আমাদের সমাজে বউরা হলো বিনা পয়সার দাসী
প্রকাশ : ৩১ মে ২০১৭, ১৯:৩২
...আজ জামাই ষষ্ঠী। ঘরে ঘরে জামাইর জন্য মঙ্গল কামনা হবে, জামাইর ভুরি ভোজন হবে, জামাই উপহারে ডুবে যাবে। না, এটা শুধু হিন্দু ধর্মে করে তা নয়। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে জামাইর কদর ঘরে ঘরে। এই পনের বছর পরেও আমার জামাই আমার বাবার বাড়ি গেলে আম্মা জামাইর মেন্যু ঠিক করতে গিয়ে দিশেহারা হন। এই জামাই সমাদর করতে গিয়ে আমাদের নিজের মায়েরাই ভুলে যান মেয়ের কথা। নিজের বাড়িতেই যে মেয়ে সমাদর পায় না, শ্বশুর বাড়ি তাকে সমাদর করবে, পঞ্চ ব্যঞ্জনে পাত পেড়ে খাওয়াবে সে গুড়ে বালি।
পৃথিবীর কোন শাশুড়ি কি কোনদিন তার বৌমার জন্য ভালো মন্দ রেঁধে পাশে দাঁড়িয়ে খাইয়েছে? আমার জানা নেই। সে শাশুড়ি যখন বৌ ছিলেন তখনো তার জন্য কেউ রাঁধেনি। আমার শাশুড়ি আমার জন্য আয়োজন করেন হরেক পদ। কারণ, আমি হলাম কামাইন্যা বউ। বছরে দু'বছরে আমাকে পাওয়া যায়। তাই আমার জন্য অষ্ট ব্যঞ্জন রাঁধতে উদায়াস্ত চুলো ঠেলতে হয় উনার আরেক 'আকাইম্যা' বৌমাকেই।
আমাদের সমাজে বউরা হলো বিনা পয়সার দাসী। দাসীর জন্য আমার আয়োজন উৎসব কি!! সস্তায় মেলে যে দাসী তাকে তো তেল সাবানে কিনে রাখা যায় আমরণ। আর জামাই!! মেয়ের জীবন মরণের মালিক।
আর ক'দিন পরেই ভাইফোঁটা হবে। লক্ষীমন্ত বোনেরা সব দল বেঁধে এসে যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে যাবে। পঞ্চব্যঞ্জনে ভাইএর ভোজন হবে, উপহারে উপহারে জমে যাবে ভাই।
আর বোন!! আহারে আমার চম্পা পারুল বোন!! কে আর কবে তোমার জন্য যমের দুয়ারে কাঁটা ফেলেছে বলো। ভাইয়েরা তো জানেই যে, তোমাকে যমেরও অরুচি। বোনের তত্ত্ব করা, শাসন করা, দেখভাল করা আর নিরাপত্তা দেওয়ার মালিক কেবল আমাদের ভাইয়েরা। তাই বোনদের ভাইকে ফোটা দিয়ে, রেঁধে খাইয়ে খুশি রাখতে হয়। ফুট ফরমাস খাটতে হয়, সম্পত্তির অর্ধেকটা ছেড়ে দিয়ে আসতে হয়।
সেদিন কি কখনো আসবে যেদিন এদেশে বউ জামাইর জন্য একসাথে কোন উৎসব হবে? কোন এক সকালে বউটি ঘুম ভেঙে জানতে পারবে, আজ তার বৌভাত। না, বউ নিজের হাতে রেঁধে সবাইকে খাওয়াবে সে বৌভাত নয়। বউ এর জন্য ভালো মন্দ রেঁধে, আসন পেতে, ধান দুর্বা দিয়ে খাওয়ানো হবে আদরের বউটিকে।
কোনদিন কি ভাই বোনের একসাথে ফোঁটা হবে? ভাই বোন একসাথে উচ্চারণ করবে, যমের দুয়ারে দিলাম কাঁটা/ভাই তোমাকে, বোন তোমাকে দিলাম ফোঁটা!!!
সাদিয়া নাসরিন এর ফেসবুক থেকে