আমাদের যেন পালাতে না হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ০০:৪১
আমি এই দেশটাকে বড়ো ভালোবাসি। উন্নত দেশে ভালো চাকরির সুযোগ কখনো নেইনি এই দেশ আর আমার আম্মাকে ছেড়ে যেতে হবে বলে। ২০১১ তে স্বপ্নের প্যারিস শহরে লোভনীয় চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বলেছিলাম, "স্বর্গেও যাবো না আমি এ দেশ ছেড়ে"।
রূপা মেয়েটাও নিশ্চয়ই এই দেশ ছেড়ে যেতে চায়নি। তনু, রিশা, মহিমা, ইয়াসমিন, আফরোজা, পূজা, মহিমা, সিমী, সুমাইয়া আরো সব মেয়েরা, এরা সবাই এই দেশটাতেই থাকতে চেয়েছিলো। এসাইলাম চায়নি, পালাতে চায়নি। এই দেশে থেকেই কোনরকমে বেঁচে বর্তে কিছু একটা করতে চেয়েছিলো। সবাইকে নিয়ে একটা মধ্যবিত্তের সাধারন জীবন কাটাতে চেয়েছিলো। পারেনি। রাতে ঘরে ফিরতে চেয়েছিলো, যে ঘরে পরিবার আছে। ফিরতে পারেনি।
আমার মেয়েটাও এই কদিন পর পাবলিক রুটে যাতায়াত করবে, করতে হবে। ও বাড়ি ফিরবে, যেখানে আমি, আমরা অপেক্ষায় থাকবো। ও কি ফিরতে পারবে নিরাপদে আমার কাছে এই উদ্ধত উলঙ্গ পৌরুষের নগরে? আমাদের কন্যারা কি ঘাড় মটকে মরে থাকবে পুরুষের বিকৃত যৌনতার বলি হয়ে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! এই দেশে আপনার ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছা। আপনি চাইলেই এই দেশে প্রতিটি মেয়ের চলার রাস্তা নিরাপদ হবে, বিচারহীনতার সুযোগে কোন ধর্ষক আর একটি মেয়েকেও আতঙ্কিত করতে পারবে না। একটি মেয়েও ধর্ষণের ভয়ে গুটিয়ে থাকবে না।
আপনি চাইলে এদেশের প্রতিটি মেয়ে বেনী দুলিয়ে হলুদ শর্ষে ফুলের সাথে দোল খেতে খেতে বই কোলে নির্ভয়ে স্কুলে যাবে। আপনি চাইলে এদেশের প্রতিটি মেয়ে নির্ভয়ে দিন রাতের ভয় উড়িয়ে দিয়ে মাঠে ঘাটে পথে বাসে ট্রেনে লঞ্চে কারখানা হাসপাতাল কর্মক্ষেত্র দাপিয়ে কাজ করবে।
তাই নির্যাতনকারী পুরুষ, ধর্ষকদের কঠোর হাতে দমন করুন। অন্তত ধর্ষণের বিচার দ্রুত ট্রাইব্যুনাল এ করে দৃষ্টান্ত তৈরী করুন। আইনের ফাঁক ফোকর আর জটিলতা দীর্ঘসূত্রীতাগুলো বন্ধ করুন। এমন ব্যবস্থা করুন যেন প্রতিটা ধর্ষকামী পুরুষের কোন মেয়ের দিকে চোখ তোলার আগে অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে ভয়ে।
পুরুষতান্ত্রিক একটি দেশের সরকারপ্রধান হয়ে যদি না ও পারেন, একজন মা হয়েই না হয় আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তাটুকু আপনি নিশ্চিত করুন! আমাদের কন্যাদের নিয়ে আমাদের যেনো এই ধর্ষকামী সমাজ থেকে পালাতে না হয়। আপনিই পারবেন প্রিয় নেতা। যদি তা না পারেন তাহলে এ দেশ ধর্ষকের অভয়ারণ্য হবে। সেদিন দেখবেন আপনি ছাড়া আর কোন মেয়ে, আর কোন মা এ দেশে নেই।
লেখক: কলামিস্ট ও প্রধান নির্বাহী, সংযোগ বাংলাদেশ