প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা
প্রকাশ : ১৩ মে ২০১৭, ২০:৩০
আলতু ফালতু বহু বিষয় পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দরকারি অদরকারি বইপত্র দিয়ে সিলেবাস ঠাসা। আমার সিক্সে পড়ুয়া ছেলের বই হল ১৩ টা। এত বেশি পড়া আর সিলেবাস যে আমি নিজেই দিশেহারা হয়ে যাই, বাচ্চার কথা আর নাই বা বলি।
আমরা যে লেখাপড়া করে বড় হলাম তা কি খুব বেশি হালকা ছিল? এখন এত বেশি পড়তে হবে কেন? এত পড়ে কি লাভ হচ্ছে? কার লাভ হচ্ছে? ব্যাগের ওজনে প্রতিদিন বাসায় ফিরে ছেলে বলে, মা কাঁধ ব্যথা করে। কি বলে তাকে সান্ত্বনা দিবো আমি জানি না। আদর করে বলি, পড়তে হবে যে বাবা! আমি জানি, সব মায়েরা আমার সাথে একমত হবেন কম বেশি।
দেশের বাইরে যাবার সময় এই বাচ্চাগুলিকে এত পড়ালেখা করার পরও নানান রকম এক্সামে বসে ভিসা পাবার প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়া লাগে। আমার প্রশ্ন হল, তাহলে কি লাভ হয় এই এত্ত এত্ত লেখাপড়া করে? এই বাচ্চাগুলি পড়ার বই পড়তে গিয়ে হারিয়ে ফেলে বাকি সব স্বকীয়তা।
যাদের বাবা মা একটু সচেতন, সেই বাচ্চারা হয়ত কষ্ট করে অন্য কিছু যেমন গান, নাচ, খেলাধুলার চর্চা করে। বাকিরা পড়ালেখা করতে গিয়ে শৈশব, কৈশোর সব হারিয়ে ফেলে। এবং বলতে বাধ্য হচ্ছি এক একজন বেড়ে উঠছে যন্ত্র মানব হিসেবে। এই প্রজন্মের কাছে মায়া, মমতা, স্নেহ, ভালোবাসা এই শব্দগুলি কেবল বইয়ের ভাষা। ফলে অন্যের কষ্টে কষ্ট পাওয়া কিংবা কারো প্রয়োজনে সাহায্য করা, এগিয়ে যাওয়া, বিপদে পাশে দাঁড়ানো কিছুই এরা ভালভাবে আয়ত্ত করতে পারে না, প্রয়োগ করবে কিভাবে। তাই আজ এত অঘটন বেড়েছে, বেড়েছে অমানুষ এর পরিমাণ। ধর্মের নামে শুধু বেড়েছে ধর্মীয় উম্মাদনা, কমেছে সত্যিকার ধর্ম চর্চা। জানুক বা না জানুক, আজ সবাই জ্ঞানী।
আমি ভাবছি, আজে বাজে কিছু বিষয়াদি পাঠ্যক্রম থেকে কমিয়ে নৈতিক শিক্ষা চালু করা হোক। যাতে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, ধর্মীয় শিক্ষার ঊর্ধ্বে উঠে, সবাইকে মানুষ ভাবার শিক্ষা, সবার বিপদে এগিয়ে আসার শিক্ষা, অন্যায় দেখা মাত্রই প্রতিবাদ করার শিক্ষা। আর থাকবে, অন্যায় যেই করুক শাস্তি নিশ্চিত করার শিক্ষা। কেউ কি বুঝতে পারছে না যে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে। ডুবে যাচ্ছি ক্রমশ, মুক্তির পথ খুঁজে না পেলে ক্রান্তিকাল পার করা যাবে না।
ফেরদৌস কান্তা'র ফেসবুক থেকে