'কি কৈফিয়ত দেবো এ আপোষের?'
প্রকাশ : ২৬ মে ২০১৭, ০২:৫০
সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে ন্যায়বিচার এর প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্য জাস্টিশিয়া। ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই ভাস্কর্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের প্রগতিশীল মহল।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম ফেসবুকে লিখেন, "সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য সরানোর কাজ চলছে। আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছি! এ আপোষের চড়া দাম দিতে হবে জাতিকে। দুঃখ এ ঘটনাটি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দলটির হাত ধরে ঘটলো। কাদের হাতে হাত মেলালেন বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরী! আমাদের উত্তরসূরীদের কাছে কি কৈফিয়ত দেবো এ আপোষের। শুধু ভোটের হিসাবে মাথা বিকালাম! সে শেষরক্ষাও কি হবে? অঙ্গীকার কি পেয়েছেন?
কদিন পরে যখন স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার বায়না ধরবে আজকের সখারা তখন সামলাতে পারবেন তো!"
প্রগতি লেখক সংঘের অভিনু কিবরিয়া ইসলাম লিখেন, "দালালরা একটু পর থেকেই বলবে, ভাস্কর্য ভাঙছে না, সরাচ্ছে। যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সেহেতু ভাস্কর্য সরানো হচ্ছে। যেহেতু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তাই ভাস্কর্য দয়া করে ভেঙে ফেলা হচ্ছে না। দুই নৌকায় পা দিলে কী হয়? ভরাডুবি?
হেফাজতের জন্য সবচে বড় সিম্বলিক বিজয় হলো। সিম্বলিক বিজয় থেকে যে মোটিভেশন তৈরি হবে, তাতে আওয়ামীলীগ ডুববে কি ভাসবে সেটা খুবই গৌণ বিষয়। বিষয় হচ্ছে ডুবন্ত দেশটা আরো একটু গভীরে ডুবলো।"
ব্লগার ফারজানা কবীর খান লিখেন, "ন্যায়বিচার আর আইনের শাসনের হাত-পা বেঁধে দিয়েছিল এ সরকার ক্ষমতায় এসেই। তার প্রমাণ- সাগর-রুনী হত্যাকান্ড, ত্বকী, রমেল চাকমা, তনু আর লেখক ও ব্লগারদের হত্যাকান্ড এবং বিচার না হওয়া। আজ রাতের অন্ধকারে ধর্ষিত সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে ন্যায় বিচারের প্রতীক থেমিস। দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসনকে এত কম সময়ের মধ্যে গলা টিপে হত্যা করা এই বর্তমান সরকারের ওপর একসময় ভরসা রেখে নিজেকে অনেক অসুস্থ প্রমাণ করেছিলাম, কিন্তু আর নিজেকে ইতরের পর্যায়ে নামাতে পারবো না।
ক্ষমা করো প্রিয় দেশ, ক্ষমা করো জন্মভূমি।
তোমার এই পরাজয় দেখতে চাইনি!"
তরুণ লেখক জান্নাতুন নাঈম প্রীতি লিখেন, "জিন্নাহ বলেছিল- আমি এই জাতির জন্মপরিচয় বদলে দেবো! রাতের অন্ধকারে পাক বাহিনী ২৫শে মার্চ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা কি সত্যিই ভাবতে পেরেছিল বাংলাদেশ তাদের হাত থেকে স্বাধীন হয়েও ঠিক ৪৫ বছর পরের কোনো একদিন রাতে নিজের বুক থেকে কোনো এক ন্যায় বিচারের প্রতীক ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলতে এরকম তস্করের মতন আচরণ শুরু করবে? যদি তারা সেটা জানতো তাহলে সম্ভবত কিছুতেই ২৫শে মার্চ রাতে ঝাঁপিয়ে পড়তো না। তারা ঝাঁপিয়ে পড়তো ২০১৭ সালে ২৬শে মে রাতের জন্য!
সাবাশ পাকিস্তান! দেরীতে হলেও তোমরা সম্ভবত বাংলাদেশের ব্লাড লাইন চেঞ্জ করে দিয়েছ! তারা এখন রাতের আঁধারে তোমাদের মতই হিংস্র হয়ে ওঠে!"
উল্লেখ্য, ২৫ মে দিবাগত রাত ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন প্রগতিশীল আন্দোলনের সাথে যুক্ত অনেকেই। এর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী সুহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীকে দেখা যায়। তারা সেখানে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় তাদের কণ্ঠে হেফাজত ও ধর্মান্ধতা বিরোধী স্লোগান শোনা যায়। বর্তমানে তারা সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করছেন।