আজকালকার ছেলে-মেয়েরা খুব খারাপ!
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৭, ২০:০৯
আজকালকার ছেলে-মেয়েরা খুব খারাপ। তারা এতটাই খারাপ যে তাদের দিয়ে ভাল কিছু আশাই করা যায় না! কেমন খারাপ?
আজকালকার ছেলে-মেয়েরা নেশা করে, বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ডের সাথে অবাধ মেলামেশা করে, তারা অনেক কিছু চায় যেগুলো নাকি বাবা-মার জন্য সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যায়। এইতো বলবেন তাই না?
কিন্তু কেন?
এই কেন'র উত্তর জানতে চাইলেই বলবেন পারিপার্শ্বিকতা খারাপ, বন্ধু-বান্ধব খারাপ। এবং তারপর আমতা আমতা করবেন, সদুত্তর দিতে পারবেন না। একেকজনের মুখে ঠুলি পড়বে তাই না?
মা -বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সন্তানের দোষ দেবার আগে, প্রথমে ভেবে দেখুন আপনি কি তাকে সাদা আর কালোর পার্থক্য শিখিয়েছেন?
আরও দু'টো কথা ভেবে দেখুন -
১) আপনি আপনার সন্তানকে অনেক ভালোবাসেন এবং সেই ভালোবাসা এতটাই অন্ধ যেখানে আপনি আপনার সন্তানের কোন ভুল দেখতে পান না। সে যা চায়, যখন চায়, আপনি তা বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দেন। তার চোখে পড়ার মত আচরণও আপনার চোখে পড়ে না। তার ভুলগুলো আপনার চোখে পড়ে না এবং সেই গতিবিধি কেউ আপনাকে জানালেও আপনি তাকে গালমন্দ করে বলেন আপনার সন্তানের ভাল কেউ চায় না। আপনি সন্তানকে শাসন করতেও খানিক ভয়ই পান!
আপনি পরে থাকেন লোহার চশমা, যেটা ভেদ করার সাধ্য কারো নেই। সন্তানকে ছোট বাচ্চা মনে করেন আপনি কিন্তু সে কি আসলেই ছোট বাচ্চা?
ভেবে দেখুন তো আসলেই কি আপনি তাকে ভালেবাসেন?
২) আপনি আপনার সন্তানকে সুন্দর আকাশ দেয়া তো দূর, একটা জানালাও দেন না! আপনার দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার ভারে চাপা পড়ে তার স্বপ্ন। তার ভালো কিছুর অন্তরায় আপনিই! আপনি কি তাকে নিয়ে চিন্তা করেন একবারও? ভাবেন তার ভবিষ্যত? একবারও কি ভাবেন তার উজ্জ্বল আকাশটাকে এক লহমায় আপনি কালো করে দিচ্ছেন?
ভাবুন তো আপনি কি তাকে ভালোবাসেন?
১নং ও ২নং কথার কমন বিষয় হল আপনি আপনার সন্তানের ব্যপারে উদাসীন। সেই উদাসীনতা আপনার সন্তানের জীবন বিষময় করে দেয়, ঘুনপোকায় ছেয়ে যায় জীবন!
সন্তান নেশা করে, অবাধে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড নিয়ে থাকে তাতে আপনার কোন চিন্তা নেই বরং আপনি সে কথায় মানুষকে বলেন কমবয়স তো, একটু বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে আর আজকাল সবাই একটু নেশাফেশা করে ওগুলো কোন ব্যপার না।
আবার কেউ সন্তানের উপার্জনের টাকা আটকে রেখে তাকে উচ্চতর লেখাপড়া করতে বাধা দেন। এমনভাবেই বাধা দেন, যে তার সুন্দর ভবিষ্যত একেবারে মাটিতে মিশে যায়। আবার অবলীলায় বলে দেন ঘরে বসে থাকো, কোন টাকাপয়সা দিতে পারবো না, তোমার লেখাপড়ার জন্য। বেশি ইচ্ছা থাকলে নিজের খরচ নিজে যোগাড় করো।
তারা একবারও ভেবেছেন এসব কথার প্রেক্ষিতে সন্তানের কি করার থাকে? আপনার এইসব কথার জন্যই সন্তান খারাপ কাজ করতে বাধ্য হয়। সে সন্ত্রাসী হয়, এমনকি দেহব্যবসা/ভুল পথে উপার্জনের চেষ্টা করে।
এই যে আজকাল জঙ্গী হচ্ছে কমবয়সী ছেলেরা, তৈরী হচ্ছে গ্যাং। তারা রাতবিরাতে বাড়ির বাইরে থাকছে। কোথায় থাকছে কোন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করছে, সেসবের খবর কি অভিভাবকরা রাখেন? কেন রাখেন না? আপনারা বলবেন সন্তানকে বিশ্বাস করা কি অপরাধ? না সন্তানকে বিশ্বাস করা অপরাধ নয়, অপরাধ অন্ধবিশ্বাস করা। অপরাধ অতিরিক্ত ভালোবাসা, অপরাধ অতিরিক্ত অমানবিকতা।
ভেবে দেখুন তো একজন সন্তান যখন মনে করে, যে সে যা ইচ্ছা তাই করবে কিন্তু তার বাবা-মা কিচ্ছু বলবে না বরং তার ভুলগুলো গোপন করবে, তাকে প্রশ্রয় দেবে তখন সে কতখানি বিগড়ে যেতে পারে! আবার এটাও ভাবুন আপনার অমানবিক আচরণে সন্তান যখন ভাবে এ পৃথিবীতে তার বাবা-মা থেকেও নেই তখন তার কেমন লাগে!
বাবা-মা'দের বলছি আমি যে কথাগুলো বলেছি সেগুলো আমলে নিয়ে সেই জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবুন একবার।
প্রিয় বাবা-মা আপনাদের আন্তরিকতার সাথে বলছি আপনারা সন্তানকে সততার সাথে ভালোবাসুন, সন্তানের বন্ধু হোন। তাদের কথা শুনুন মন দিয়ে। তাদের সমস্যার সমাধান করুন, তাদের সমস্যা, খারাপ, ভুল কাজকে প্রশ্রয় না দিয়ে শক্তহাতে সমাধান করুন। এবং তাদের সাদা আর কালোর পার্থক্য শেখান, শেখান সত্য আর মিথ্যার পার্থক্য। তাদের আলো দেখানোর প্রথম দায়িত্ব কিন্তু আপনাদেরই।
লেখক: সংস্কৃতিকর্মী