্নাবাড়া করুক, ঘর সাজাক, সাজুগুজু কইরা আপনার মনোরঞ্জন করুক। কিন্তু এখন তো দিন বদলাইছে, আধুনিক যুগ চলে ভাইসাহেব, আপনার কথা শোনার মতন মেয়ে তো আজকাল পাবেন না! আজকালকার মেয়েরা তো এতটুকু কাজের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে না ভাইসাহেব। আজকালকার মেয়েরা লেখাপড়া শেখে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য। আজকাল মেয়েরা এতটাই সচেতন যে আপনে একখান ঢিল মাইরা হাঁটা দিতে পারবেন না বিনিময়ে একখান পাটকেল আপনাকে খাইতে হবে।
শোনেন আপনার মত মানুষরাই মেয়েদের বন্দী করতে চায়, আপনার মত মানুষরা পথে ঘাটে মেয়েদের উত্যক্ত করে, আপনার মত মানুষরাই মেয়েদের দেখলে নিজেদের সামলে রাখতে পারেন না হামলায় পড়েন। আপনার কাছে একজন মেয়ে হইলেই হয় তার বয়স আপনার কাছে কোন ব্যাপার না। একজন মেয়ের ইচ্ছাও কোন ব্যাপার না শুধু নিজের ইচ্ছাই মুখ্য। আপনার যৌন আকাঙ্খা থেকে পশুও ছাড় পায় না! আপনার মত মানুষরাই পথে ঘাটে মেয়েদের কাপড় কেটে দেন। যদিও এটা আপনাদের নতুন আবিষ্কার মেয়েদের বন্দী করার, কিন্তু লক্ষ্য এক।
শুনে রাখেন এসব কইরা মেয়েদের দমায় রাখতে পারবেন না, দিন বদলায় গেছে।
আপনারা মেয়েদের কাপড় কেটে দেবেন ঠিক কিন্তু দেখবেন অচিরেই মেয়েরাও ঘুইরা আপনার কাপড় কেটে দেবে কারণ ব্লেড শুধু আপনার কাছে থাকবে তা কেমনে হয়? ব্লেড মেয়েদের কাছেও থাকবে।
পরিশেষে বলি ভাইসাহেবগণ ভদ্র হয়ে যান। ভদ্র হতে বিশেষ কিছু লাগে না শুধুমাত্র নিজের চিন্তাধারা বদলানো দরকার। নিজেও ভাল থাকবেন সাথে সাথে এ সমাজ, দেশ, দেশের মানুষও ভাল থাকবে।
ধন্যবাদ।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী